বিশেষ প্রতিবেদন

হকার ইন্ধনে কাউন্সিলর

রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল ও আশপাশ এলাকায় হকার উচ্ছেদ নিয়ে সিটি কর্পোরেশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন কয়েকজন কাউন্সিলর। ফুটপাতে হকার বসতে দেয়াসহ লাইনম্যানের ম্যাধ্যমে নিয়মিত চাঁদা আদায়েরও অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশে ফুটপাত দখলমুক্তের সিদ্ধান্ত নেন দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন। পাশাপাশি হকার পুনর্বাসন ও তাদের ব্যবসার জন্য হলিডে মার্কেটও নির্ধারণ করে বেশ কয়েকবার উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলে সেখানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের ওপর হমলাও হয়েছে। এর পেছনে কথিত লাইনম্যান ও খোদ কর্পোরেশনের কিছু কাউন্সিলরই জড়িত বলে জানা গেছে।সর্বশেষ গত ১১ জানুয়ারি হলিডে মার্কেট চালু, হকার পুনর্বাসন ও ফুটপাত দখল মুক্তের বিষয়ে হকার, কাউন্সিলর ও নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন মেয়র। এসময় তিনি হকাদের বিভিন্ন কথা শোনেন। তবে পুনর্বাসন এবং হলিডে মার্কেট সপ্তাহে একদিনের পরিবর্তে কীভাবে আরো বাড়ানো যায় সে বিষয়ে মেয়রকে ভাবার আহ্বান জানান তারা। এছাড়া লাইনম্যান নামধারী চাঁদাবাজদের গ্রেফতারের আহ্বানও জানানো হয়। বৈঠকে সরকারি কার্যদিবসে নগরীর ফুটপাতে সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত কোনো হকার বসতে দেয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। এ সিদ্ধান্ত পরবর্তী রোববার (১৫ জানুয়ারি) থেকে কার্যকর হলেও হকাররা সে অনুযায়ী কাজ না করায় আবারও অভিযান চালায় সিটি কর্পোরেশন। অভিযানে ফুটপাত একেবারেই দখলমুক্ত হয়ে পড়ে।এদিকে রাজধানীর ফুটপাত হকারমুক্ত করতে আদালতের নির্দেশনা রয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের বেদখল হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারে সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন প্রধান বিচারপতি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে দুই সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন।এরপরও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর একেএম মোমিনুল হক সাঈদের বিরুদ্ধে হকার ইন্ধনের প্রকাশ্য অভিযোগ রয়েছে। তিনি হকারদের সংঘবদ্ধ করে নিজের কার্যালয় ঘেরাও করান বলে জানা গেছে। এরপর হকার নেতাদের সঙ্গে বৈঠক এবং মানববন্ধনেও অংশ নিতেও দেখা গেছে তাকে। এছাড়া সংস্থার স্বার্থের বিরুদ্ধেও তিনি বক্তব্য দিয়েছেন বলে জানা গেছে।বুধবার (১৮ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় সিপিবি সমর্থিত বাংলাদেশ হকার সমন্বয় পরিষদের ব্যানারে কিছু লোক তার (কাউন্সিলর) কার্যালয় ঘেরাও করে। সংগঠনটি গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে এ কর্মসূচি পালন করে।সাধারণত সরকারি কোনো কার্যালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি দেয়া হলে বিষয়টি নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করা তার দায়িত্ব। কিন্তু ওই কাউন্সিলর বিষয়টি নিয়ে মেয়র, পুলিশ বা ঊর্ধ্বতন কারো সঙ্গে আলোচনা করেননি।ওইদিন তিনি হকারদের উদ্দেশে বলেন, মেয়র একক সিদ্ধান্তে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছেন। আমি আপনাদের দাবি সমর্থন করি। ‘আমি হকার পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি।’ কাউন্সিলর মোমিনুলের এমন বক্তব্য গণমাধ্যমে পাঠায় হকার সমন্বয় পরিষদ।সর্বশেষ শুক্রবার বিকেলে হকারদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচিতে তিনি (কাউন্সিলর) যোগ দিয়ে বলেন, আপনারা আমার ভোটার। আপনাদের সঙ্গে আছি এবং যা করণীয় সাধ্যমতো করবো। তবে নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে একজন কাউন্সিলর কখনোই জনস্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করতে পারেন না। তাকে অবশ্যই সংস্থাপ্রধানের সিদ্ধান্ত মোতাবেক চলতে হবে বলে বিধান থাকলেও তিনি এর তোয়াক্কা করেননি।এদিকে হকাররা শনিবার ২০নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতনের কার্যালয়ও ঘেরাও কর্মসূচি দেন। সে কর্মসূচিতে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন যোগ দিয়ে বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ফুটপাতে বসলে হকারদের সংসার চলবে না।  অপরদিকে নগর ভবনে হকার সমস্যা সমাধান ও পুনর্বাসনের লক্ষে তালিকা প্রণয়ন নিয়ে মেয়র, কাউন্সিলর, হকার ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে ৫৪ নং ওয়ার্ড কমিশনার মো. মাসুদ ফুটপাতে হকারদের ব্যবসার অনুমতি দিতে আহ্বান জানান। জবাবে মেয়র বলেন, জনগণের পথ জনগণের জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।উচ্ছেদে বাধাসহ সিটি কর্পোরেশনের স্বার্থবিরোধী কাজ করার অপরাধে কর্পোরেশনের ৫১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর কাজী হাবিবুর রহমান হাবু বরখাস্ত হয়েছেন। গত ১ সেপ্টেম্বর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারের নিচে ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদের সময় ট্রাকচালক ও শ্রমিকদের উসকানি, যান চলাচল বন্ধের হুমকি ও দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেটকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিতের অভিযোগ ৭ সেপ্টেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় তাকে বরখাস্ত করে।সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের প্রধান প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতে হকার রয়েছে। কাউন্সিলররা চাইলে তাদের উচ্ছেদ করতে পারেন। কিন্তু তারা সেটা না করে লাইনম্যানের মাধ্যমে হকারদের থেকে চাঁদা আদায় করেন। ‘অবাধ্য’ এসব কাউন্সিলরদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। এদিকে হকারদের সঙ্গে আতাতের কারণে মেয়রের এ উদ্যোগ ভেস্তে যেতে পারে বলে মনে করছেন তারা। এ বিষয়ে দক্ষিণ সিটির মেয়র সাঈদ খোকন জাগো নিউজকে বলেন, ফুটপাত জনগণের সম্পদ। এটি উদ্ধারে উচ্চ আদালত এবং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ী কাজ করছি।এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ও সুশাসনের জন্য নাগরিক সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার জাগো নিউজকে বলেন, কেউ আইন লঙ্ঘন করতে পারে না। যদি সিটি কর্পোরেশন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে তাহলে কাউন্সিলরদের তা অবশ্যই মেনে চলতে হবে।এমএসএস/এএইচ/আরআইপি

Advertisement