জাতীয়

তথ্য পেতে বাধা দেওয়ার শাস্তি বাড়ছে ৫ গুণ

তথ্য পেতে বাধা দেওয়ার শাস্তি বাড়ছে ৫ গুণ

‘তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯’ সংশোধন করতে যাচ্ছে সরকার। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সরকারি তথ্য প্রাপ্তি আরও সহজ ও তথ্য প্রবাহ অবাধ করতে এ উদ্যোগ নিয়েছে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়। সংশোধিত খসড়া অনুযায়ী, তথ্য প্রাপ্তির বাধা সৃষ্টির শাস্তি বেড়ে পাঁচগুণ হচ্ছে। তথ্য প্রবাহ আরও অবাধ করতে আইনের মোট চারটি ধারায় সংশোধন আনা হচ্ছে।

Advertisement

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন গত ৫ ফেব্রুয়ারি তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, নাগরিকরা যাতে সহজে ও অবাধে চাহিদা মতো সরকারি সেবা সংক্রান্ত তথ্য পেতে পারে, সেজন্য তথ্য অধিকার আইন পর্যালোচনা ও সংশোধন করা যেতে পারে।

একই সঙ্গে কমিটি প্রতিবেদনের সঙ্গে আইন সংশোধনের একটি প্রস্তাবও যুক্ত করে দেয়। সেটির আলোকে সংশোধিত তথ্য অধিকার আইনের খসড়া করে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব খাদিজা তাহেরা ববি জাগো নিউজকে বলেন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন তথ্য অধিকার আইন পর্যালোচনা ও সংশোধনের সুপারিশ করেছে। বিভিন্ন ধারায় কী কী সংশোধন আনা যেতে পারে, সেই বিষয়েও কমিশন প্রস্তাবনা দিয়েছে। সেই আলোকে তথ্য অধিকার আইন পর্যালোচনা ও সংশোধনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ তথ্য অধিকার আইনে সাংবাদিকদের অনীহা, খোদ কমিশনের ১২ ‘প্রতিবন্ধকতা’ প্রতিটি নাগরিকের তথ্য অধিকার আইন জানা প্রয়োজন

তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মতামত গ্রহণ ও আন্তমন্ত্রণালয় সভা করা হয়েছে। এখন সংশোধিত খসড়ার বিষয়ে মতামত নেওয়া হচ্ছে। আগামী ৩১ জুলাই পর্যন্ত মতামত নেওয়া হবে। এরপর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে শিগগিরই আইনটি সংশোধন করা হবে।’

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে জানা গেছে, ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইনের ৫ (তথ্য সংরক্ষণ), ৬ (তথ্য প্রকাশ), ৭ (কতিপয় তথ্য প্রকাশ বা প্রদান বাধ্যতামূলক নয়) ও ২৭ (জরিমানা, ইত্যাদি) ধারায় সংশোধন আনা হচ্ছে।

বর্তমান আইনে তথ্য প্রাপ্তির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির শাস্তির বিষয়ে (২৭ ধারা) বলা হয়েছে, কেউ তথ্য প্রাপ্তির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে এমন কাজের (তথ্য প্রাপ্তিতে বাধা) তারিখ থেকে তথ্য সরবরাহের তারিখ পর্যন্ত প্রতি দিনের জন্য ৫০ টাকা হারে জরিমানা আরোপ করতে পারবে তথ্য কমিশন। তবে এ জরিমানা কোনক্রমেই ৫ হাজার টাকার বেশি হবে না।

কেউ তথ্য প্রাপ্তির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে এমন কাজের (তথ্য প্রাপ্তিতে বাধা) তারিখ থেকে তথ্য সরবরাহের তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনের জন্য ২৫০ টাকা হারে জরিমানা আরোপ করতে পারবে তথ্য কমিশন। তবে এ জরিমানা কোনোক্রমেই ২৫ হাজার টাকার বেশি হবে না। অর্থাৎ শাস্তি বাড়ছে পাঁচগুণ।

Advertisement

সংশোধিত খসড়া আইনে বলা হয়েছে, কেউ তথ্য প্রাপ্তির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে এমন কাজের (তথ্য প্রাপ্তিতে বাধা) তারিখ থেকে তথ্য সরবরাহের তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনের জন্য ২৫০ টাকা হারে জরিমানা আরোপ করতে পারবে তথ্য কমিশন। তবে এ জরিমানা কোনোক্রমেই ২৫ হাজার টাকার বেশি হবে না। অর্থাৎ শাস্তি বাড়ছে পাঁচগুণ।

আরও পড়ুন ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ আইন নিয়ে কাজ করছে সরকার জনগণ চাইলে তাদের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে হবে সেবাপ্রাপ্তিতে এগিয়ে সাধারণ মানুষ, দুর্নীতিতে লাগাম

যদি প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, অপকর্ম বা দুর্নীতি আড়াল করার জন্য তথ্য প্রদানে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে তবে জরিমানা আরোপ বাধ্যতামূলক হবে বলেও খসড়ায় উল্লেখ করা হয়েছে।

আইনের সংশোধিত ৫ ধারায় বলা হয়েছে, এই আইনের অধীনে তথ্য অধিকার নিশ্চিত করার জন্য, প্রতিটি কর্তৃপক্ষ সব তথ্যের ক্যাটালগ এবং সূচি প্রস্তুত করবে এবং যথাযথ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করবে।

এই আইনের উদ্দেশ্য সাধনে রেকর্ডস বলতে বুঝাবে যে কোনো নথি, পান্ডুলিপি এবং ফাইল; যেকোনো মাইক্রোফিল্ম, মাইক্রোফিচ এবং নথির ফ্যাক্সিমাইল কপি; এই ধরনের মাইক্রোফিল্মে স্থাপিত চিত্র বা চিত্রের যেকোনো প্রতিলিপি এবং কম্পিউটার বা অন্য কোনো ডিভাইস দ্বারা প্রস্তুতকৃত অন্য কোনো উপাদান।

এ ধারায় সংশোধন এনে আরও বলা হয়, প্রতিটি কর্তৃপক্ষ যুক্তিসঙ্গত সময়সীমার মধ্যে কম্পিউটারে সংরক্ষণের জন্য উপযুক্ত বলে মনে করা সব তথ্য কম্পিউটারে সংরক্ষণ করবে এবং তথ্যের প্রবেশযোগ্যতা সহজ করার জন্য একটি দেশব্যাপী নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তাদের সংযুক্ত করবে।

কর্তৃপক্ষকে তথ্য এবং রেকর্ডগুলো এমনভাবে সংরক্ষণ এবং সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে যাতে আইন দিয়ে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে আবেদনের জবাব দেওয়া সম্ভব হবে এবং অনুরোধ করা তথ্য সময় মতো পাওয়া যাবে।

প্রতিটি কর্তৃপক্ষ সব তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করবে। গৃহীত, সিদ্ধান্ত, সম্পাদিত বা প্রস্তাবিত কার্যধারা বা কার্যকলাপ প্রকাশ করতে হবে যাতে নাগরিকেরা সহজেই তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ পান।

নতুন ৬ ধারায় বলা হয়েছে, প্রতিটি কর্তৃপক্ষ সব তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করবে। গৃহীত, সিদ্ধান্ত, সম্পাদিত বা প্রস্তাবিত কার্যধারা বা কার্যকলাপ প্রকাশ করতে হবে যাতে নাগরিকেরা সহজেই তথ্য প্রাপ্তির সুযোগ পান।

কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য গোপন করবে না বা এর সহজলভ্যতাকে সীমাবদ্ধ করবে না এবং প্রকাশ করবে। এরমধ্যে রয়েছে প্রস্তাবিত বাজেট, প্রকৃত আয় ও ব্যয় এবং অন্যান্য আর্থিক তথ্য, সম্পূর্ণ অডিট রিপোর্ট এবং মূল্যায়ন; সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া, দরপত্র আবেদনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের মানদণ্ড এবং ফলাফল সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য; চুক্তির অনুলিপি, চুক্তির প্রতিবেদন এবং এ সংক্রান্ত সরকারি তহবিলের অন্যান্য ব্যয়।

আরও পড়ুন সরকারি সেবা নিয়ে অভিযোগ-দুর্নীতির তথ্য জানাতে নতুন ব্যবস্থা জনবল সংকটে বঞ্চিত হচ্ছেন অর্ধেক সেবাপ্রত্যাশী অনলাইন ভূমিসেবার আবেদন দাখিলে হচ্ছে ‘সহায়তা কেন্দ্র’

প্রতিটি সংস্থার জন্য বরাদ্দ করা বাজেট, পরিকল্পনা, প্রস্তাবিত ব্যয় এবং মঞ্জুর করা অর্থ বিতরণের বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।

আইনের ৭ ধারায় ‘কতিপয় তথ্য প্রকাশ বা প্রদান বাধ্যতামূলক নয়’ অংশে ২ উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। এ উপ-ধারায় জনস্বার্থ বিবেচনায় সরকারি কর্তৃপক্ষ কোনো কোনো ক্ষেত্রে তথ্য প্রবেশাধিকার অনুমতি দিতে পারবে সেই বিষয়ে অনেকগুলো বিষয় যুক্ত করা হয়েছে।

আরএমএম/এমএমএআর/এএসএম