বিনোদন

এক সিনেমায় ১২৭টি কর্তনের নির্দেশ, বদলাতে হবে নামও

এক সিনেমায় ১২৭টি কর্তনের নির্দেশ, বদলাতে হবে নামও

ভারতের কেন্দ্রীয় সেন্সর বোর্ড (সিবিএফসি) দিলজিৎ দোসাঞ্জ অভিনীত ‘পাঞ্জাব ৯৫’ সিনেমার জন্য দিয়েছে অবিশ্বাস্য এক নির্দেশনা। সিনেমাটিতে ১২৭টি কর্তনের পরামর্শ দিয়েছে বোর্ড। এগুলো না কাটলে মিলবে না সেন্সর ছাড়পত্র! সিনেমার নাম পরিবর্তনেরও আদেশ এসেছে।

Advertisement

এসব নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিনেমাটির পরিচালক হানি ত্রেহান। তাঁর বক্তব্য, ‘সেন্সর বোর্ডকে যারা উদার ভাবে তাদের জন্য এই একটি উদাহরণই যথেষ্ট।’

‘পাঞ্জাব ৯৫’ তৈরি হয়েছে বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী জসবন্ত সিং খালরার জীবনের উপর ভিত্তি করে। ১৯৯০-এর দশকে পাঞ্জাবের হাজারো মানুষের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা তিনি সামনে এনেছিলেন। সংগ্রহ করেছিলেন ২৫ হাজারের বেশি নিখোঁজ মানুষের তথ্য যা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও আলোড়ন তোলে। সেই কাজের জন্যই তাকে অপহরণ ও পরবর্তীতে হত্যা করা হয়। তার সাহসী সংগ্রামের গল্পই তুলে ধরা হয়েছে সিনেমাটিতে।

প্রথমে সিনেমার নাম রাখা হয়েছিল ‘ঘালুঘারা’। সেন্সর বোর্ডের আপত্তিতে নাম বদলে রাখা হয় ‘পাঞ্জাব ৯৫’। এবার সেই নামেও আপত্তি জানিয়েছে বোর্ড। তাদের দাবি, ‘পাঞ্জাব’ শব্দটি নাম থেকে বাদ দিতে হবে। এমনকি সিনেমায় ‘পাঞ্জাব পুলিশ’ শব্দের পরিবর্তে শুধু ‘পুলিশ’ ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাদ দিতে বলা হয়েছে ইন্দিরা গান্ধীর নামও।

Advertisement

পরিচালক হানি ত্রেহান বলেন, ‘এতগুলো দৃশ্য বাদ দিতে হলে সিনেমার আসল বার্তাটাই হারিয়ে যাবে। আমি যদি জোর করে এসব পরিবর্তন করতে বাধ্য হই, তাহলে পরিচালক হিসেবে আমার নামও সিনেমা থেকে সরিয়ে নেব।’

তার দাবি, সিনেমাটি ইতিহাসকে বিকৃত না করে সততার সঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এই গল্প পাঞ্জাবের, তাহলে নাম থেকে পাঞ্জাব শব্দ সরাতে হবে কেন? আমরা আড়াই বছর ধরে মুক্তির অপেক্ষায় আছি। যদি শিল্পমাধ্যমে সত্য বলা না যায়, তাহলে গণতন্ত্র কোথায়?’

জসবন্ত সিং খালরার স্ত্রী পরমজিৎ কৌর খালরা জানিয়েছেন, ‘সিনেমাটি আমাদের অনুমতি নিয়েই তৈরি হয়েছে। এর প্রতিটি তথ্য প্রামাণ্য ও যথার্থ। তাই এ ধরনের সিনেমা কোনো কাটছাঁট ছাড়াই মুক্তি পাওয়া উচিত।’

Advertisement

পরিচালকের মতে, ‘পাঞ্জাব ৯৫’ কোনো রাজনৈতিক সিনেমা নয়, বরং একজন মানুষের ন্যায়বিচারের জন্য লড়াইয়ের দলিল। জসবন্ত সিং খালরা নিখোঁজ মানুষের হয়ে যেভাবে কথা বলেছিলেন। সেই গল্প নতুন প্রজন্মকে জানানোই সিনেমার মূল উদ্দেশ্য।

তবে এত কাটছাঁটের নির্দেশ ও নাম পরিবর্তনের চাপের মুখে সিনেমাটির ভবিষ্যৎ এখন অনিশ্চিত। নির্মাতা ও শিল্পমহলের একাংশ মনে করছেন, এটি শুধু একটি সিনেমা নয়, বরং ইতিহাস ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রশ্ন।

এলআইএ/জিকেএস