লাইফস্টাইল

ইনডোরে শান্তির ছোঁয়া পিস লিলির পরিচর্যা

ইনডোরে শান্তির ছোঁয়া পিস লিলির পরিচর্যা

নীরবতায় যাদের সৌন্দর্য, তাদের এক আলাদা ভাষা থাকে -- শব্দহীন, অথচ গভীর। পিস লিলি ঠিক এমনই এক সৌন্দর্যের প্রতীক। এর নামের মধ্যেই আছে শান্তির এক কোমল ছোঁয়া। সবুজ পাতার ভেতর সাদা ফুলের কোমলতা যেন বলে – শান্তি কখনো জোর করে আসে না, সে ধীরে ধীরে হৃদয়ের গভীরে প্রস্ফুটিত হয়।

Advertisement

পিস লিলি শুধু নয়নাভিরাম নয়, এটি ঘরের বাতাস শুদ্ধ করে, ও মনে এনে দেয় প্রশান্তির পরশ। তাই ঘর সাজাতে বা মানসিক প্রশান্তি খুঁজতে চাইলে এই গাছ হতে পারে আপনার এক অনন্য সঙ্গী। হয়তো সেজন্যই ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে পিস লিলির জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

তাই আজ জেনে নিন পিস লিলির বৈশিষ্ট্য ও পরিচর্যা-

শান্তির প্রতীক পিস লিলি

পিস লিলির বৈজ্ঞানিক নাম স্প্যাথিফিলাম, যদিও নামের মধ্যে লিলি থাকলেও এটি প্রকৃত অর্থে লিলি পরিবারের নয়। পিস লিলির রয়েছে প্রায় ৩৬টি প্রজাতি, যার ফুল সাদা, পাতাগুলো লম্বা ও সবুজ।

Advertisement

এ সাদা ফুলকে অনেকে শান্তির প্রতীক বলে মনে করেন। পাতার আয়তন সাধারণত ১২-৬৫ সেমি লম্বা এবং ৩-২৫ সেমি চওড়া হয়ে থাকে। অন্দরের আবছা অন্ধকারেই যেসব গাছ বাধাহীনভাবে বেড়ে ওঠে, পিস লিলি তাদের মধ্যে অন্যতম। ঘরের কৃত্রিম আলোতেও বাড়তে পারে এই গাছ।

নীরবে ঘরের বাতাস পরিশোধন করে পিস লিলি। এই গাছ বাতাসের ফরম্যালডিহাইড, বেনজিন, জাইলিন, ট্রাইক্লোরোইথেনের মতো ক্ষতিকর উপাদান শোষণ করে ঘরকে রাখে স্বাস্থ্যকর। আবার যারা গাছের যত্নে একটু আলসে, তাদের জন্যও পিস লিলি আদর্শ। অল্প যত্নেই এটি সারা বছর ফুল ফোটায়। তবে সহজ হলেও পরিচর্যা প্রয়োজন, জেনে নিন কীভাবে যত্ন নেবেন আদরের পিস লিলির-

১. সঠিক জায়গা নির্বাচন

অন্যান্য ফুল গাছের মতো পিস লিলিরও সূর্যালোকের প্রয়োজন হয়। ঘরের ভেতরে পাতার সংখ্যা বাড়লেও সেই অনুপাতে ফুলের সংখ্যা আশানুরূপ নাও হতে পারে। তাই পিস লিলিকে রৌদ্রোজ্জ্বল জানালার কাছে রাখতে পারলে ভালো। এ ছাড়া ঘরের ভিতরে রাখলেও সপ্তাহে অন্তত এক দিন এমন জায়গায় রাখতে হবে, যেখানে যথেষ্ট সূর্যালোক আছে। ঘরের কোণ, ডিভানের পাশে, সিঁড়ির ধারে বা টবের স্ট্যান্ডেও এটি সৌন্দর্য ছড়ায়। ফুল ফুটলে আপনার ঘরে সুন্দর সুবাস থাকবে সবসময়।

২. মাটি ও টব

মাটি প্রস্তুতের সময় বাগানের মাটির সঙ্গে পিটমস, পার্লাইট, নিমের খোল ও সামান্য বালু মেশান। এতে মাটি হবে হালকা, পানিনিষ্কাশন ভালো হবে এবং শিকড় সহজে ছড়িয়ে পড়বে। একই সঙ্গে বেড়ে ওঠার জন্য পর্যাপ্ত পুষ্টি পাবে গাছ। এ ছাড়াও দ্রুত ফুল আসবে।

Advertisement

৩. কতটা পানি দেবেন

অন্য সব গাছের মতো প্রতিদিন পানি দিতে হয়না। গোড়ার মাটি শুকিয়ে এলে তবে পানি দিন। গাছের ওপর ধুলাবালি জমলে মাঝে মাঝে পানি ছিটিয়ে ধুয়ে দিন, এতে গাছ থাকবে সতেজ ও ঝকঝকে।

৪. গাছের খাবার বা সার

রাসায়নিক সার নয়, পিস লিলি ভালোবাসে প্রাকৃতিক যত্ন। কম্পোস্ট, ডিমের খোসা, ব্যবহৃত চা-পাতা বা গোবর সার প্রতি ১৫ দিন বা মাসে একবার ব্যবহার করুন। এতে গাছ থাকবে সবল ও প্রাণবন্ত। শীতকালে গাছের বৃদ্ধির হার এমনিতেই কম থাকে, তবে এ নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

৫. পাতা ছাঁটাই

সূর্যের আলো, পরিমিত পানি ও নিয়মিত যত্ন পেলে গাছ স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠবে। পিস লিলির ছাঁটাই বা প্রুনিং নিয়ে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তবে ফুল শুকিয়ে যাওয়ার পর কাণ্ড কেটে দেওয়াই ভালো। কেননা এর কাণ্ডে একটাই ফুল ফোঁটে, ফুল শুকিয়ে গেলে তা আর ভালো লাগে না।

৬. অসুখ-বিসুখ

পিস লিলির পাতা বাদামি হয়ে গেলে বা শুকিয়ে যেতে শুরু করলে বুঝতে হবে, গাছটি পানিশূন্যতায় ভুগছে। গাছ যদি ঠিকমতো বৃদ্ধি না পায় বা নিয়মিত ফুল না আসে, তবে তা সূর্যালোকের ঘাটতির লক্ষণ হতে পারে। এমন অবস্থায় গাছটি এমন জায়গায় সরিয়ে নিতে হবে যেখানে পর্যাপ্ত আলো পাওয়া যায়।

পিস লিলিতে ব্যাকটেরিজনিত রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত অংশটি কাঁচি দিয়ে কেটে ফেলতে হবে, যাতে রোগটি ছড়িয়ে না পড়ে এবং পুরো গাছটি রক্ষা পায়। যদি গাছে ছত্রাক বা পোকামাকড়ের আক্রমণ দেখা দেয়, তবে জৈবসার ব্যবহার করা উচিত। যা গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

স্কেল, মিলিবাগ কিংবা অ্যাফিড জাতীয় পোকামাকড়ের আক্রমণ হলে দ্রুত গাছটিকে অন্যান্য গাছ থেকে আলাদা করতে হবে। আক্রান্ত স্থানে পানি দিয়ে পরিষ্কার করে নিম তেল বা আইসোপ্রপাইল অ্যালকোহল দিয়ে ভালোভাবে মুছে দিলেই হবে।

যদি গাছটি টবে রাখা হয়, তবে নির্দিষ্ট সময় পরপর টব ও মাটি পরিবর্তন করা দরকার, এতে গাছ সুস্থভাবে বেড়ে উঠতে পারে।

সতর্কতাপিস লিলির পাতা ও কাণ্ডে ক্যালসিয়াম অক্সালেট থাকে, যা খেলে মুখ ও গলায় জ্বালাভাব তৈরি করতে পারে। তাই বাড়িতে ছোট শিশু থাকলে, গাছটি তাদের নাগালের বাইরে রাখা উচিত।

মোহাম্মদ সোহেল রানা/এএমপি/জেআইএম