মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ, ভিসা নবায়ন, অবৈধ শ্রমিকদের বৈধকরণ, অবৈধ শ্রমিকদের স্বদেশে ফেরত পাঠানোসহ এ সংক্রান্ত আইন-কানুন কখনো স্থির থাকে না। সব সময় দেখি কোনো না কোনো নতুন নিয়ম-কানুন, বা এক পদ্ধতি বাতিল করে আরেক পদ্ধতি ঘোষণা। অনুমান করে বলতে পারি অনেকটা এই অস্থিতিশীল নিয়মের কারণে বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আনা বিলম্ব হচ্ছে, যদিও সিন্ডিকেট সমস্যাসহ আরো অনেক সমস্যা আছে। বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়নে মালয়েশিয়া সব-সময় তাদের লাভের দিকটাই দেখেছে। বিদেশি শ্রমিকের কল্যাণের দিকে বরাবরই কম নজর মালয়েশিয়ার। গত বছর মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছিলেন, মালয়েশিয়ান মালিকরা বিদেশি শ্রমিকদের কল্যাণের দিকটা এড়িয়ে যায়। বিদেশি শ্রমিকদের সাথে মালিকরা ভালো ব্যবহার করে না। মন্ত্রীর বক্তব্যে আশা করেছিলাম এবার হয়তো বিদেশি শ্রমিকবান্ধব নিয়ম চালু হবে। হ্যাঁ, ঘোষণাও দিছিলো মালয়েশিয়ান সরকার, `এখন থেকে বিদেশি শ্রমিকদের লেভি (কর) নিয়োগকর্তা বা মালিকই বহন করবে। শ্রমিকদের বেতন থেকে ভিসার জন্য বা লেভির জন্য অর্থ কেটে রাখা যাবে না। এ নিয়ম চলতি জানুয়ারি থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিলো। কদিন আগেও ঘোষণা এমনই ছিলো। কিন্তু, জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে পাল্টে গেলো মালয়েশিয়ার সরকার। এখন নতুন ঘোষণা বিদেশি শ্রমিকদের লেভি নিয়োগকর্তা প্রদান করার নিয়ম ২০১৭ সালে না, ২০১৮ সাল থেকে কার্যকর হবে। হতাশ বাংলাদেশিসহ বিদেশি শ্রমিকরা। কেন মালয়েশিয়ার সরকার হঠাৎ সিদ্ধান্ত পাল্টালো? পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে নতুন শ্রমিক আনার ব্যাপারটি মাথায় রেখে মালয়েশিয়া নিয়োগকর্তা কর্তৃক লেভি দেওয়ার আইন এ বছর কার্যকর করছে না। কারণ, বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক আনা শীঘ্রই শুরু হলে চলতি বছরেই কমপক্ষে লাখ-খানেক শ্রমিক আসবে। এর কম-বেশি তো হবেই। এ বছর যে পরিমাণ লোকই বাংলাদেশ থেকে আসুক, লেভি (কর) মালিকের বহন করতে হবে না, মালয়েশিয়ায় আসতে আগ্রহীরা-ই লেভি বহন করবে। হোক তা ঋণ করে বা জায়গা-জমি বিক্রি করে। অর্থাৎ শুধু লেভি বাবদ বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় আসবে কয়েক হাজার কোটি টাকা। ঘুরেফিরে মালয়েশিয়া লাভবান হবে। মালয়েশিয়া তার লাভটা ঠিকই ভালো বুঝে। শ্রমিক সংকট নিরসনে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নেবে আর নিয়োগকর্তা কর্তৃক লেভির খরচ বহন না করে লেভি বাবদ রাজস্ব আয়ও করবে।এক ঢিলে দুই পাখি। আবার ২০২০ সাল পর্যন্ত বিদেশি শ্রমিকদের ভিসা নবায়ণের কাজ করবে `মাইজি` নামের একটি বেসরকারি কোম্পানি। লেভির (কর) খরচের সাথে বেসরকারি কোম্পানি মাইজি`র লাভ যোগ হয়ে বেড়েছে ভিসা নবায়ণের খরচ। অবৈধ বা ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ শ্রমিকদের দেশে যাওয়ার কাজও করছে বেসরকারি কোম্পানি। এখানেও বেড়েছে খরচ। এখানেও লাভ মালয়েশিয়ান কোম্পানির, মানে মালয়েশিয়ার। বর্তমানে মালয়েশিয়ার মুদ্রার মান কমতে কমতে যে অবস্থায় ঠেকেছে তাতে মালয়েশিয়ায় এসে নিজের বেতনের টাকায় প্রতিবছর লেভির খরচ বা প্রতিবছর ভিসার খরচ বহন করে অবশিষ্ট কত টাকা দেশে পাঠাতে পারবে নতুন আসা একজন শ্রমিক, তা ভেবে দেখা দরকার। তাই মালয়েশিয়ায় বিদেশি শ্রমিকদের লেভি নিয়োগকর্তা কর্তৃক বহন করার বিধানটি চালু করার জন্য বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট বিভাগের তৎপর থাকা চাই, কারণ মালয়েশিয়ায় পাঁচ লাখের অধিক বাংলাদেশি কাজ করছেন। প্রতি বছর-বছর বাংলাদেশিদের ভিসার খরচ বাঁচলে তা বাংলাদেশেই যাবে। বাড়বে আমাদের রেমিটেন্স আয়, আরো সহায়ক হবে নতুন উচ্চতায় যেতে আমাদের (বাংলাদেশ ব্যাংকের) রিজার্ভ।লেখক : মালয়েশিয়াপ্রবাসী। এইচআর/পিআর
Advertisement