রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা বর্তমানে ‘টক অন দ্য কান্ট্রি’। আজ ২২ জুলাই (মঙ্গলবার) সকাল ১০টা পর্যন্ত ২৭ জন নিহত ও অগ্নিদগ্ধ ৭৮ জন বিভিন্ন হাসপাতালে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। নিহত ২৭ জনের মধ্যে ২৫ জনই শিশু।
Advertisement
মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় নিরপরাধ শিশুসহ হতাহতদের ঘটনাটি আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবার হৃদয়স্পর্শ করেছে। ধনী দরিদ্র নির্বিশেষে প্রতিটি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আলোচনা-হতাহতদের স্বজনরা এই শোক সইবে কেমন করে। যারা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে তারা কি মানসিকভাবে ট্রমাটাইজড হবেন, যদি হন তাহলে এ থেকে পরিত্রাণের উপায় কি।
বিপর্যয় পরবর্তী মানসিক সমস্যা ও এ থেকে পরিত্রাণের উপায় নিয়ে জাগো নিউজের প্রতিবেদক জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের কমিউনিটি অ্যান্ড সোশ্যাল সাইকিয়াট্রি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মুনতাসীর মারুফের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপ করলে ডা.মুনতাসীর মারুফ বলেন, ‘অনভিপ্রেত ও আকস্মিক কোনো দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, আঘাত বা বিপর্যয় মানুষের চিন্তাজগতকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়, মনে চাপ ও কষ্টের সৃষ্টি করে। কারো ক্ষেত্রে এই প্রতিক্রিয়া তীব্র হয়ে জীবনযাপনকে ব্যাহত করে এবং মানসিক রোগের পর্যায়ে চলে যায়’।
Advertisement
বিপর্যয় পরবর্তী মানসিকচাপ জনিত তেমনি একটি রোগ ‘পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার’, সংক্ষেপে যা ‘পিটিএসডি’ নামেও পরিচিত। এ রোগ সাধারণত কাদের হয়- এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘বড় কোনো দুর্যোগ বা আঘাতেরপ্রতিক্রিয়ায় পিটিএসডি হয়ে থাকে। ভয়াবহ ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অথবা যুদ্ধ, সন্ত্রাস, অপহরণ, ধর্ষণ, সড়ক দুর্ঘটনার মতো মানব-সৃষ্ট বিপর্যয়ের শিকার বা এর প্রত্যক্ষদর্শীরা পরবর্তীতে রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
দুর্ঘটনার ধরণ, তীব্রতা, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার ব্যক্তিগত দক্ষতার (কোপিং মেকানিজম) উপর রোগ হওয়া না হওয়া নির্ভর করে। সাধারণত নারীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন। যাদের নিকটাত্মীয়ের মানসিক রোগের ইতিহাস আছে, যারা শৈশবে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যাদের পারিবারিক বা সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় নয়, তাদের ক্ষেত্রে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। যুদ্ধ-বিগ্রহ বা সহিংসতার শিকার হয়ে অন্য দেশে শরণার্থী হিসেবে বাস করা ব্যক্তিদেরও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি’।
এ রোগের লক্ষণ কি কি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পিটিএসডি-তে আক্রান্ত ব্যক্তির মনে ভয়ংকর বিপর্যয় বা আঘাতটির দুঃসহ স্মৃতি বারে বারে ফিরে আসে। ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো শব্দ, দৃশ্য বা আলোচনা ব্যক্তির মনে সে স্মৃতি জাগিয়ে তোলে। ব্যক্তি একই রকম ভয়, আতংক, বেদনা অনুভব করেন, যেমন অনুভুতি হয়েছিল প্রকৃত ঘটনাটির সময়। রাতে দুঃস্বপ্নেও হানা দেয় সেই স্মৃতি। অনেকে বেদনাদায়ক পরিস্থিতিটি মনে করিয়ে দিতে পারে এ ধরনের ঘটনা, ব্যক্তি বা আলোচনা এড়িয়ে চলেন। লোকজনের সঙ্গে মেলামেশা কমিয়ে দেন। নিজের আবেগ-অনুভূতিও যেন প্রকাশ করতে পারেন না।
অনেকে আবার ভয়াবহ ঘটনাটির গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভুলে যান অজান্তেই। কেউ আবার হয়ে পড়েন অস্থিরচিত্ত, উদ্বিগ্ন, উত্তেজিত, বিপদাশংকায় মাত্রাতিরিক্ত সতর্ক। কাজে মনোযোগ কমে যায়। শারীরিক নানা সমস্যা যেমন, মাথাব্যথা, শরীরব্যথা, বুক ধড়ফড়, হাত-পা কাঁপা, খাওয়ায় অরুচি প্রভৃতিদেখা দেয়। অনেকে বিষণ্নতা ও অপরাধবোধে ভোগেন। আক্রান্তদের মধ্যে মাদকাসক্তি ও আত্মহত্যার প্রবণতা দেখা দেয়’।
Advertisement
এ ধরনের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা কি জানতে চাইলে ডাক্তার মুনতাসির মারুফ বলেন, ‘পিটিএসডি-তে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ওষুধ, একক সাইকোথেরাপি, গ্রুপ থেরাপি, ইএমডিআর নামক বিশেষ থেরাপি প্রভৃতির সমন্বয়ে চিকিৎসা করা হয়। সাইকোথেরাপির মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তির চিন্তা-ভাবনা ও আবেগ প্রকাশের সুযোগ দেওয়া হয় এবং নেতিবাচক চিন্তা ও আচরণ পরিবর্তনের চেষ্টা করা হয়। রোগীকে মানসিক চাপ মোকাবেলা ও খাপ খাইয়ে নেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়’।
আরও পড়ুনহঠাৎ পুড়ে গেলে কী করবেনহতাশার লক্ষণ প্রকাশ পায় আপনার ঘরেওএমইউ/কেএসকে/জেআইএম