শিশুরা নিষ্পাপ। শিশু অবস্থায় যারা মারা যায়, তারা নিষ্পাপ অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে। তাই তারা মৃত্যুর পরপরই জান্নাতে প্রবেশ করে। তারা জান্নাতের বাগানে ঘুরে বেড়ায়, খেলাধুলা করে এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার অপেক্ষা করে।
Advertisement
হজরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের স্বপ্নের বর্ণনায় বলেন, আমরা চলতে চলতে একটা সবুজ বাগানে পৌঁছলাম, যেখানে বসন্তের বিচিত্র রকম ফুল ফুটেছে। ওই বাগানের মাঝে দীর্ঘকায় একজন পুরুষকে দেখলাম। তবে তার মাথা যেন আমি দেখতেই পাচ্ছিলাম না। তার চারপাশে এত বিপুল সংখ্যক বালক-বালিকা দেখলাম যে এত বেশি সংখ্যক বালক-বালিকা আমি কখনও একসাথে দেখিনি। আমি ফেরেশতাদের বললাম, এই ব্যক্তি কে? আমাকে বলা হলো, ইনি ইবরাহিম (আ.) আর তার আশপাশের বালক-বালিকারা হলো ওই সব শিশু যারা শৈশবে নিষ্পাপ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে। (সহিহ বুখারি: ৪২৯)
আরেকটি হাদিসে শিশু বয়সে মৃত্যুবরণকারীদের জান্নাতের প্রজাপতির সঙ্গে তুলনা করে নবিজি (সা.) বলেন, শিশু সন্তানরা আখেরাতে তাদের মা-বাবার জন্য সুপারিশ করবে। তারা জান্নাতের দরজায় অপেক্ষা করবে এবং হাত ধরে মা-বাবাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, শিশু বয়সে মৃত্যুবরণকারী সন্তানেরা জান্নাতের প্রজাপতির মতো। তাদের কেউ যখন তাদের বাবা বা তাদের বাবা-মাকে দেখবে, তখন তার পরিধানের কাপড় কিংবা হাত ধরবে। এরপর সেই কাপড় কিংবা হাত আর ছাড়বে না যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাকে তার মা-বাবাসহ জান্নাতে প্রবেশ না করাবেন। (সহিহ মুসলিম: ৬৩৭০)
তাই শিশু অবস্থায় যারা মৃত্যু বরণ করে, তাদের গুনাহ ক্ষমা করার জন্য বা তাদের জান্নাত দান করার জন্য দোয়া করার প্রয়োজন নেই। বরং দোয়া করতে হবে, আল্লাহ তাআলা যেন তাদের সঙ্গে আমাদের জান্নাতে মিলিত করেন, তাদেরকে যেন আমাদের নাজাতের মাধ্যম বানান, সওয়াবের কারণ বানান, আমাদের জন্য সুপারিশকারী বানান।শিশুদের জানাজার নামাজে, কবর জিয়ারতের সময় এবং অন্যান্য সময় এ দোয়াটি পড়ুন:
Advertisement
اَللّٰهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا فَرْطًا وَّاجْعَلْهُ لَنَا اَجْرًا وَّذُخْرًا وَّاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَّمُشَفَّعًا
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা-জআলহু লানা ফারতাও ওয়া-জআলহু লানা আজরাও ওয়া যুখরাও ওয়া-জআলহু লানা শাফিয়াও ওয়া মুশাফ্ফাআন।
অর্থ: হে আল্লাহ! তাকে আমাদের অগ্রবর্তী ব্যবস্থাপক (কোনো সফরে যে আগে আগে চলে এবং পেছনের লোকেরা পরে তার সাথে মিলিত হয়) বানিয়ে দাও, তাকে আমাদের জন্য সঞ্চয় ও সওয়াবের উপকরণ বানিয়ে দাও এবং তাকে আমাদের জন্য সুপারিশকারী ও গ্রহণযোগ্য সুপারিশকারী বানাও। (আল-বাহরুর রায়েক: ২/১৯৯)
ইমাম বুখারি (রহ.) বর্ণনা করেছেন, হাসান বসরি (রহ.) শিশুর জানাজার নামাজে তৃতীয় তাকবিরের পর এ দোয়া পড়তেন,اللَّهُمَّ اجْعَلْهُ لَنَا سلفا وفرطا وذخرا وَأَجرا
Advertisement
উচ্চারণ: আল্লহুম্মা-জআলহু লানা সালাফান ওয়া ফারাত্বান ওয়া যুখরান ওয়া আজরান।
অর্থ: হে আল্লাহ! তাকে আমাদের অগ্রবর্তী ব্যবস্থাপক (কোনো সফরে যে আগে আগে চলে এবং পেছনের লোকেরা পরে তার সাথে মিলিত হয়) বানিয়ে দাও এবং তাকে আমাদের জন্য সঞ্চয় ও সওয়াবের উপকরণ বানাও। (সহিহ বুখারি: ১৩৩৫)
দোয়াটি এভাবেও আমরা পড়তে পারি শিশুর জানাজায়, শিশুর কবর জিয়ারতের সময় এবং অন্যান্য সময়ও।
ওএফএফ/জেআইএম