দেশজুড়ে

রসুনের বাম্পার ফলন, দাম নিয়ে বিপাকে কৃষকরা

একই জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির কৃষিপণ্য উৎপাদনের কারণে উত্তরাঞ্চলের শষ্য ভান্ডার খ্যাত চলনবিল অঞ্চলের চাষাবাদ বরাবরই বৈচিত্রময়। বিল অঞ্চলের বৈচিত্রময় কৃষি কাজে নতুন মাত্রা যোগ করেছে বিনাচাষে রসুন উৎপাদন। স্বল্প ব্যয়ে বিনা চাষের রসুন উৎপাদনে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। ফলে প্রতিবছরেই ব্যাপকভাবে বাড়ছে মসলা জাতীয় এই কৃষিপণ্যটির উৎপাদন।

Advertisement

ধান, সরিষা, গম, ভুট্টা ও শীতকালীন সবজি উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ, উল্লাপাড়া, নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর ও পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার সমন্বয়ে গঠিত চলনবিল অঞ্চলে ২০০৯ সাল থেকে শুরু হয়েছে অর্থকরী ও মসলা জাতীয় ফসল রসুনের চাষাবাদ। প্রচলিত নিয়মে নয়, এই অঞ্চলের কৃষকরা বিনা চাষে উৎপাদন করছে রসুন। চলনবিলের ফসলি মাঠ থেকে বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গেই বিনা চাষে কাদামাটিতে লাগানো হয় রসুন।

অগ্রহায়ণ মাসের প্রথমেই সারিবদ্ধভাবে লাগানো এই রসুন প্রথমে ঢেকে দেয়া হয় ধানের খড় দিয়ে। পৌষ মাসে রসুন পাতা গজানোর পর এর সঙ্গে গজানো ঘাস ও রসুন ঢেকে দেয়া খড় পরিষ্কার করে প্রতি বিঘা জমিতে মাত্র দুই মণ সার দেয়ার পর প্রয়োজন অনুযায়ী এক বা দুইবার পানি সেচ দেয়ার মাধ্যমে সম্পন্ন হয় এর উৎপাদন প্রক্রিয়া। এরপর চৈত্র বা বৈশাখ মাসে প্রতি বিঘা জমি থেকে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ মণ উৎপাদিত রসুন সংগ্রহ করে বাজারজাত বা সংরক্ষণ করেন কৃষকরা। এ সময়ে বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকায় কৃষকরা রসুনের মূল্য পান প্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা।

বিল অঞ্চলের দোআঁশ মাটিতে বিনাচাষে স্বল্প ব্যয়ে আবাদ করা অর্থকরী ও মসলা জাতীয় কৃষিপণ্য রসুনের আশানুরুপ ফলনে কাঙ্খিত লাভ পাচ্ছেন কৃষকরা। অন্যান্য ফসল আবাদের চেয়ে বেশি লাভ হওয়ায় এই অঞ্চলের কৃষকরা বিনাচাষে রসুন আবাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে উঠছেন। চলতি মৌসুমে সিরাজগঞ্জের চলনবিল অধ্যুষিত তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলাতে প্রায় ২১৮ হেক্টর জমিতে বিনাচাষে রসুন লাগানো হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ।

Advertisement

এ বছর সিরাজগঞ্জের চলনবিল অঞ্চলে রসুনের বাম্পার ফলন হলেও দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। সাদা সোনা রসুনের আশাতীত ফলনে এবার কৃষকের মুখের হাসিটা একটু বেশিই। ধানের আবাদের চেয়ে রসুন চাষে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা ঝুঁকছেন রসুন আবাদের প্রতি। বিশেষ করে এ অঞ্চলে দিন দিন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে এ চাষ। চলনবিলের এ সময়ের সাদা সোনা হিসেবে পরিচিত রসুনের এবার ভালো ফলন হলেও, বাজার মূল্যটা গত বছরের চেয়ে অনেক কম। এলাকার কৃষাণ-কৃষাণীরা এখন মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন রসুন ঘরে তুলতে।

তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে চলনবিলের তাড়াশ উপজেলায় ৪৪০ হেক্টর জমিতে রসুনের আবাদ হয়েছে। যা গত বছর ছিল ৫৭০ হেক্টর। রসুন উৎপাদন হয়েছে প্রতি বিঘায় গড়ে ৩০ মণ হারে। যার বর্তমান বাজার মূল্যে প্রতি মণ এক হাজার টাকা থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত এবং শুকনো রসুন বিক্রয় হচ্ছে প্রতি মণ ২ হাজার থেকে দুই ৫০০ টাকা পর্যন্ত। তবে এই মূল্যে খুশি না কৃষকরা। তাদের দাবি বাজার মূল্য এমন হলে লোকসানে পড়তে হবে তাদের। গত ২ সপ্তাহ থেকেই রসুন তোলার কাজ শুরু হয়েছে।

তাড়াশ উপজেলার রসুনচাষি আমজাদ হোসেন বলেন, বিনা চাষে রসুনচাষ করেছি, সার বীজসহ প্রতি বিঘায় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তিন থেকে চার হাজার টাকা মণ বিক্রয় করতে পারলে আমরা লাভবান হতে পারব।

তাড়াশের রসুনচাষি হবিবর আলী ও ভাবকী গ্রামের আনিছুর ইসলাম জানান, লাভজনক হওয়ায় কৃষকরা রসুনচাষে ঝুঁকে পড়ছেন। রসুন আবাদ প্রান্তিক চাষিদের পরিবারে সচ্ছলতা এনে দিয়েছে।

Advertisement

তারা আরও জানান, বড় কৃষকদের জমি লিজ নিয়ে তারা রসুন আবাদ করেন। রসুনের আবাদ সবচেয়ে বেশি। তবে ফলন ও বাজার দর কম হলে কৃষককে মাঝেমধ্যে লোকসানও গুণতে হয়।

এ বিষয়ে তাড়াশ উপজেলা কৃষি অফিসার মো. সাইফুল ইসলাম জানান, উপজেলায় এ বছর রসুনের আবাদ হয়েছে ৪৪০ হেক্টর জমিতে। তবে গত বছরের চেয় কম চাষ হয়েছে। বন্যার পনি নামতে একটু দেরি হওয়ায় অনেক কৃষক এবার রসুন চাষ করতে পারেনি। ফলন ভালো হয়েছে, তবে দামটা একটু কম।

ইউসুফ দেওয়ান রাজু/আরএআর/এমএস