মানুষ জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে শারীরিক, মানসিক কিংবা আর্থিক দুর্বলতা ও অসহায়ত্বে পড়তে পারে। তখন মনে হয়, যেন কেউ নেই সাহায্য করার মতো, কোনো পথ নেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার মতো। এ রকম অসহায়ত্ব ও দুর্বলতার মুহূর্তেই আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ, সাহায্য প্রার্থনা ও তাঁর সন্তুষ্টি কামনাই একজন মুমিনের বড় অবলম্বন।
Advertisement
যে কোনো রকম দুর্বলতা বা অসহায়ত্বে আমরা পড়তে পারি নবিজির (সা.) শেখানো এই দোয়াটি:
اللَّهُمَّ إنِّي ضَعيفٌ فقَوِّ في رضاكَ ضَعْفي وخُذْ إلى الخيرِ بناصِيَتي واجعلِ الإسلامَ مُنتَهى رِضائي اللَّهُمَّ إنِّي ضَعيفٌ فقَوِّني وإنِّي ذَليلٌ فأَعِزَّني وإنِّي فقيرٌ فارزُقني.
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি যইফুন ফাকাওয়ি ফি রিযাকা যু’ফী ওয়া খুয ইলাল খাইরি বিনাসিয়্যাতি ওয়াজআলাল-ইসলাামা মুনতাহা রিদাই আল্লাহুম্মা ইন্নি যাইফুন ফাকাওয়িনি ওয়া ইন্নি যালিলুন ফা আইজ্জ়ানি ওয়া ইন্নি ফাকিরুন ফারযুকনি।
Advertisement
অর্থ: হে আল্লাহ! আমি দুর্বল তাই আপনার সন্তুষ্টির জন্য আমার দুর্বলতাকে শক্তিতে পরিণত করে দিন। আমার কপালের চুল ধরে আমাকে কল্যাণের পথে পরিচালিত করুন। ইসলামকে আমার সন্তুষ্টির চূড়ান্ত সীমা বানিয়ে দিন। হে আল্লাহ! আমি দুর্বল, আমাকে শক্তি দান করুন। আমি হীন, আমাকে সম্মান দান করুন। আমি দরিদ্র, আমাকে রিজিক দান করুন। (মুসতাদরাকে হাকেম)
এই দোয়াটিতে আল্লাহর কাছে বান্দার দুর্বলতা ও অসহায়ত্ব তুলে ধরা হয়েছে এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাআলার কাছে দুনিয়ার প্রধান তিনটি নেয়ামত—শারীরিক ও মানসিক শক্তি, সম্মান ও সম্পদ চাওয়া হয়েছে। এ দোয়াটি পাঠ করলে আশা করা যায় আল্লাহ তাআলা আমাদের অসহায়ত্ব দূর করবেন, আমাদের শক্তি, মর্যাদা ও সম্পদে উন্নত করবেন।
আল্লাহর কাছে বেশি বেশি দোয়া করা, প্রার্থনা করা মুমিনের বৈশিষ্ট্য। দোয়ার মাধ্যমে যেমন আল্লাহর আনুগত্য ও রহমত লাভ করা যায়, আল্লাহর আজাব থেকে বাঁচা যায়, শয়তানের ধোঁকা ও দুনিয়াবি বিপদ-আপদ থেকে বেঁচে থাকা যায়, একইভাবে দোয়ার মাধ্যমে ইমানও প্রকাশ পায়। আল্লাহর প্রতি বান্দার ভরসা ও নির্ভরতা প্রকাশ পায়। বান্দার বিনয় ও অহংকারহীনতা প্রকাশ পায়।
আল্লাহ তাআলা কোরআনে বলেছেন, তোমাদের রব বলেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া কর, আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। যারা অহংকারবশত আমার ইবাদত হতে বিমুখ তারা অবশ্যই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে। (সুরা গাফির: ৬০)
Advertisement
ইমাম শাওকানি (রহ.) বলেন, দোয়া না করা আল্লাহর সঙ্গে অহংকার করার শামিল। এ অহংকারের চেয়ে নিকৃষ্ট কোনো অহংকার হতে পারে না। কীভাবে মানুষ আল্লাহর সঙ্গে অহংকার করতে পারে যে আল্লাহ তাকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে সব ধরনের জীবনোপকরণ দিয়েছেন, যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান এবং ভাল-মন্দের প্রতিদান দিয়ে থাকেন! (তুহফাতুজ জাকিরীন)
মুমিন আল্লাহ তাআলার কাছে যে কল্যাণকর দোয়া করে, তা কখনও ব্যর্থ হয় না। দোয়ার বদলা আল্লাহ তাআলা অবশ্যই দান করেন। তবে বিভিন্ন সময় দোয়ার প্রতিদান বিভিন্ন রকম হয়।
আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, যখন কোনো মুমিন ব্যক্তি এমন দোয়া করে যে দোয়াতে কোনো পাপ ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার বিষয় নেই, তাহলে আল্লাহ তিন পদ্ধতির কোনো এক পদ্ধতিতে তার দোয়া কবুল করে নেন; হয়তো যে দোয়া সে করেছে তা ওইভাবেই কবুল করেন, তার দোয়ার প্রতিদান আখেরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন অথবা এ দোয়ার মাধ্যমে তার ওপর আগত কোনো বিপদ তিনি দূর করে দেন।
এ কথা শুনে সাহাবিরা বললেন, আমরা তাহলে অধিক পরিমাণে দোয়া করতে থাকবো। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, তোমরা যত বেশি দোয়াই করবে আল্লাহ তার চেয়ে অনেক বেশি কবুল করতে পারেন। (বুখারি ফিল আদাবিল মুফরাদ)
ওএফএফ/এমএস