ধর্ম

যে দোয়ায় রোগমুক্ত হয়েছিলেন নবি আইয়ুব (আ.)

যে দোয়ায় রোগমুক্ত হয়েছিলেন নবি আইয়ুব (আ.)

আল্লাহ নবি আইয়ুব (আ.) ছিলেন হজরত ইবরাহিমের (আ.) ছেলে হজরত ইসহাকের (আ.) বংশধর। কোরআনের প্রখ্যাত ব্যাখ্যাকার ও ঐতিহাসিক ইবনে কাসিরের (রহ.) বর্ণনা অনুযায়ী তিনি ছিলেন নবি ইসহাকের (আ.) ছেলে নবি ইয়াকুবের জমজ ভাই ঈছের প্রপৌত্র। আর তার স্ত্রী ছিলেন নবি ইয়াকুবের (আ.) ছেলে নবি ইউসুফের (আ.) পৌত্রী ‘লাইয়া’ বিনতে ইফরাঈম ইবনে ইউসুফ।

Advertisement

অধিকাংশ বর্ণনা অনুযায়ী তিনি নবি হিসেবে প্রেরিত হয়েছিলেন হজরত ইউসুফ (আ.) ও হজরত মুসার (আ.) মাঝামাঝি সময়ে।

আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহে জীবনের প্রথম দিকে আইয়ুব (আ.) ছিলেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে পরিপূর্ণ একজন মানুষ। তারপর জীবনের এক পর্যায়ে আল্লাহ তাআলা তাকে পরীক্ষায় ফেলেন। তিনি তার ধন-সম্পদ হারান, সন্তানদের হারান এবং গুরুতর অসুস্থতায় আক্রান্ত হন। কিন্তু তিনি আল্লাহ তাআলার রহমতের আশা, আল্লাহ তাআলার ওপর ভরসা ও ধৈর্য হারাননি। বরং তিনি আল্লাহ তাআলার কাছে অত্যন্ত বিনয়ী, নমনীয় ও সুন্দর ভাষায় দোয়া করেন। তার দোয়াটি পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা তুলে ধরেছেন। দোয়াটি হলো,

انِّیۡ مَسَّنِیَ الضُّرُّ وَ اَنۡتَ اَرۡحَمُ الرّٰحِمِیۡنَ

Advertisement

উচ্চারণ: ইন্নী মাসসানিয়ায যুররু ওয়া আনতা আরহামুর রাহিমীন।

অর্থ: আমি দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু! (সুরা আম্বিয়া: ৮৩)

দীর্ঘ দিনের অসুস্থতা ও দুঃখ-কষ্টের পরও তার দোয়ায় আল্লাহর প্রতি কোনো অভিযোগের সুর ছিল না। এমন কি দোয়ায় কোনো দাবিও নেই। তিনি শুধু বলেছেন, হে আল্লাহ আপনি তো আমার অবস্থা দেখছেন আর আপনি শ্রেষ্ঠ দয়ালু!

তার এই দোয়া আল্লাহর দরবারে কবুল হয়। আল্লাহ তাআলা তার ওপর সন্তুষ্ট হন এবং আবার তাকে সুস্থতা, পরিবার ও সম্পদ দান করেন।

Advertisement

পবিত্র কোরআনে সুরা আম্বিয়ায় আল্লাহ তাআলা বলেন, স্মরণ করুন আইয়ুবের কথা, যখন তিনি তার পালনকর্তাকে ডেকে বলেছিলেন, আমি দুঃখকষ্টে পতিত হয়েছি আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু। তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম। আর তার যত দুঃখ-কষ্ট ছিল তা দূর করে দিলাম এবং তার পরিবার-পরিজন তাকে দিয়ে দিলাম। আর তাদের সাথে তাদের মত আরো দিলাম আমার পক্ষ থেকে রহমত এবং ইবাদাতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ। (সুরা আম্বিয়া: ৮৩, ৮৪)

ছবি: সংগৃহীত

সুরা সোয়াদে আল্লাহ তাআলা বলেন, আর স্মরণ কর আমার বান্দা আইয়ুবকে, যখন সে তার রবকে ডেকে বলেছিল, শয়তান তো আমাকে কষ্ট ও আজাবে ফেলেছে। (অর্থাৎ আমার ধৈর্যচ্যুতি ঘটিয়ে আমাকে আল্লাহর অকৃতজ্ঞ বান্দা বানানোর জন্য কুমন্ত্রণা দিয়ে চলেছে) (আমি বললাম), তুমি তোমার পা দিয়ে ভূমিতে আঘাত কর, এ হচ্ছে গোসলের সুশীতল পানি আর পানীয়। আর আমার পক্ষ থেকে রহমতস্বরূপ ও বুদ্ধিমানদের জন্য উপদেশস্বরূপ আমি তাকে দান করলাম তার পরিবার-পরিজন ও তাদের সাথে তাদের অনুরূপ অনেককে। (সুরা সোয়াদ: ৪১-৪৩)

আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহর নবি আইয়ুব (আ.) ১৮ বছর রোগ-ব্যাধিতে ভুগেছিলেন। এ সময় তার আত্মীয়-স্বজনসহ সবাই তাঁকে পরিত্যাগ করেছিল, শুধু দুই জন ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছাড়া। তারা প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় তার খোঁজ নিতে আসত। একদিন তাদের একজন অন্যজনকে বলল, তুমি জানো, আল্লাহর কসম! আইয়ুব অবশ্যই এমন কোনো পাপ করেছেন, যা দুনিয়ার আর কেউ করেনি। অপরজন জিজ্ঞাসা করল, তুমি কেন এমন বলছ? সে বলল, দেখো, ১৮ বছর ধরে আল্লাহ তাঁর প্রতি করুণা করেননি, রোগ দূর করেননি।

পরে তারা যখন আইয়ুবের (আ.) কাছে গেল, তখন এক বন্ধু তা বলেই ফেলল। তখন আইয়ুব (আ.) বললেন, তুমি কী বলছ, আমি জানি না। তবে আল্লাহ জানেন, আমি যখন দুই ব্যক্তিকে আল্লাহর নামে শপথ করে ঝগড়া করতে দেখতাম, তখন আমি ঘরে ফিরে তাদের পক্ষ থেকে কাফফারা দিতাম—এই ভয়ে যে, তারা আল্লাহর নাম সত্য ছাড়া অন্য কোনো ক্ষেত্রে নিয়েছে কি না। (অর্থাৎ তিনি বলতে চেয়েছেন, তিনি সব সময় আল্লাহ তাআলাকে সন্তুষ্ট করার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন এবং তিনি কোনো বড় পাপ করেছেন বলে তারা যে ধারণা করছে তা সত্য নয়।)

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, আইয়ুব (আ.) প্রয়োজন পূরণের জন্য বাইরে যেতেন। প্রয়োজন পূরণ শেষে তার স্ত্রী তার হাত ধরে তাকে ঘরে ফিরিয়ে আনতেন। একদিন তিনি দেরি করলেন। আল্লাহ তাআলা তার কাছে ওহি পাঠালেন, আপনার পা দিয়ে মাটিতে আঘাত করুন, এই পানি দিয়ে গোসল করুন ও তা পান করুন।

স্ত্রী তার দেরি দেখে খুঁজতে বের হলেন। তিনি যখন ফিরে এলেন, তখন আল্লাহ তাআলা তার সমস্ত কষ্ট দূর করে দিয়েছেন এবং তিনি আগের চেয়েও সুন্দর ও সুস্থ হয়ে গেছেন। স্ত্রী তাকে দেখে বললেন, আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন! আপনি কী ওই নবিকে দেখেছেন, যিনি এত দিন রোগে ভুগছিলেন? আল্লাহর কসম, সুস্থ অবস্থায় তিনি আপনার মতোই ছিলেন। তখন আইয়ুব (আ.) বললেন, আমিই সেই নবি।

তার ছিল দুটি গুদামঘর—একটি গমের জন্য, একটি যবের জন্য। আল্লাহ তাআলা দুটি মেঘ পাঠালেন। একটি গমের গুদামের উপর বর্ষিত হয়ে সেটিকে স্বর্ণে পরিপূর্ণ করে দিলো, আর অন্যটি যবের গুদামের উপর বর্ষিত হয়ে সেটিকেও পূর্ণ করে দিলো। (মুসনাদে বাযযার)

ওএফএফ/জেআইএম