ক্যামেরা, মোবাইল ফোন, গ্রাফিক্স ট্যাবলেট আর সেলফির যুগে হাতে আঁকা পোট্রেট আজ তার অবস্থান হারাচ্ছে। সঙ্গেসঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে হাতে আঁকা পোট্রেট শিল্পীরা। কিন্তু প্রতিদিন বিকেল থেকে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে একটা ভিন্ন দৃশ্য দেখা যায় এই বাস্তবতার। সেখানে ১০-১২ জন তরুণকে দেখা যায় আপনমনে পোট্রেট আঁকতে। এদের প্রায় সবাই ছবি আঁকেন শখের বসে।সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে কথা হয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে বসা কয়েকজন পোট্রেট শিল্পীর সঙ্গে।রাজধানীর সিটি ইউনিভার্সিটির টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র ওবায়দুর রহমান পারভেজ প্রতিদিন ক্লাস শেষ করে বিকেলে নিজের সাইকেল নিয়ে হাজির হন সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার সামনে। তারপর চোখ রাখেন নিজের ক্যানভাসে। সামনে বসা তরুণ-তরুণী বা মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের দিকে। এরপর পেন্সিল আঁচড়ে আস্তে আস্তে নিজের ক্যানভাসে ভাসিয়ে তোলেন সামনে বসা বা ফোনের স্ক্রিনে দেখা সেই মুখটি। একই স্থানে প্রতিদিন তিনি এই কাজটি করে চলেছেন প্রায় ১০ বছর।এখানকার পোট্রেট শিল্পীর প্রায় সবাই ছবি আঁকেন শখের বসে আবার অনেকেই শখের সঙ্গে হাতখরচটাও জোগাড় করেন। ২০০৮ সালে চারুকলা থেকে পাস করা আশিকুর রহমান আলাপচারিতার মাঝে জানালেন, ‘এখানকার প্রায় সবাই সর্বনিম্ন ৩০০ টাকা থেকে ছবি আঁকা শুরু করেন। আর সর্বোচ্চ হাজার টাকা বা তার বেশি নিয়ে থাকেন। প্রতিদিন সবার আয় সমান হয় না। এমন অনেক দিন যায় কোনো টাকাই আয় হয় না। তবে গড়ে সবার দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় হয়ে থাকে। তবে টাকার চেয়ে শিল্পীদের কাছে তাদের শখটাই আসল।’আপনমনে সামনে বসা এক তরুণীর ছবি আঁকতে থাকা মোরশেদ জাগো নিউজকে জানান, সরাসরি কারো পোট্রেট আঁকতে তাদের সময় লাগে প্রায় ২০ মিনিটের মত। তবে মোবাইল স্ক্রিনে দেখে ছবি আঁকতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টা। তিনি আরো জানান, আমারা প্রায় সবাই ঘুরে ঘুরে অনেক জায়গায় গিয়ে ছবি আঁকলেও নিয়ম মেনে প্রতিদিন বিকেলে এখানে হাজির হই। এটিই হচ্ছে ঢাকার একমাত্র জায়গা যেখানে প্রতিদিন নিয়ম করে নির্দিষ্ট সময়ে পোট্রেট আঁকা হয়।আলাপচারিতার শেষের দিকে শিল্পীরা জানান, অনেক বছর ধরে শুধু আমরাই এখানে কাজ করি। কিন্তু ক্যামেরা, মোবাইল আর সেলফির যুগে এখন আর তেমন কেউ হাতে আঁকা পোট্রেট করাতে চায় না। অনেকে শখের বসে বা প্রিয়জনকে উপহার দেয়ার জন্য এখনো হাতে আঁকা পোট্রেট করান। আগের তুলনায় সেই সংখ্যা দিন দিন কমছে। তাই হাতে আঁকার পোট্রেট শিল্পীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।এসইউ/পিআর
Advertisement