লাইফস্টাইল

স্ট্রেসফুল চাকরি ছাড়া ধূমপান ছাড়ার মতোই আয়ু বাড়ায়

স্ট্রেসফুল চাকরি ছাড়া ধূমপান ছাড়ার মতোই আয়ু বাড়ায়

চাকরি শুধু রুটি-রুজির উৎস নয়, এটি সামাজিক পরিচয়েরও গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। আমরা নাম জানার পর পরেই সাধারণত জিজ্ঞেস করি, ‘আপনি কী করেন?’ কিন্তু সেই পেশাটাই যদি আমাদের শরীর ও মনকে ধ্বংস করতে থাকে?

Advertisement

গবেষণা বলছে, অত্যধিক চাপযুক্ত ও বিষাক্ত আফিস কালচার এক সময় শরীর ও মনকে এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে যে তা ধীরে ধীরে মৃত্যু পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।

গবেষণার ভয়াবহ চিত্র

স্ট্যানফোর্ড গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব বিজনেস থেকে প্রকাশিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই কর্মক্ষেত্র সম্পর্কিত বিষাক্ত পরিস্থিতির কারণে প্রতি বছর প্রায় ১,২০,০০০ জন মানুষের মৃত্যু ঘটে এবং এটি স্বাস্থ্যসেবার বার্ষিক খরচের পাঁচ থেকে আট শতাংশের জন্য দায়ী।

এত মৃত্যু কীভাবে ঘটছে? এর জন্য প্রধানত দুটি বিষয় দায়ী–

১. ব্যক্তিগত পরিবেশ: সহকর্মীদের আচরণ, পারস্পরিক সম্পর্ক, কর্মস্থলের ভেতরে সংঘর্ষ, উপহাস বা মানসিক নিপীড়ন।

Advertisement

২. প্রাতিষ্ঠানিক পরিবেশ: কোম্পানির সংস্কৃতি, নিয়মনীতি, অতিরিক্ত সময় কাজের চাপ এবং স্বাধীনতার অভাব।

স্বাস্থ্য ঝুঁকি কেমন?

>> দীর্ঘ সময় কাজ করলে রক্তচাপ বাড়ে, যা থেকে হৃদরোগ, স্ট্রোকের ঝুঁকি তৈরি হয়।

>> মানসিক চাপ এবং ডিপ্রেশনের কারণে ধূমপান, মদ্যপান বা অতিরিক্ত খাওয়ার অভ্যাস তৈরি হয়।

>> স্ট্রেস হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে, বিশেষ করে কর্টিসল, যা স্নায়ুতন্ত্রকে অস্থির করে তোলে।

Advertisement

>> ধীরে ধীরে কর্মীর মধ্যে উৎপাদনশীলতা কমে, কর্মজীবনের প্রতি আগ্রহ হারায়, এবং কর্মক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

তাহলে চাকরি ছাড়াই কি সমাধান?

গবেষকরা বলছেন, চাপযুক্ত কাজ ছেড়ে দিলে শরীর ও মন উভয়ই দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে ওঠে, একে তারা তুলনা করেছেন ধূমপান ছাড়ার মতো উপকারী একটি পদক্ষেপ হিসেবে। গবেষণা বলছে এতে জীবনযাপনের মান বাড়ে ও আয়ু দীর্ঘ হয়।

তবু কেন মানুষ টক্সিক চাকরি আঁকড়ে ধরে রাখে?

১. অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা: ভালো বেতন থাকলে অনেকে মুখ বুজে এমন কর্মক্ষেত্র সহ্য করেন।

২. ভবিষ্যতের স্বপ্ন: কেউ কেউ কাজটিকে একটি ধাপ মনে করে ভবিষ্যতের ভালো চাকরির আশায় বর্তমান কষ্ট সহ্য করে।

নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিদের কী করণীয়?

স্ট্যানফোর্ডের অধ্যাপক জেফ্রি ফেফার বলেন, ‘কোনো কোনো সিইও-কে একদিন হত্যা-অভিযোগে অভিযুক্ত করা উচিত, যদি তারা কর্মীদের জীবনের এতটা ক্ষতি করে।’

তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানগুলো মনে করে কর্মীদের চাপ দিলে তাদের কর্মক্ষমতা বাড়বে। বাস্তবে এর উল্টো ঘটে – কর্মীরা বার্নআউট হয়ে যান ও তাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। এতে সংস্থার সুনাম নষ্ট হয়ে এবং প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

সমাধান কী?

>> কোম্পানিগুলোর উচিত কর্মঘণ্টা ও কাজের চাপের ভারসাম্য রক্ষা নিয়ে নীতিমালা তৈরি করা।

>> কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো।

>> ‘হাসল কালচার বা ‘চব্বিশ ঘণ্টা ব্যস্ত থাকা মানেই সফলতা’ – এই ভ্রান্ত ধারণা বদলানো।

স্ট্রেসফুল চাকরি ধীরে ধীরে শুধু আপনার শরীর নয়, আপনার ব্যক্তিত্ব, সম্পর্ক ও ভবিষ্যতকেও শেষ করে দিতে পারে। তাই সময় থাকতেই নিজেকে প্রশ্ন করুন – এই কাজ কি আমাকে গড়ছে, না ধ্বংস করছে?

সূত্র: টাইমস্ অব ইন্ডিয়া

এএমপি/এমএস