আন্তর্জাতিক

বৈষম্যহীন বিশ্ব গড়তে ঐক্যের ডাক নারীদের

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে অর্থনৈতিক ধর্মঘট থেকে শুরু করে বিক্ষোভ ও বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেয়া বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার নারী লিঙ্গ বৈষম্য নিরসনের ডাক দিয়েছেন। ‘পরিবর্তন আনতে সাহসী হও’ এই শ্লোগানে বিশ্বে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। লিঙ্গবৈষম্যহীন বিশ্ব গড়ে তোলার প্রত্যয়ে নারীরা যুগান্তকারী পদক্ষেপের দাবিতে আন্দোলনে নেমে এসেছেন। তারা বলছেন, বিশ্বকে অধিক বাসযোগ্য গড়ে তুলতে হলে বৈষম্যের দৃষ্টিভঙ্গি ছুড়ে ফেলতে হবে। এই আন্দোলনের নাম দেয়া হয়েছে ‘নারীবিহীন একদিন’। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার হাই-কমিশনার জায়েদ আল হুসেইন বলেছেন, নারীদের এই আন্দোলন বড় ধরনের কিছু পরিবর্তন আনতে সক্ষম হলেও এখনো অনেক দেশে চ্যালেঞ্জ রয়েছে।  এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের এই কর্মকর্তা বলেছেন, নারী অধিকারের বিরুদ্ধে এখনো অনেক দেশে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যায়; যা আমাদের সবাইকে ব্যথিত করে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা বলছে, নারী দিবসে ‘নারীবিহীন একদিন’র এই আন্দোলন বিশ্বের ৪০টিরও বেশি দেশে পালিত হচ্ছে। আয়োজকরা বলছেন, এই একদিন নারীরা তাদের কর্মক্ষেত্র থেকে ছুটিতে থাকবে অথবা শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাবে না।আন্দোলনে অংশ নেয়া নারীরা বলছেন, আমরা বিশ্বের, আমরা সর্বত্র। বার্তাসংস্থা এপি এক প্রতিবেদনে বলছে, দিবসটি উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের নারীরা আজ কর্মক্ষেত্র থেকে বাড়িতে রয়েছে। অর্থনৈতিক সামর্থ্য ও সমাজে তাদের প্রভাব সম্পর্কে জানান দিতে লাল পোশাকে তারা দেশজুড়ে ডাক দেয়া আন্দোলনে অংশ নিয়েছে। ‘উইমেন মার্চ’ নামে একটি সংগঠনের আয়োজকরা এই প্রথম ‘নারীবিহীন একদিন’ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শপথ নেয়ার দিন লাখ লাখ মার্কিন নারী স্ত্রী-বিদ্বেষ, বৈষম্য ও নিপীড়নের প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে এসেছিল এই সংগঠনটির ডাকে।জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে এই আন্দোলনের ডাক দেয়া হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের নারীরা সেই ডাকে সাড়া দিয়ে সমতা, লিঙ্গ বৈষম্যের লড়াইয়ে শামিল হয়েছেন। জার্মানির বিমানসংস্থা লুফথানসা নারী ক্রুদের নিয়ে দেশটির কয়েকটি শহর থেকে বার্লিনে ফ্লাইট পরিচালনা করেছে। সুইডেনের জাতীয় নারী ফুটবল টিমের সদস্যরা তাদের জার্সির পেছনে নাম লিখেছেন সেই সব নারীর; যারা বিভিন্ন সেক্টরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। ফিনল্যান্ড সরকার আন্তর্জাতিক লিঙ্গ সমতা পুরস্কারের ঘোষণা দিয়েছে। এই পুরস্কারের অর্থ হিসেবে এক লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার দেয়া হবে বলে জানিয়েছে। এদিকে ‘নারীবিহীন একদিন’র এই আন্দোলনে সমতার দাবিতে রাস্তায় নেমে এসেছে জাপান ও যুক্তরাজ্যের নারীরাও। মার্কিন সমাজে নারীদের অবদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে দাবি করেছে দেশটির নারীরা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি অনুযায়ী, দেশটির নারী শ্রমশক্তির পরিমাণ ৪৭ শতাংশ। এর মধ্যে নিবন্ধিত নার্স, ডেন্টাল সহকারী, ক্যাশিয়ার, হিসাবরক্ষক ও ফার্মাসিস্ট পেশায় নারীরা আধিপত্য করছে। দেশটির সব কলেজ শিক্ষার্থীর ৫৫ শতাংশ নারী। তবে দেশটিতে এখনো নারীরা পুরুষের তুলনায় কম পারিশ্রমিক পান। একজন পুরুষ একই সময়ে এক ডলার উপার্জন করলেও নারীদেরকে একই সময়ে দেয়া হয় এক ডলারের ৮০ শতাংশ। ২০১৫ সালে দেশটির নারীদের গড় আয় ৪০ হাজার ৭৪২ ডলার হলেও একই সময়ে পুরুষের আয় হয়েছে ৫১ হাজার ২১২ ডলার। নারীবিহীন একদিনের আন্দোলনে শামিল হয়েছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশও। ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যাণ্ডের নারীরাও আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন। আফগানিস্তান নারী সাংবাদিকদের সুরক্ষায় প্রথম আশ্রয় কেন্দ্র চালু করেছে। এসআইএস/পিআর

Advertisement