দেশজুড়ে

বরেন্দ্র অঞ্চলে সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কমছে ছোলা চাষ

সম্ভাবনা সত্ত্বেও রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে চার বছরে ছোলার চাষ কমেছে ২ হাজার ৭২৪ হেক্টর। আর উৎপাদন কমেছে ২ হাজার ৮১৮ মেট্রিক টন।

Advertisement

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি দফতর বলছে, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ডালের বর্তমান চাহিদা এক লাখ ৩২ হাজার ৩৮ মেট্রিক টন।

কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে সবমিলিয়ে এক লাখ ২৩ হাজার ৬৬৫ মেট্রিক টন। ঘাটতি থাকছে ৮ হাজার ৩৭৩ মেট্রিক টন। তবে সহায়তাসহ কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা গেলে এ অঞ্চলে আরও ২০ হাজার মেট্রিক টন ডাল উৎপাদন সম্ভব বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) খামার গবেষণা বিভাগের বরেন্দ্র সেন্টারের সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সাখাওয়াত হোসেন জানান, কেবল বরেন্দ্র অঞ্চলেই নয়, সারা দেশেই ডালের ঘাটতি রয়েছে। তবে বরেন্দ্রের সেচ সুবিধার বাইরে থাকা প্রায় ২০ হাজার বিঘা জমি ছোলা চাষের আওতায় নেয়া সম্ভব।

Advertisement

এসব জমি আমন ধান সংগ্রহের পর তিন মাসের বেশি সময় ধরে পতিত পড়ে থাকে। সহায়তাসহ কৃষকদের ছোলা চাষে উদ্বুদ্ধ করা গেলে অন্তত ২০ হাজার মেট্রিক টন ছোলা উৎপাদন সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, বারি ছোলা-৫ ও বারি ছোলা-৯ বরেন্দ্র অঞ্চলে চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। স্বল্পমেয়াদী এ ছোলা চাষে সার, কীটনাশক ও সেচের জন্য কোনো অতিরিক্ত খরচ নেই। উচ্চ ফলনশীল এই দুই জাতের ছোলা চাষের পর অন্য ফসল চাষ করা যায় অনায়াসেই।

এছাড়া গুণগত মান সম্পন্ন হওয়ায় বাজারে দামও ভালো। এতে কৃষকরা লাভবান হবেন। তবে আপাতত ছোলা চাষ সম্প্রসারণে বরেন্দ্রে কোনো প্রকল্প হাতে নেই বলে জানান এই গবেষক।

বরেন্দ্রে ধান ও পাট চাষ সম্প্রসারণে কাজ করছে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)। সংস্থাটির উপ-ব্যবস্থাপক (কৃষি) এটিএম রফিকুল ইসলাম জানান, বিনা সেচেই ছোলা চাষ করা যায়। এ জন্য আমন সংগ্রহের পর তারা কৃষকদের ছোলা চাষে উদ্বুদ্ধ করে থাকেন। তবে আগের চেয়ে সেচ সুবিধা বাড়ায় কৃষকরা অন্য ফসলে ঝুঁকছেন বেশি। এতে দিন দিন কমে আসছে ছোলা চাষ। এর প্রভাব পড়ছে কৃষি অর্থনীতিতেও।

Advertisement

নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার নিমদীঘি গ্রামের কৃষক আলহাজ শামসুল হুদা। তিনি জানান, ২০ বছর আগেও তিনি ১০ থেকে ১৫ বিঘা জমিতে ছোলা চাষ করতেন। সাথি ফসল হিসেবে তিষি কিংবা যব চাষ হতো।

ওই সময় আমন কেটে নেয়ার পর একমাত্র ছোলাই চাষ করা যেতো। কিন্তু ১০ বছর হলো মাঠে বসেছে বিএমডিএর গভীর নলকূপ। সেচ সুবিধা পাওয়ায় এখন ছোলা চাষ বাদ দিয়ে অন্য ফসলে ঝুঁকেছেন এলাকার শত শত চাষি।

রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুল এলাকার চাষি ওয়াহাব আলীর ভাষ্য একই। তিনি বলেন, এখনো কিছু কিছু এলাকায় ছোলা চাষ হচ্ছে। যারা চাষ করছেন তারা রোগ বালাইয়ে ভালো ফলন পাচ্ছেন না। আমদানি করা ছোলার বাজারে দেশি ছোলার ভালো দাম মিলছে না।

বিষয়টি স্বীকার করেন রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক দেব দুলাল ঢালি। তিনি বলেন, প্রতিবছরই ছোলা চাষ ও উৎপাদন কমে যাচ্ছে। সেচ সুবিধা পাওয়ায় কৃষকরা এক জমিতে অধিক ফসল ফলাচ্ছেন। এতে স্বল্পমেয়াদী ফসল চাষে ঝুঁকছেন তারা। এছাড়া ছোলার রোগ-বালাই বেড়ে যাওয়ায় এ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চাষিরা।

রাজশাহী আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেবে, ২০১২-২০১৩ মৌসুমে রাজশাহী অঞ্চলে ৪ হাজার ৪২৭ হেক্টরে ছোলা চাষ হয়েছিল। সেবছর উৎপাদন ছিল ৪ হাজার ৭৪১ মেট্রিক টন।

এর মধ্যে রাজশাহীতে ২ হাজার ৩৯০ হেক্টরে ৩ হাজার ৪০৮ মেট্রিক টন, নওগাঁয় ১০৫ হেক্টরে ১৩৭ মেট্রিক টন, নাটোরে ১৬ হেক্টরে ১৯ মেট্রিক টন এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক হাজার ৩১৪ হেক্টরে এক হাজার ৭৭৭ মেট্রিক টন। এরপর ২০১৪-২০১৫ মৌসুমে এ চার জেলায় ৩ হাজার ৫৭৩ হেক্টরে উৎপাদন হয় ৩ হাজার ৯১৬ মেট্রিক টন।

সর্বশেষ ২০১৬-২০১৭ মৌসুমে এই অঞ্চলের নাটোর বাদে অন্য তিন জেলায় ছোলা চাষ হয় এক হাজার ৭০৩ হেক্টর। এতে উৎপাদন হয়েছে এক হাজার ৯২৩ মেট্রিক টন।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এএম/জেআইএম