ঘটনাটা ২০০৪ এর দিকের। তখন আশরাফুল জোয়ারে ভাসছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট। সে সময় বাংলাদেশ দলের বর্তমান মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম কাজ করতেন ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারে। তৃণমূল পর্যায়ে একজন ছেলেকে নিয়ে লেখার জন্য বিকেএসপি কোচ সালাহউদ্দিনকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন একজন খেলোয়াড়ের নাম বলো যে বাংলাদেশের হয়ে সারা বিশ্ব মাতাবে। স্বাভাবিকভাবেই সালাহউদ্দিন বলেছিলেন আশরাফুলের কথা। কিন্তু রাবিদ বলছিলেন অ্যাশ ইতোমধ্যেই স্টার। তার দরকার এমন একজন যে এখনও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলেনি। সালাহউদ্দিন তখন বলেন সাকিব আল হাসানের কথা।এরপর যা হয়েছে কেবল ইতিহাস। বাংলাদেশের হয়ে সাকিব যা করেছেন তা কম বেশি সবাই জানেন। সাকিব বিশ্ব সেরা হওয়ার পর সালাহউদ্দিনকে রাবিদ দেখিয়েছিলেন সেই প্রতিবেদন। সালাহউদ্দিনের জহুরীর চোখ সাকিবকে চিনে ছিলেন তার ক্যারিয়ার শুরুর আগেই। সেই সালাহউদ্দিন এবার খুঁজতে যাচ্ছেন নতুন সাকিবকে। ভবিষ্যতের সাকিবকে খুঁজে বের করতে উদ্যোগ নিয়েছে গাজী গ্রুপের প্রতিষ্ঠান গাজী টায়ারস। আর তার নেতৃত্ব দেবেন এ কোচ।আগামী ১ সেপ্টেম্বর শুরু হয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আটটি বিভাগে চলবে বাছাই প্রক্রিয়া। চট্টগ্রাম পর্ব দিয়ে শুরু হবে এ প্রতিভা অন্বেষণ প্রক্রিয়া। ১ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্টেডিয়াম, ৪ সেপ্টেম্বর সিলেট বিভাগীয় স্টেডিয়ামে, ৭ সেপ্টেম্বর ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজ মাঠ, ১৭ সেপ্টেম্বর বরিশাল বিভাগীয় স্টেডিয়াম, ১৯ সেপ্টেম্বর খুলনা বিভাগীয় স্টেডিয়াম, ২২ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিভাগীয় স্টেডিয়াম, ২৫ সেপ্টেম্বর রংপুর বিভাগীয় স্টেডিয়াম এবং ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় সিটি ক্লাব মাঠে চলবে এই বাছাই প্রক্রিয়া।বৃহস্পতিবার থেকে অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন ফরম পাবে আগ্রহীরা। রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন ফরম পাওয়া যাবে গাজী টায়ারস-এর ফেসবুক পেইজ www.facebook.com/GaziTyresBD -এ। স্পট রেজিস্ট্রেশন বা তাৎক্ষণিকভাবে নিবন্ধনের ব্যবস্থাও থাকছে। এ কর্মসূচির মাধ্যমে সেই সব তরুণ ক্রিকেটারদের বাছাই করা হবে যাদের বয়স ১৫ বছর বা তার বেশি এবং যারা এর আগে ঢাকায় কোনো লিগ পর্যায়ে খেলে নাই।কর্মসূচির আওতায় সারা দেশ থেকে ৬০-৮০ জন নতুন ক্রিকেটার বাছাই করে আনা হবে। তৃণমূল পর্যায় থেকে তুলে আনা এসব নতুন ক্রিকেটারদের প্রশিক্ষণ-নির্দেশনা দেবেন সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার এবং কোচরা, যা অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) ।এদের মধ্য থেকে চূড়ান্ত ভাবে ২০-২৫ জনকে নির্বাচনের পর তাদের প্রশিক্ষণ দিতে ও যোগ্য ক্রিকেটার হিসেবে গড়ে তুলতে ৪ বছরের একটি চুক্তির আওতায় নেওয়া হবে যেখানে তাদের ট্রেনিং এবং গ্রুমিং করানো হবে। এছাড়াও তাদেরকে ১ বছরের জন্য “গোলাম দস্তগীর গাজী ক্রিকেট স্কলারশিপ” প্রদান করা হবে এবং ক্রিকেট কিট সেট উপহার দেওয়া হবে।বৃহস্পতিবার রাজধানীর একটি অভিজাত হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়। উপস্থিত ছিলেন বিসিবির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, বিসিবির সহ-সভাপতি মাহবুব আনাম, গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ সুজন, অপারেসন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান, মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস ও গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স এর ডিরেক্টর অব কোচিং মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনবাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিজাম উদ্দিন চৌধুরী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘এটি হবে একটি হাই পারফরমেন্স ক্যাম্প, যেখান থেকে আমাদের ভবিষ্যৎ টাইগাররা উঠে আসবে এবং দেশের গৌরবময় ক্রিকেটের পতাকা বহন করবে। সারা দেশ থেকে তরুণ বয়সের মেধাবী ক্রিকেটারদের তুলে আনতে এ ধরনের কর্মসূচী অত্যন্ত গুরূত্বপূর্ণ।’বিসিবির সহ-সভাপতি মাহবুব আনাম তার বক্তব্যে বলেন, ‘গাজী গ্রুপ বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে এমন একটি উদ্যোগ নিয়েছে। তাদেরকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমাদের একার পক্ষে আসলে সব সময় প্রতিভাগুলো খুঁজে বের করা সম্ভব হয় না। বিসিবি যেখানে কাজ করছে না, সেখানে গাজী গ্রুপ এখন থেকে কাজ করবে। যার ফলে কোনো প্রতিভা হারিয়ে যাবে না।’গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের ডিরেক্টর অব কোচিং মোহাম্মদ সালাহউদ্দীন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা এখন পরবর্তী প্রজন্মের সাকিব, তামিম, মাশরাফিদের দেখার অপেক্ষায় আছি। আমরা গভীর মনোযোগ সহকারে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে আছি। প্রতিভাবান তরূণ ক্রিকেটারদের বাছাই করে এনে আমাদের ক্রিকেটের নতুন টাইগার হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা বদ্ধপরিকর। আমরা সাধারণ কোনো প্রতিভার পেছনে ছুটব না। আমরা তাদের পেছনেই ছুটব যাদের স্বপ্নটা আকাশ ছোঁয়া। ছেলেরা যদি স্বপ্ন দেখে, আর স্বপ্ন দেখানোর পথটা যদি আমরা ঠিক করে দিতে পারি তাহলেই আমাদের উদ্দেশ্য সফল হবে।’উল্লেখ্য, এ পুরো প্রক্রিয়াটি রিয়েলিটি শো আকারে সম্প্রচার করবে গাজী টিভি।আরটি/এনইউ/আরআইপি
Advertisement