কৃষি ও প্রকৃতি

রাম্বুটান চাষে প্রবাসফেরত আফজাল শেখের ভাগ্যবদল

রাম্বুটান চাষে প্রবাসফেরত আফজাল শেখের ভাগ্যবদল

মো. আফজাল শেখ (৩৬) গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের কলাপাটুয়া গ্রামের পরিচিত নাম। একসময়ের মালয়েশিয়া প্রবাসী এ যুবকের এই পরিচিতির পেছনে লুকিয়ে আছে সংগ্রাম, স্বপ্ন আর সাহসের গল্প।

Advertisement

জানা যায়, ২০১৮ সালে মালয়েশিয়ায় রংমিস্ত্রির কাজ করতেন আফজাল। জীবিকার তাগিদে বিদেশ গেলেও তেমন ভালো কিছু করতে পারছিলেন না। একসময় সিদ্ধান্ত নেন, ফিরে আসবেন দেশের মাটিতে। দেশে ফিরে কী করবেন? কীভাবে চলবে পরিবার? প্রশ্নগুলো অস্থির করে তোলে তাকে।

প্রবাসে থাকা অবস্থায় ইউটিউবে ভিডিও দেখে ‘রাম্বুটান’ নামের বিদেশি ফলের প্রতি আগ্রহ জন্মায়। মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় জনপ্রিয় এ ফলের চাষের পদ্ধতি বিষয়ে জানতে শুরু করেন। ২০১৮ সালের শেষদিকে দেশে ফিরে আসেন। সঙ্গে নিয়ে আসেন মাত্র চারটি রাম্বুটানের চারা।

বাড়ির উঠানে চারটি গাছ রোপণ করেন তিনি। একটি গাছ বাঁচাতে পারেননি। বাকিগুলো টিকে যায়। জীবিকা নির্বাহের জন্য আবারও রংমিস্ত্রির কাজে যুক্ত হন। পাশাপাশি গাছগুলোকে যত্ন করেন। প্রথম কয়েক বছরে ফলন আশানুরূপ না হলেও হাল ছাড়েননি। যোগাযোগ করেন স্থানীয় কৃষি অফিস ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে। কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ মেনে শুরু করেন পরিচর্যা।

Advertisement

এর ফলও পেতে শুরু করেন আফজাল শেখ। এ বছর তার বাড়ির তিনটি রাম্বুটান গাছে বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রতিদিনই পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা ভিড় করছেন বাড়িতে। প্রতি কেজি ১,২০০ থেকে ১,৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে বিদেশি সুস্বাদু এ ফল। শুধু ফল বিক্রিই নয়; চারা বিক্রিতেও আয় করছেন। অনেক আগ্রহী কৃষক তার কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করে রাম্বুটান চাষ করছেন। এখন আফজাল শেখ শুধু একসময়ের প্রবাসী বা রংমিস্ত্রি নন; একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা।

আরও পড়ুন১৫ দেশে যাচ্ছে গাজীপুরের কাঁঠালছাদ বাগানে ড্রাগন ও প্যাশনে বাজিমাত হিমেলের

দেখতে অনেকটা লিচুর মতো হলেও রাম্বুটানের লোমশ খোসা আর ভিন্ন স্বাদ আলাদা পরিচিতি এনে দিয়েছে। পুষ্টিগুণে ভরপুর এ ফলের চাহিদা বাড়ছে দেশজুড়ে। বাংলাদেশে এমন ফলের চাষ সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে দিয়েছে। স্থানীয়রা বলেন, ‘স্বপ্ন, সাহস আর সাধনার এক অনন্য উদাহরণ আফজাল শেখ। নিজের জীবন থেকে পাওয়া শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন সমাজে। তার এ পথচলা শুধু এক ব্যক্তির নয়; এটি হতে পারে বাংলাদেশের প্রতিটি তরুণের প্রেরণার গল্প।’

আফজাল শেখ বলেন, ‘পরিকল্পনা, ধৈর্য, নিয়মিত পরিচর্যা আর পরিশ্রমকে ভিত্তি করেই আমি আজ এ অবস্থানে। প্রথমে শুধুই শখ ছিল। ভাবিনি একদিন এটাই হবে আমার আয়ের বড় উৎস। রাম্বুটানের পাশাপাশি মালয়েশিয়ান ডুরিয়ান, আফ্রিকান ননিফলসহ বেশ কয়েক ধরনের বিদেশি ফলের গাছও লাগিয়েছি। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে চাষের ইচ্ছা আছে।’

আফজাল শেখ শুধু নিজের ভাগ্য বদলাননি। অনেক তরুণকে কৃষি উদ্যোগে উদ্বুদ্ধ করছেন। চারা সরবরাহের পাশাপাশি প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন। তিনি বলেন, ‘আমি চাই দেশের আরও জায়গায় রাম্বুটান চাষ ছড়িয়ে পড়ুক। এটি শুধু লাভজনক নয় বরং কৃষির প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে সহায়ক হবে। তরুণরা যদি এ খাতে আসেন, তাহলে বেকারত্ব অনেকটাই কমবে।’

Advertisement

কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ফারজানা তাসলিম বলেন, ‘বাংলাদেশের মাটি ও জলবায়ু রাম্বুটান চাষের জন্য বেশ উপযোগী। যারা আগ্রহী, তাদের প্রশিক্ষণসহ সব ধরনের সহায়তা দিতে আমরা প্রস্তুত। আফজাল শেখের মতো প্রবাসফেরত তরুণরা যদি এ ধরনের উদ্যোগে এগিয়ে আসেন, তাহলে কৃষিতে নতুন বিপ্লব ঘটবে। এটি শুধু ব্যক্তিগত সাফল্য নয়; দেশের অর্থনীতির জন্যও ইতিবাচক দৃষ্টান্ত।’

(এআরএ) আব্দুর রহমান আরমান/এসইউ/জেআইএম