চলে গেলেন দক্ষিণী সিনেমার কিংবদন্তিতুল্য অভিনেত্রী বি সরোজা দেবী। আজ (১৪ জুলাই) সকালে বেঙ্গালুরুতে নিজের বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। জানা গেছে, তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন অসুস্থতায় ভুগছিলেন।
Advertisement
তারকা ও রাজনীতিক খুশবু সুন্দর তার এক্স-এ অভিনেত্রীর মৃত্যুর খবর জানান। তিনি লেখেন, ‘সিনেমার স্বর্ণালী যুগ অবসানের পথে। সরোজাদেবী আম্মা সবসময়ই সেরা ছিলেন। দক্ষিণের আর কোনো অভিনেত্রী তার মতো নাম, খ্যাতি পাননি। কী মায়া ভরা ছিলেন তিনি। তার সঙ্গে খুবই ভালো সম্পর্ক ছিল। তার সঙ্গে আর দেখা না হলে আমার বেঙ্গালুরু সফর অসম্পূর্ণই থেকে যাবে। আমি যখন চেন্নাইতে থাকতাম উনি ফোন করতেন। খুব অভাববোধ করব। আত্মার শান্তিকামনা করি।’
আরও পড়ুন: ক্যানসার আক্রান্ত দীপিকার নতুন সমস্যা ২৩ বছর পূর্তি : ‘দেবদাস’ ছবির ১০টি অমর সংলাপসরোজা দেবী মাত্র ১৭ বছর বয়সে সিনেমায় পা রাখেন। ১৯৫৫ সালে মুক্তি পাওয়া কন্নড় সিনেমা ‘মহাকবি কালিদাস’ দিয়েই শুরু হয় তার অভিষেক। এরপর ১৯৫৮ সালে এম জি রামচন্দ্রনের বিপরীতে ‘নাডোডি মান্নান’ সিনেমায় অভিনয় করে দ্রুত তারকা খ্যাতি লাভ করেন।
চার দশকের বেশি সময়জুড়ে বি সরোজা দেবী অভিনয় করেছেন দুই শতাধিক সিনেমায়। তিনি কন্নড়, তামিল, তেলেগু ও হিন্দি ভাষার সিনেমাতেও কাজ করেছেন। শিবাজি গণেশন, জেমিনি গণেশন, রাজকুমার ও এনটি রামা রাওয়ের মতো প্রথম সারির নায়কদের সঙ্গে একাধিকবার জুটি বেঁধেছেন এ অভিনেত্রী।
Advertisement
সরোজা দেবী ১৯৫৫ থেকে ১৯৮৪ সাল পর্যন্ত টানা ১৬১টি সিনেমায় নায়িকা চরিত্রে অভিনয় করে ভারতীয় সিনেমায় এক অনন্য রেকর্ড গড়েছেন। তার মতো এত দীর্ঘ সময় ধরে একটানা প্রধান নারী চরিত্রে অভিনয়ের নজির আর কারও নেই।
এম জি রামচন্দ্রনের সঙ্গে তার জুটি ছিল রুপালি পর্দার অন্যতম জনপ্রিয়। তাদের একসঙ্গে ২৬টি হিট সিনেমা রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে ‘থাই সোল্লাই থাথাধে’, ‘থায়াই কাথা থানায়ান’ ও ‘নীদি পিন পাসাম’।
শিবাজি গণেশনের সঙ্গে করেছেন ২২টি টানা সফল সিনেমা। তেলেগু সিনেমায় এনটি রামা রাওয়ের বিপরীতে ‘সীতারাম কল্যাণম’, ‘জগদেকা ভীরুনি কথা’ ও ‘দাগুদু মুথালু’ ছিল সুপারহিট। হিন্দি সিনেমায়ও বি সরোজা দেবী নিজের প্রতিভার ছাপ রেখেছেন ‘পয়গাম’, ‘অপেরা হাউস’, ‘সসুরাল’ ও ‘পেয়ার কিয়া তো ডরনা কিয়া’ সিনেমার মাধ্যমে।
অভিনয়জীবনে সরোজা দেবী পেয়েছেন অনেক পুরস্কার ও সম্মাননা। তিনি ১৯৬৯ সালে পদ্মশ্রী, ১৯৯২ সালে পদ্মভূষণ লাভ করেন।
Advertisement
তামিলনাড়ু সরকারের কাছ থেকে পেয়েছেন ‘কালাই মামানি’ সম্মান। বেঙ্গালুরু বিশ্ববিদ্যালয় তাকে দিয়েছে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি। অভিনয়ের বাইরেও সরোজা দেবী জড়িত ছিলেন চলচ্চিত্র সংগঠনের নানা কর্মকাণ্ডে। কন্নড় চলচ্চিত্র সংঘের সহসভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া ৫৩তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরিবোর্ডের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন এ অভিনেত্রী।
An era gold golden cinema comes to an end. #SarojaDevi amma was the greatest of all times . No other female actor in south has ever enjoyed the name and fame as her. Such a lovable adorable soul she was. Had a great rapport with her. My trip to Bengaluru was incomplete without… pic.twitter.com/gj8bQt0glq
— KhushbuSundar (@khushsundar) July 14, 2025১৯৩৮ সালের ৭ জানুয়ারি বেঙ্গালুরুতে জন্মগ্রহণ করেন সরোজা দেবী। পিতা ভাইরাপ্পা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা, মা রুদ্রম্মা গৃহিণী। তিনি তাদের চতুর্থ সন্তান। স্বামী শ্রী হর্ষর মৃত্যু হয় ১৯৮৬ সালে। স্বামীর মৃত্যুর পরও চলচ্চিত্রজগৎ থেকে সরে যাননি সরোজা দেবী। তরুণ শিল্পীদের পাশে দাঁড়ানো, নতুন উদ্যোগে যুক্ত থাকা—সব সময় সক্রিয় ছিলেন সৃষ্টিশীল কাজে।
এমএমএফ/এএসএম