লাইফস্টাইল

নখ কামড়ানো কীসের লক্ষণ

নখ কামড়ানো কীসের লক্ষণ

দাঁত দিয়ে অনবরত নখ কামড়ানো– আমরা সবাই এমন কাউকে না কাউকে চিনি যারা এ কাজটি করেন। হতে পারে আপনিও তাদেরই একজন। কিন্তু আপনি কি জানেন এর কারণ কী?

Advertisement

আমরা প্রায় সবাই ছোটবেলায় কখনো না কখনো এই অভ্যাসে পড়েছি। কেউ কেউ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটা ছাড়তে পারলেও, অনেকেই প্রাপ্ত বয়সেও এ অভ্যাস থেকে বের হতে পারেন না। চিকিৎসা বিজ্ঞানে একে বলে ওনিকোফেজিয়া।

বিশ্বের প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে এ অভ্যাসে পড়েন। বাংলাদেশেও এ হার কম নয়। শুনতে নিরীহ একটা অভ্যাস মনে হলেও, আসলে এটি দেহের ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।

কখন শুরু হয় এই অভ্যাস

Advertisement

সাধারণত শিশুদের এই অভ্যাস দেখা যায় ৩-৪ বছর বয়সের পর। যারা ছোটবেলায় আঙুল চোষার অভ্যাসে অভ্যস্ত ছিল, বড় হয়ে তারা অনেকেই নখ কামড়ানো শুরু করেন।

অনেক সময় কিশোর বয়সে বা প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায়ও এই অভ্যাস তৈরি হয়, বিশেষ করে যখন কেউ চাপের মধ্যে থাকে, অবসরে থাকে বা বিরক্ত অনুভব করে। আবার কখনো কখনো এটি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও হতে পারে।

কেন মানুষ নখ কামড়ায়

>> নখ কামড়ানো একধরনের কোপিং মেকানিজম, অর্থাৎ মানসিক চাপ, উদ্বেগ বা একঘেয়েমি থেকে সাময়িক মুক্তি পেতে মানুষ এটা করে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, এটি অনেক সময় মনস্তাত্ত্বিক সমস্যার সঙ্গেও সম্পর্কিত।

Advertisement

>> উদ্বেগ, মনোযোগ সংক্রান্ত সমস্যা– এডিএইচডি, বিছানা ভেজানো, বিরোধী আচরণজনিত সমস্যা, বিচ্ছিন্নতার ভয় ও টিক ডিসঅর্ডার। এগুলো সবই এমন এক ধরনের সমস্যা যেটায় মানুষ কোনো একটা দৈহিক আচরণ বারবার করতে থাকে নিজের অজান্তেই। এগুলোকে বডি-ফোকাস্ড রিপেটিটিভ বিহেভিয়র বা বিএফআরবি বলে– যেমন, নখ কামড়ানো, চুল ছেঁড়া, বা ত্বক খোঁচানো।

>> এই সমস্যাগুলো অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার বা ওসিডি-এর সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত হতে পারে। অনেক সময় এগুলো পারিবারিক জিনগত প্রভাব থেকেও আসে।

নখ কামড়ালে ক্ষতি কী?

নখ কামড়ানোর কিছু তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হতে পারে-

১. দাঁতের গঠন নষ্ট হওয়া।

২. নখের নিচে ছত্রাক সংক্রমণ।

৩. মুখে বারবার আঙুল দেওয়ায় হাত থেকে ব্যাকটেরিয়া শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ হতে পারে।

৪. চোয়ালে ব্যথা, মুখের ভিতরে কাটা বা ফোলা।

৫. আঙুলের চামড়া কেটে যাওয়া ও সেখান থেকে ইনফেকশন।

৬. নখের পাশের চামড়ায় পুঁজ হওয়া।

৭. একটা ভয়ংকর বিষয় হলো, কাটা নখ খেয়ে ফেললে তা পেটে গিয়ে ইনটেস্টাইনাল ইনফেকশন বা পাচনতন্ত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে।

কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া দরকার?

হঠাৎ অল্প নখ কামড়ানো খুব বড় কোনো সমস্যা না। কিন্তু নিচের লক্ষণগুলো থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত-

>> বারবার ইনগ্রোন নখ হওয়া।

>> নখের রং বদলে যাওয়া।

>> নখ চামড়া থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া।

>> আঙুলে ফোলা, ব্যথা বা রক্তপাত।

>> নখের আসেপাশে ঘন ঘন সংক্রমণ

যদি নখ কামড়ানো বন্ধ করার চেষ্টা করেও বন্ধ না হয়, অথবা অভ্যাসটি আপনার দৈনন্দিন কাজ-কর্মে বাধা দেয়, তাহলে বুঝতে হবে সমস্যাটি সাধারণ নয় – এর পেছনে মানসিক কারণ থাকতে পারে।

কীভাবে এই অভ্যাস ছাড়বেন?

চাইলে অনেকেই নখ কামড়ানোর অভ্যাস ধীরে ধীরে ছেড়ে দিতে পারেন। শুধু সঠিক পদ্ধতিতে চেষ্টা করতে হবে-

১. ট্রিগার চিনে ফেলুন

আপনি কখন বেশি নখ কামড়ান, সেটা চিহ্নিত করে ফেলুন। সাধারণত তিনটি কারণে মানুষ এটা করে-

>> চাপ বা উদ্বেগে থাকলে,

>> বিরক্ত বা একঘেয়ে লাগলে,

>> খুব মনোযোগ দিয়ে কোনো কাজ করলে।

আপনার নিজের আচরণ পর্যবেক্ষণ করুন – কখন আপনি বেশি নখ কামড়াতে শুরু করেন?

২. বিকল্প খুঁজুন

যখনই নখ কামড়ানোর ইচ্ছা হবে, তার বদলে অন্য কিছু করুন। যেমন- স্ট্রেস বল চাপা, ফিজেট টয় ঘোরানো, চুইং গাম চিবানো ইত্যাদি।

৩. প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিন

নখ কামড়ানো কমাতে কিছু জিনিস সহায়তা করতে পারে। যেমন-

>> নখ ছোট করে কেটে রাখা।

>> তেতো স্বাদের নেল পলিশ লাগানো।

>> গ্লাভস পরা বা নখ ঢাকার মতো কোনো কভার ব্যবহার করা।

>> ঘুমানোর সময় মাউথ গার্ড বা বাইট রিটেনার ব্যবহার করা।

৪. চিকিৎসকের সাহায্য নিন

নিজে নিজে চেষ্টা করেও যদি বন্ধ করতে না পারেন, তাহলে চিকিৎসকের সাহায্য নিন। বাংলাদেশে বর্তমানে অনেক মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ও কাউন্সেলিং সেন্টার এসব থেরাপি দিয়ে থাকেন।

নখ কামড়ানো ছোট একটা অভ্যাস মনে হলেও এর পেছনে বড় মানসিক বা শারীরিক ইঙ্গিত লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই নিজেকে বুঝুন, ধৈর্য ধরুন। একদিনে অভ্যাস ছাড়ানো যাবে না, তবে ধাপে ধাপে উন্নতি আসবে।

সূত্র: ইউসিএলএ হেলথ্, ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক, মায়োক্লিনিক, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

এএমপি/এএসএম