মওলবি আশরাফ
Advertisement
একবার কিছু মানুষ সাহাবি আবু জর গিফারির (রা)-এর সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন। এ সময় তারা লক্ষ করেন, আবু জর (রা.) আর তার গোলাম একই রকম জামা পরেছেন। প্রথম দেখায় কে মালিক আর কে গোলাম—আলাদা করে চেনা দায়।
এ ব্যাপারে তারা আবু জর গিফারিকে (রা) জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, একবার আমি আমার এই ভাইয়ের মায়ের কথা উল্লেখ করে তাকে তিরস্কার করেছিলাম। এরপর তিনি আল্লাহর রসুলের (সা.) দরবারে আমার নামে নালিশ করেন। আমি যখন রাসুলের (সা.) কাছে যাই, তিনি বললেন, হে আবু জর, তোমার মধ্যে এখনও জাহেলি যুগের স্বভাব আছে।
অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করার পরও ইসলামপূর্ব সময়ের মতো তুমি নিজের গোলামকে গালি-গালাজ করছো, তার ওপর জুলুম করছো। ইসলাম ভদ্রতা, শালীনতা ও ইনসাফ শিক্ষা দেয়। গালি-গালাজ জাহেলি যুগের স্বভাব, নিজের গোলামের ওপর জুলুমও জাহেলি যুগের স্বভাব।
Advertisement
আবু জর (রা.) বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! যে ব্যক্তি মানুষদেরকে গালি দেয় তার উত্তরে অন্যরাও তাকে তার বাবা-মাকে উল্লেখ করে গালি দেয়া স্বাভাবিক।
তার কথা শুনে রসুল (সা.) আবার বললেন, হে আবু জর, তোমার মধ্যে এখনও জাহেলি যুগের ধ্যান-ধারণা রয়ে গেছে।
অর্থাৎ কেউ গালি দিলে তাকে উত্তরে গালি দেওয়া যায় এই ধারণাটাও জাহেলি যুগের ধারণা। কোনো মুসলমানের জন্য গালির উত্তরেও গালি দেওয়া শোভনীয় না।
এরপর রাসুল (সা.) বললেন, তারা তোমাদের ভাই। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের অধীন করেছেন। তোমরা যা খাবে তাদেরকেও তা খাওয়াবে। তোমরা যেমন পোশাক পরবে তাদেরকে তা পরাবে। তোমরা তাদের ওপর এমন কোনো কাজ চাপিয়ে দেবে না, যা করতে তারা হিমশিম খেয়ে যায়। যদি তোমরা তাদেরকে কঠিন কোনো কাজ দাও, তাহলে সেই কাজে তাদের সাহায্যও করো। (সহিহ মুসলিম: ৪২০৫)
Advertisement
আল্লাহর রাসুলের (সা.) এই নির্দেশের কারণেই এরপর থেকে হজরত আবু জর গিফারি (রা) সব সময় নিজে যা খেতেন গোলামকে তা-ই খাওয়াতেন, নিজে যা পরতেন গোলামকে তা-ই পরাতেন।
এ ঘটনা থেকে আমরা বুঝতে পারি, গালি-গালাজ করা, মানুষকে অপমান-অপদস্ত করা জাহেলি স্বভাব। গালির উত্তরে গালি দেওয়াও জাহেলি স্বভাব। ইসলাম মানুষকে সংযম শেখায়, শালীনতা শেখায়। প্রতিপক্ষের ঘৃণার উত্তরেও সৌজন্য বজায় রাখার নির্দেশ দেয়।
আরেকটি শিক্ষা হলো, নিজের অধীনস্থ কর্মচারী বা কাজের লোকদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করতে হবে। তাদেরকে নিজের ভাই মনে করে সম্মানজনক আচরণ করতে হবে। মানুষের আসল মর্যাদা তার তাকওয়ায়, বিত্ত, দারিদ্র্য বা সামাজিক অবস্থানে নয়।
হজরত আবু জর গিফারি (রা) নবিজির (সা.) উত্তম উপদেশ সর্বান্তকরণে গ্রহণ করেছিলেন। তিনি তার ভুলের জন্য অনুতপ্ত হয়ে নিজেকে এমনভাবে সংশোধন করেছিলেন যে, পরবর্তীতে তার গোলাম আর তার মধ্যে পার্থক্য করা যেত না। তার কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করা ও নিজেকে সংশোধন করার শিক্ষাও আমরা পাই।
ওএফএফ/এমএস