কোনো রাষ্ট্র যদি মোরালিটি (নৈতিকতা) বজায় না রাখে তাহলে সে দেশে কোনো দিন শান্তি আসবে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহা। বুধবার সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির শহীদ সফিউর রহমান মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।প্রধান বিচারপতি বলেন, রাষ্ট্র যদি মোরালিটি (নৈতিকতা) বজায় না রাখে তাহলে সেই দেশে কোনো দিন শান্তি আসবে না। পৃথিবীতে শান্তি আসবে না। কোনো প্রান্তে যদি অশান্তি থাকে পার্শ্ববর্তী দেশে এটাও ছড়িয়ে পড়বে। তিনি আরও বলেন, প্রথমে আইন প্রণয়ন করা, শাসনতন্ত্র প্রণয়ন করা, এরপর বলতে হবে আমি (রাষ্ট্র) আইন মানবো। আপনারা (জনগণ) আইন মানেন। আপনারা আইনে চলেন। আমি আইন মানবো না, আমি আইনে চলবো না। আর আমি যদি বলি আপনারা মানেন তাহলে সেই রাষ্ট্র কোনো মতে চলবে না।ইংল্যান্ডের উদাহরণ টেনে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘ইংল্যান্ডে সংবিধান ছাড়া ডেমোক্রেসি হচ্ছে, সরকার পরিবর্তিত হচ্ছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শাসনতন্ত্রকে লোক দেখানো হিসেবে ব্যবহার করে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হলো। এরপর একটা সমাজ জেগে উঠলো, তারা হলো আপনাদের মতো আইনজীবী সমাজ। যারা বিখ্যাত আইন পেশার লোক, তারা পৃথিবীর চিত্র পরিবর্তন করলেন।’ প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘সেটা আমেরিকা থেকে শুরু হয়েছে। ৫-৬টা রায় হয়েছে নিগ্রোদের শিক্ষার অধিকার, বিভিন্ন অধিকার বিষয়ে। এটা (রায় দেয়ার পক্ষে) কিন্তু শাসনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে আইনজীবীরা তাদের প্রজ্ঞা দেখিয়েছেন, ব্যাখ্যা করে উপস্থাপন করেছেন এবং অ্যাক্টিভিস্ট জাজেস জন মার্শাল থেকে আরম্ভ করে আজকে একটা কল্যাণ রাষ্ট্র করেছেন (তাদের চোখে)। কিন্তু সেই কল্যাণকর রাষ্ট্রে আজকে কি অকল্যাণকর কাজ হচ্ছে -সেটা আমরা উপলব্ধি করছি।’‘এখানে দুইটা জিনিস। আইন এবং মোরালিটি। বিচারকরা অনেক সময় আইনটাকে পাশ কেটে মোরালিটির দিকে ধাবিত হই। আমরা কিন্তু মোরালিটির দিকে কোনো মতেই কোনো ব্যাখ্যা দিতে পারি না।’ এসকে সিনহা বলেন, ‘যত খারাপ ঘটনাই ঘটুক আমরা বিচারকরা আইন যে কথা বলে সেই কথাই বলবো। এর মধ্যে এমন কিছু ঘটনা আছে যেগুলো মোরাল অ্যাথিকসের বাইরে। কিন্তু আইন এটাকে বেআইনি বলছে না। আমরা কিন্তু এটাই রায় দেব। এই মোরালিটি যেটা, আমাদের এখানে আইন না, এটা কিন্তু হয়তো আমার পাশের দেশে একটা বেআইনি হতে পারে। সে দেশের যে বিচারক বিচার করবেন এবং আমার দেশের বিচারকের ব্যাখ্যার মধ্যে ব্যবধান থাকবেন। আমরা এটুকু ভুলে যাই।’আইনজীবীদের বিষয়ে প্রধান বিচারপতি বলেন, আমাদের বিচার বিভাগের কিছু অসঙ্গতি আছে। এটার জন্য অনেকাংশে দায়ী আইনজীবীরা। আমরা বিচার করি। আপনাদের মতো বিজ্ঞ আইনজীবীরা আছেন যারা আইনের ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেন। অনেক দিন ধরে খেয়াল করছি। আজকে এ ধরনের ব্যাখ্যা দেয়ার মতো খুব কম আইনজীবী পাই। যার পরিপ্রেক্ষিতে আইনের ব্যাখ্যা ও সিদ্ধান্ত বিচারকরা নিজেরা লেখা পড়া করে দিই। এতে ত্রুটি থেকে যায়। আপনারা যদি অবদান না রাখেন, শুধু জামিন অথবা অন্য কোনো জিনিসের প্রতি চিন্তা করেন তাহলে কিন্তু যে আদর্শের ওপর ভিত্তি করে মহান আইন পেশা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে এটা বিলীন হয়ে যাবে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলএলএম ল’ইয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন ‘বাসন্তি উৎসব ও মনোজ্ঞ’ শীর্ষক সাংস্কৃতিক এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি একেএম ফয়েজ।এছাড়া সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শেখ আলী আহমেদ খোকনের পরিচালনায় সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বিচারপতি একেএম আব্দুল হাকিম, বিচারপতি নাইমা হায়দার, বিচারপতি এমআর হাসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড.বোরহান উদ্দিন খান, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক এস এম মুনীর প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।এফএইচ/আরএস/আরআইপি
Advertisement