ধর্ম

হামজার (রা.) হন্তারক ওয়াহশি যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন

হামজার (রা.) হন্তারক ওয়াহশি যেভাবে ইসলাম গ্রহণ করেন

ওয়াহশি ইবনে হারব ছিলেন মক্কার একজন কৃষ্ণাঙ্গ দাস। তার মনিবের নাম ছিল জুবায়ের ইবনে মুতইম । ওহুদের যুদ্ধে তিনি নবিজির (সা.) চাচা হামজা ইবনে আব্দুল মুত্তালিবকে (রা.) শহীদ করেছিলেন।

Advertisement

বদরের যুদ্ধে মক্কার উমাইয়া গোত্রের সর্দার উতবা ইবনে রাবিআ হজরত হামজার (রা.) সাথে দ্বন্দ্বযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে পরাজিত ও নিহত হয়েছিলেন। তাই ওহুদের যুদ্ধের আগে তার মেয়ে আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ বিনতে উতবা ওয়াহশিকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, ওয়াহশি যদি হজরত হামজাকে (রা.) হত্যা করতে পারেন, তাহলে তিনি ওয়াহশিকে দাসত্ব থেকে মুক্ত করে দেবেন। সেজন্যই ওয়াহশি ওহুদের যুদ্ধে বিশেষভাবে শুধু হজরত হামজাকেই (রা.) হত্যার জন্য অনুসরণ করতে থাকেন এবং এক পর্যায়ে তাকে হত্যা করতে সক্ষম হন।

ওহুদের যুদ্ধের পর ওয়াহশি দাসত্ব থেকে মুক্তি পান এবং স্বাধীন মানুষ হিসেবে মক্কায় বসবাস করতে থাকেন। মুসলমানদের মক্কা বিজয় করলে তিনি মক্কা থেকে পালিয়ে তায়েফে পালিয়ে যান। চাচার হত্যাকারী হওয়া সত্বেও অন্যান্য পলাতক কাফেরের মতো নবিজি (সা.) তাকেও ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দেন। ওয়াহশিকে নবিজির (সা.) ইসলামের দাওয়াত দেওয়া ও ওয়াহশির ইসলাম গ্রহণের ঘটনা হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের (রা.) সূত্রে বর্ণিত রয়েছে।

তাবরানি ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওয়াহশি ইবনে হারব, যিনি হজরত হামজাকে (রা.) শহীদ করেছিলেন, তাকে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিয়ে বার্তা পাঠালেন।

Advertisement

ওয়াহশি উত্তরে নবিজিকে (রা.) বললেন, আপনি তো বলেছেন যে, কেউ হত্যা করে, শিরক করে বা ব্যভিচার করে, সে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হবে, কিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং সে লাঞ্ছিত হয়ে চিরকাল জাহান্নামে থাকবে। আমি তো এসব কাজ করেছি। আমার জন্য কি কোনো পথ খোলা আছে?

ওয়াহশির প্রশ্নের উত্তরে আল্লাহ তাআলা কোরআনের এ আয়াত নাজিল করলেন,

إِلاَّ مَن تَابَ وَءامَنَ وَعَمِلَ عَمَلاً صَالِحاً فَأُوْلَئِكَ يُبَدّلُ اللَّهُ سَيّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُوراً رَّحِيماً

যে ব্যক্তি তওবা করে, ইমান আনে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদের মন্দ কাজগুলো পূণ্যে পরিবর্তন করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা ফুরকান: ৭০)

Advertisement

ওয়াহশি তখন বললেন, এখানে শর্ত অত্যন্ত কঠিন – 'তওবা করতে হবে, ঈমান আনতে হবে এবং সৎকর্ম করতে হবে'। আমি যদি এগুলো সব করতে না পারি?

এরপর আল্লাহ তাআলা নাজিল করলেন,

إِنَّ اللَّهَ لاَ يَغْفِرُ أَن يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَلِكَ لِمَن يَشَآء وَمَن يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَى إِثْماً عَظِيماً

নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক করার পাপ ক্ষমা করেন না। তিনি ক্ষমা করেন এ ছাড়া অন্যান্য পাপ, যার জন্য তিনি চান। আর যে আল্লাহর সাথে শরিক করে সে অবশ্যই মহাপাপ করে। (সুরা নিসা: ৪৮)

ওয়াহশি তখন বললেন, এখানেও আল্লাহর ইচ্ছার কথা বলা হয়েছে, আমি জানি না আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন কি না! এর চেয়ে আরও স্পষ্ট কোনো আশার বার্তা আছে?

এরপর আল্লাহ তাআলা নাজিল করলেন,

قُلْ ياعِبَادِىَ الَّذِينَ أَسْرَفُواْ عَلَى أَنفُسِهِمْ لاَ تَقْنَطُواْ مِن رَّحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعاً إِنَّهُ

হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করেন। তিনি অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সুরা জুমার: ৫৩)

এবার ওয়াহশি বললেন, হ্যাঁ, এখন আমি মুক্তির পথ দেখতে পাচ্ছি। এরপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করলেন।

ইসলাম গ্রহণের পর ওয়াহশি (রা.) আমৃত্যু ইসলামের ওপর অটল থাকেন এবং ইসলামের জন্য লড়াই করেন। ইসলামের পথে নিজেকে উৎসর্গ করে তিনি আগের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার চেষ্টা করেন। হজরত আবু বকরের (রা.) খেলাফতকালে ওয়াহশি মুসলমানদের পক্ষে ইয়ামামার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ওই যুদ্ধে মিথ্যা নবুয়্যতের দাবিদার ‍মুসায়লামা কাজজাবকে হত্যা করে তিনি যুদ্ধজয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।

ওএফএফ/এমএস