ফিচার

সাঁতার শেখা হোক শৈশবের অন্যতম শিক্ষা

সাঁতার শেখা হোক শৈশবের অন্যতম শিক্ষা

সাজেদুল ইসলাম রাব্বি

Advertisement

‘সাঁতার’ শব্দটির সঙ্গে আমরা পরিচিত সেই শৈশবকাল থেকেই। বলা যায়, শৈশবে দলবেঁধে আমরা জলকেলিতে মেতে উঠি। তবে দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের অনেকেই আজও সাঁতারের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা আয়ত্ত করতে পারেনি। অথচ যে কোনো মুহূর্তে ঘটে যেতে পারে অনাকাঙ্ক্ষিত জলদুর্ঘটনা, আর তখন সাঁতার জানা থাকলে নিজের জীবন সহজেই রক্ষা করা সম্ভব।

ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর বাংলাদেশে গড়ে ১৭ হাজার শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এ মৃত্যুর সংখ্যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ। যা মোট শিশুমৃত্যুর ২৮ ভাগ। এই মৃত্যুর বেশির ভাগ খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয় না।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় স্বাস্থ্য ও তথ্য জরিপ ২০১৬ অনুযায়ী, বছরে ১ থেকে ১৭ বছর বয়সি ১৪ হাজার ৪৩৮ জন শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। শিশু ও কিশোরদের মৃত্যুর অন্যতম কারণ পানিতে ডুবে যাওয়া। বৈশ্বিক তথ্য অনুযায়ী, পানিতে ডুবে সবচেয়ে বেশি মারা যায় এক থেকে চার বছরের শিশুরা এবং দ্বিতীয় ঝুঁকিপূর্ণ বয়স হলো পাঁচ থেকে ৯ বছর।

Advertisement

এছাড়া বাংলাদেশ একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রবণ দেশ। প্রতি বছর বর্ষা, নদী ভাঙন, প্লাবন কিংবা নৌপথে দুর্ঘটনার মতো ঘটনা ঘটে। এসব দুর্যোগে সাঁতার জানা একজন মানুষ যেমন নিজেকে নিরাপদে রাখতে পারেন, তেমনি তিনি অন্যের জীবন বাঁচাতেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেন।

শিশুদের আত্মবিশ্বাস ও মানসিক বিকাশেও সাঁতার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। যারা শৈশবেই সাঁতার শেখে, তাদের মধ্যে সাহস, আত্মবিশ্বাস এবং সংকট মোকাবিলার মানসিক দৃঢ়তা তুলনামূলকভাবে বেশি গড়ে ওঠে। এতে তাদের ব্যক্তিত্ব বিকাশে সহায়ক হয় এবং নানা প্রতিকূলতাকে সহজভাবে মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি হয়।

সাঁতার মূলত একটি পরিপূর্ণ শরীরচর্চা। এটি শরীর, মন ও মনন ভালো রাখে। সাঁতার কাটার সময় শরীরের উচ্চতা বৃদ্ধি, শ্বাস-প্রশ্বাসের ভারসাম্য এবং শারীরিক গঠনেও ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়। এছাড়া পানিতে সময় কাটানো মানসিক প্রশান্তি এনে দেয়, দুশ্চিন্তা কমায় এবং মানসিক স্বাস্থ্যেও ফলপ্রসূ প্রভাব ফেলে।

সাঁতার শেখা থাকলে শিশুরা বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পারে। এতে তারা ছোট ছোট সাফল্যের স্বাদ পায়, যা তাদের জন্য আনন্দদায়ক ও উৎসাহের কারণ হয়। এটি তাদের জীবনে নতুন দিগন্তের সূচনা করে। পেশাগত ক্ষেত্রেও সাঁতারের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। যেমন-নৌবাহিনী, কোস্ট গার্ড, ফায়ার সার্ভিস, লাইফ গার্ড প্রভৃতি সরকারি ও বেসরকারি পেশায় সাঁতার জানা আবশ্যক। সাঁতার শেখা থাকলে এসব পেশায় যোগ দেওয়া সহজ হয় এবং কর্মজীবনেও এটি একটি মূল্যবান দক্ষতা হিসেবে বিবেচিত হয়।

Advertisement

সুতরাং, জীবনের অপরিহার্য বিষয়গুলোর পাশাপাশি সাঁতার শেখাও হওয়া উচিত একটি মৌলিক শিক্ষা। এটি শুধু শখ বা খেলাধুলার অংশ নয়, বরং জরুরি পরিস্থিতিতে জীবন রক্ষার কার্যকর একটি হাতিয়ার। আর যদি সাঁতার শেখা না থাকে, তাহলে বিপদের সময় আপনি অসহায় হয়ে পড়বেন, যা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। সাঁতার শেখাকে তাই আর বিলম্ব না করে জীবনের এক অনিবার্য অংশ হিসেবে বিবেচনা করা উচিত—নিজের জন্য, সমাজের জন্য এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের নিরাপত্তার জন্য।

আরও পড়ুন

ইউরোপে চকলেট আসে ওষুধ হয়ে অক্সিজেন মাস্ক ছাড়াই ১৩ মিনিট পানির নিচে থাকতে পারেন তারা

লেখক: শিক্ষার্থী, ভোলা সরকারি কলেজ, ভোলা

কেএসকে/এমএস