ঈশিতা ইমু
Advertisement
চেষ্টা করেও সবাই সফল হতে পারেন না। মানুষের চেষ্টাও গঠনমূলক হতে হয়। জীবনে ভালো কিছু পেতে হলে নিজেকে গড়ে নেওয়ার বিকল্প নেই। কী করছেন এবং কেন করছেন—এ নিয়ে প্রথমে নিজের কাছেই খোলাসা থাকতে হবে। নিজের মূল্যবোধ ও লক্ষ্য যত স্পষ্টভাবে নিজের কাছে ধরা দেবে; ততই সমৃদ্ধি আসবে। দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ব্যক্তি জীবনের নানা ধাপে নানাভাবে সফলতার ছাপ রাখেন। সময়ের পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ সফলতা লাভ করে। সফলতা তখনই হাতের মুঠোয় আসবে এবং থাকবে; যদি কিছু বিশেষ গুণ ধরে রাখা যায় সব সময়। দেশ বা বিদেশে যেখানেই বসবাস করেন না কেন, চেষ্টা করলে সব জায়গায় সফলতা আসবে।
এই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে প্রবাসে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করেছেন শরীয়তপুরের সন্তান আবু ইউসুফ রানা। জীবনের নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ তিনি নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের (এনওয়াইপিডি) একজন পুলিশ অফিসার। নিউইয়র্কের রাস্তায় যখন তিনি কর্তব্যরত থাকেন; তখন সেই দৃশ্য শুধু একজন প্রবাসী বাংলাদেশির নয় বরং গোটা জাতির আত্মবিশ্বাসের প্রতিচ্ছবি হয়ে ওঠে। শরীয়তপুর জেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের কীর্তিনগর গ্রামে জন্ম নেওয়া ইউসুফ রানা বেড়ে উঠেছেন ঢাকার মধ্য বাড্ডায়। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সর্বকনিষ্ঠ। পরিবারের আর্থিক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও ছোটবেলা থেকেই তার মধ্যে ছিল আত্মপ্রত্যয়ী মনোভাব ও সমাজের জন্য কিছু করার তীব্র ইচ্ছা। সে ইচ্ছাই আজ তাকে পৌঁছে দিয়েছে হাজার মাইল দূরের এক শহর নিউইয়র্কের রাস্তায়, যেখানে তিনি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার একজন বিশ্বস্ত সৈনিক।
২০১৪ সালে উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। ভর্তি হন নিউইয়র্ক সিটি কলেজ অব টেকনোলজিতে। ২০২১ সালে তথ্যপ্রযুক্তিতে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের মধ্য দিয়ে শিক্ষাজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় শেষ করেন। কিন্তু প্রবাসের জীবন সহজ ছিল না, রেস্তোরাঁয় কাজ করা, ট্যাক্সি চালানো—এসব করে নিজের পড়ালেখা ও খরচ চালাতে হয়েছে তাকে। এই কঠিন বাস্তবতাকে পরাজিত করে এগিয়ে চলাই ছিল তার স্বপ্ন। ২০১৮ সালে এনওয়াইপিডি ক্যাডেট হিসেবে যুক্ত হন পুলিশ বিভাগে। এর পরের ছয় বছর ছিলেন ট্রেইনি, শিক্ষানবিশ ও বাস্তব অভিজ্ঞতার একটি কঠোর সময়কাল। অবশেষে ২০২৫ সালের মে মাসে সফলভাবে এনওয়াইপিডি একাডেমি শেষ করে পূর্ণাঙ্গ পুলিশ অফিসার হিসেবে শপথ নেন তিনি।
Advertisement
এই গর্বের মুহূর্তে পাশে রয়েছেন তার বড় ভাই জুয়েল রানা, যিনি এরই মধ্যে এনওয়াইপিডিতে কর্মরত। দুই ভাই এখন একসাথে নিউইয়র্কবাসীর নিরাপত্তায় নিয়োজিত, যা শুধু তাদের পরিবার নয়, গোটা বাংলাদেশি কমিউনিটির জন্যও এক বিশাল গৌরব। বড় ভাই জুয়েল রানা বলেন, ‘এই পথচলাটা শুধু স্বপ্নপূরণ নয়, এটা দায়িত্ব, এটা সম্মান। ইউসুফ সব সময় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চেয়েছে। আজ সে আমার সহকর্মী, এটা আমাদের জীবনের অন্যতম গর্বের মুহূর্ত।’
তার মতে, প্রবাসে থেকেও দেশের প্রতি ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ কখনো ফিঁকে হয় না। ‘আমি বাংলাদেশের সন্তান, সেটা আমি গর্বের সাথে বহন করি। আমি চাই, আমার কাজ দিয়ে দুই দেশের মানুষের মধ্যে এক ভালোবাসা, বিশ্বাস আর সহমর্মিতার বন্ধন গড়ে তুলতে। প্রবাসে থেকেও আমি বাংলাদেশিদের পাশে থাকতে চাই। আইনশৃঙ্খলার এই পেশা আমার কাছে শুধু চাকরি নয়, এটা মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সুযোগ।’ এভাবেই অনুভূতি ব্যক্ত করেন ইউসুফ রানা।
পুলিশ বাহিনীতে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইউসুফ রানা একজন তথ্যপ্রযুক্তিবিদও। তিনি প্রযুক্তিগত দক্ষতাকে জনসেবার সঙ্গে মেলাতে পেরেছেন। ভ্রমণ, ফটোগ্রাফি, জাভা প্রোগ্রামিং এবং নতুন কিছু শেখা—এগুলোই তার শখ। তিনি স্বপ্ন দেখেন পৃথিবীকে পাখির চোখে দেখার, যেখানে কৌতূহল, মুক্তি আর বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গি একসাথে মিলেমিশে থাকে। বাংলাদেশি কমিউনিটিতে ইউসুফ রানা এখন অনুপ্রেরণার নাম। তার সফলতা দেখিয়ে দিয়েছে, স্বপ্ন শুধু দেখাই নয়; তা বাস্তবায়ন করাও সম্ভব। যদি থাকে অদম্য সাহস, কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠা। যেখানে হাজারো অভিবাসী প্রতিদিন নিজেদের জন্য একটি স্থিতিশীল জীবনের স্বপ্ন দেখেন; সেখানে ইউসুফ রানার গল্প হয়ে ওঠে আশার বাতিঘর। তিনি প্রমাণ করেছেন, প্রবাসে থেকেও দেশের মুখ উজ্জ্বল করা যায়।
এসইউ/জিকেএস
Advertisement