দেশজুড়ে

জেএসসি পরীক্ষায় অনুপস্থিতির মূলে বাল্যবিয়ে

বাল্যবিয়ের অভিযোগে ভ্রাম্যমাণ আদালতে সাজা দেয়ার পরও বন্ধ হচ্ছে না টাঙ্গাইলের মির্জাপুর এলাকায় বাল্যবিয়ে। এমনকি বিয়ে বন্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও কার্যত তা কাজে আসছে না। গত (০১ নভেম্বর) সারাদেশে শুরু হওয়া জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষার প্রথম দিনে মির্জাপুর উপজেলায় শতাধিক ছাত্রীর পরীক্ষায় অংশ না নেয়ার বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে বাল্যবিয়ের বিষয়টি উঠে আসে।উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছর জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় উপজেলার পাঁচটি কেন্দ্রে মোট ৭ হাজার ২৬৭ জন পরীক্ষার্থীর অংশ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষার প্রথম দিনে ১৩০ জন অনুপস্থিত ছিল। পরীক্ষায় অংশ না নেয়া ১৩০ জনের মধ্যে প্রায় ১০০ জনই ছাত্রী। আর এসব ছাত্রীর অনেকের বিয়ে হওয়ায় তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেনি। জেএসসি পরীক্ষার প্রথম দিন মির্জাপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মির্জাপুর বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ও মির্জাপুর সদয় কৃষ্ণ মডেল উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন গিয়ে এ তথ্যের সত্যতাও পাওয়া যায়। হাড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী স্বর্ণা, হিলড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের লিজা, লতিফপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের উন্নতি সরকার, দেওহাটা এ জে উচ্চ বিদ্যালয়ের রুমি, পূর্ণিমা রাজবংশী ও সুমাইয়া, মির্জাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী আফসানার বেঞ্চ ফাঁকা ছিল। ওই শ্রেণী কক্ষের পাশের সিটে বসা পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেসব ছাত্রী অনুপস্থিত রয়েছে তাদের অধিকাংশেরই বিয়ে হয়েছে। এজন্য তারা পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না। এদিকে বাল্যবিয়ে বন্ধে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সারা বছর ধরে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সচেতনামূলক সভা, জনপ্রতিনিধি ও এনজিও কর্মীদের দিয়ে প্রচারণা চালানো হলেও তা কাজে আসছে না। মির্জাপুর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান হোসেন বলেন, জেএসসি পরীক্ষায় তার বিদ্যালয় থেকে ৩৫৩ জন ছাত্রীর অংশ নেয়ার কথা ছিল। কিন্তু পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৩৪৮ জন। বাল্যবিয়ের শিকার ও মির্জাপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী রাজনগর গ্রামের আফসানা। তার বাবা আনোয়ার হোসেন পেশায় একজন ছাই ব্যবসায়ী। দুই মেয়ে এক ছেলের সংসারে তিনিই উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সংসারের অভাবের কারণে তিনি তার মেয়েকে লেখাপড়া না করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন বলে জানান। দেওহাটা এ জে উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী বহুরিয়া গ্রামের রুমির বাবা আব্দুর রহিম জানান, তিন মেয়ের মধ্যে রুমিই বড়। নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের সর্ম্পক আসায় তিনি মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।ফতেপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ূন তালুকদার বলেন, অভাব ও অশিক্ষার কারণে বাল্যবিয়ে বন্ধ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া সমাজে মেয়েদের এখনো বোঝা বলে মনে করা হয়। অথচ  লেখাপড়া শেখালে মেয়েরাও যে ছেলেদের মতো সংসার ও দেশের জন্য ভূমিকা রাখতে পারে সে বিষয়টি তারা বুঝতে চায় না। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, বাল্যবিয়ে বন্ধে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে আরো বেশি সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করা হবে। মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম আহমেদ বলেন, অবস্থার উন্নতি হচ্ছে। বাল্যবিয়ে পুরোপুরি বন্ধ করতে হলে সব শ্রেণিপেশার মানুষের সহযোগিতা দরকার। আরিফ উর রহমান টগর/এএম/পিআর

Advertisement