পঞ্চম বর্ষে পা রাখলো বাংলা স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম চরকি। এ উপলক্ষ্যে সম্প্রতি জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী রেদওয়ান রনি। গত চার বছরের অর্জন, অগ্রগতি ও ভবিষ্যত পরিকল্পনার নানান কিছু ভাগাভাগি করেন এই চলচ্চিত্র নির্মাতা।
Advertisement
জাগো নিউজ: চার বছরে চরকির প্রধান তিন সাফল্য কী? করতে চেয়েও পারেননি এমন কী কী আছে যা ভবিষ্যতে করবেন বলে আশা রাখেন?
রেদওয়ান রনি: চরকির প্রধান তিন সাফল্যের প্রথমটিই হলো একটি প্রফেশনাল ইন্ডাস্ট্রি গ্রো করার পথে এগিয়ে যাওয়া। যেখানে প্রযোজক, নির্মাতা, শিল্পীরা থাকবেন একটা পেশাদার আচরণ ও মানসিকতায়। প্রজেক্ট পিচ, প্রি-প্রোডাকশন, প্রোডাকশন, পোস্ট-প্রোডাকশন এবং ডিস্ট্রিবিউশন হবে আন্তর্জাতিক ফরমেটে। শিল্পী-কলাকুশলীদের ধন্যবাদ, তাদের সহযোগিতায় সেটা করতে পেরেছি।
দ্বিতীয়ত, দর্শকরা যেন একটি কনটেন্টকে রেসপেক্ট করে দর্শনীর মাধ্যমে দেখেন, সেই পরিবেশ তৈরি করাটাও আমাদের সাফল্য হিসেবে দেখতে চাই।
Advertisement
তৃতীয়ত, ওটিটি এবং সিনেমা হল একসঙ্গে কাজ করার ফাংশন তৈরি করা। এটা কনটেন্টের বাজার আরও বড় করেছে এবং দেশ-বিদেশের দর্শকরা প্রেক্ষাগৃহ-ওটিটি দুই জায়গাতেই কনটেন্ট দেখছে।
সর্বপরি, চরকি এই চার বছরে বাংলাদেশের কনটেন্টের রাজধানীতে পরিণত হয়েছে। আশা করছি এক সময় চরকি বাংলা ভাষাভাষী দর্শকদের জন্য কনটেন্টের রাজধানী হয়ে যাবে।
জাগো নিউজ: চরকি হয়তো তার মতো করে ভালো করছে। কিন্তু ‘থ্রি ইডিয়টস’, ‘টুয়েলভথ ফেল’ বা ‘প্রাক্তণ’-এর মতো আলোচিত, দর্শকনন্দিত সিনেমা করতে পারলো না কেন?
রনি: এই তুলনাটা আমি করতে চাই না। ভারতীয় যে সিনেমাগুলোর নাম আপনি বললেন, সেগুলো তাদের দেশের নির্মাণ-সংশ্লিষ্টদের ভাবনায় তাদের দর্শকদের জন্য বানানো, হয়তো আমাদেরও ভালো লেগেছে। কিন্তু আমি বা আমরা ভাবতে চাই আমাদের মতো করে, আমাদের দেশের মতো করে। সেখানে এমন হতে পারে, আমাদের কনটেন্ট দেখে তারা উৎসাহী হয়েছেন। আমি বলব, ‘উৎসব’, ‘৩৬-২৪-৩৬’, ‘সামথিং লাইক অ্যান অটোবায়োগ্রাফি’, ‘মনোগামী’, ‘কাছের মানুষ দূরে থুইয়া’, ‘ফরগেট মি নট’ দেখলে আমাদের ভাবনাটা বোঝা যাবে।
Advertisement
জাগো নিউজ: সিনেমা নিয়ে চরকি কাজ করছে। সিনেমা হল নিয়ে কি তাদের কিছু করার পরিকল্পনা আছে? নাকি তারা সবসময় সিনেমা হল ব্যাপারটিকে বসার ঘরের ভেতরে রাখতে চায়?
রনি: সিনেমা হল নিয়ে চরকির কিছু ভাবনা আছে। ধাপে ধাপে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।
আরও পড়ুন:চঞ্চলের সঙ্গে এক সিনেমায় আফরান নিশো‘উৎসব’ সিনেমার টিমকে যা বললেন ফারুকীজাগো নিউজ: চরকির জন্য যারা সিনেমা বা সিরিজ তৈরি করেন, তারা কি স্বাধীনভাবে নির্মাণ করতে পারছেন, নাকি বেশিরভাগ সময় ফরমায়েশি কাজ করছেন?
রনি: স্বাধীনভাবে কাজ করতে হলে উৎসবগুলোর জন্য সিনেমা নির্মাণ করতে হবে। এই জায়গায় ইনভেস্টমেন্ট আছে, সে কারণে নির্মাতাদের কিছু্ নিয়মের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে।
জাগো নিউজ: ইনভেস্টমেন্টের কথা বললেন, জানতে ইচ্ছে করছে, চার বছরে প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় কি সমান হয়েছে?
রনি: পরিকল্পনা ছিল পাঁচ বছরে চরকি ব্রেক ইভেন পয়েন্টে (আয়-ব্যয় সমান) পৌঁছাবে। কিন্তু তার আগেই চলতি বছরের ডিসেম্বরে আমরা অপারেশনাল ব্রেক ইভেন পয়েন্টে যাচ্ছি। তবে পুরো ইনভেস্টমেন্টের ব্রেক ইভেনে যেতে আরেকটু সময় লাগবে। অবশ্যই সেটা শতকোটির বেশি। আসলে এই সময়ে আমাদের যতটুকু প্রাপ্তি, তার চেয়ে বড় বিষয় চরকি একটা ইন্ডাস্ট্রি ক্রিয়েট করতে পেরেছে। আমি বিশ্বাস করি, চরকিতে যত জন নির্মাতা কাজ করছেন, প্রত্যেকে এখন ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যাটফর্মে কাজ করার যোগ্য। আমাদের বিশ্বাস আছে, ভবিষ্যতে আমরা আরো এগিয়ে যাবো। বড় কোনো প্ল্যাটফর্মে ব্যবসা করতে হলে সেখানে বিনিয়োগ এবং প্রফিটটা লম্বা প্রসেসের মধ্যদিয়ে আসে। তবে আমরা যে সম্ভাবনা তৈরি করেছি, সেটাই এখন পর্যন্ত বড় প্রাপ্তি। চরকি ১৯০টি দেশ থেকে দেখছেন দর্শক, ৩৬টি কারেন্সিতে পে করছেন। এগুলো বলতেও প্রাউড লাগে।
জাগো নিউজ: আপনাদের এখানে কাজ করছিলেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের একজন কনটেন্ট এক্সপার্ট। প্রতিষ্ঠান ব্রেক ইভেনে পৌঁছানোর আগেই তিনি, েহড অব কনটেন্ট অনিন্দ্য ব্যানার্জী, হঠাৎ চলে গেলেন কেন? তিনি কি ঢাকার কাউকে ট্রেনিং দিয়ে গেছেন?
রনি: চরকি একটি প্রগতিশীল প্রতিষ্ঠান। এখানে অনেকেই কাজ করবেন, ছেড়ে যাবেন। সেই স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই অনিন্দ্য ব্যানার্জী চরকির সঙ্গে নেই। কে জানে, আবার হয়তো ফিরতেও পারেন। তিনি যে কাজগুলো করতেন, সেই কাজগুলো কনটেন্ট টিমের অন্যরা করবেন। কনটেন্ট ক্রিয়েটিভ টিমের ভারপ্রাপ্ত লিড হিসেবে কাজ করছেন আল-আমিন হাসান নির্ঝর এবং কনটেন্ট অপারেশন অ্যান্ড কমার্শিয়াল লিড করছেন মাসুদুল আলম রিন্তু।
জাগো নিউজ: চার বছরে সিদ্ধান্ত গ্রহণে চরকিকে কোথায় কোথায় আপোস করতে হলো? রনি: ডিরেক্টর বা আর্টিস্ট-হিট কনটেন্ট দিলে সেটা বিবেচনা করে পরে আবারও সুযোগ দেয়া উচিত না। প্রতিটি কাজের অ্যাসেসমেন্ট ওই কাজকে কেন্দ্র করে করা উচিত ছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এসবে আমরা ছাড় দিয়েছি, এদিকটা আমাদের ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। এসব বিষয়ে আমরা আগামীতে সচেতন হচ্ছি। এছাড়া আগামীতে দর্শকদের আরও কাছাকাছি যাওয়া উচিত। আমরা দর্শকদের বিভিন্ন গল্প দেখার সুযোগ দিচ্ছি, কিন্তু দর্শকের কাছে গিয়ে জানতে চাইছি না যে, তারা কী দেখতে চান। এটা আমাদের লার্নিং।
জাগো নিউজ: এতদিন লোকে আপনাকে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে জানতো। এখন আপনি চরকির সিইও। ঘোষণা দেওয়া নতুন ছবি ‘দম’-এর ব্যাপারে অনেকের উচ্চাশা থাকবে। আপনি কি চাপ বোধ করছেন?
রনি: দর্শকের উচ্চাশা আছে, সেটা আমি বুঝতে পারছি। দর্শক-প্রত্যাশা আমার জন্য চাপ নয়। আমার চাপ, আমি যেটা করতে চাই সেটা পর্দায় নিয়ে আসা। সেটা নিয়ে আসতে পারলে, দর্শকেরও প্রত্যাশা পূরণ হবে।
এমআই/আরএমডি/জেআইএম