ছোট একটি ছাদ বাগান। এ বাগানে চাষ করা হয়েছে নানা প্রজাতির ড্রাগন গাছ। গাছের কাণ্ডে ধরা লাল-সবুজ-হলুদ পাকা ড্রাগনগুলো দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও ভারী মিষ্টি। ২ প্রজাতি দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে বাগানে আছে অন্তত ৬০ প্রজাতির ড্রাগন। যার মধ্যে ফল এসেছে অন্তত ৩০ প্রজাটির গাছে। এ ছাড়া ড্রাগনের পাশাপাশি আছে পাহাড়ি ফল প্যাশন। কয়েক বছরের ব্যবধানে তিলে তিলে গড়ে তোলা বাগান দিয়েই বাজিমাত করেছেন শরীয়তপুরের তরুণ হিমেল মোল্লা। এখান থেকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। ছাদ বাগান করে তাকে লাগিয়ে দিয়েছেন এই উদ্যোক্তা।
Advertisement
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জাজিরা উপজেলার বড় কান্দি ইউনিয়নের ডুবিসায়বর এলাকার হায়দার মোল্লা ও হাসিয়া বেগমের ছেলে হিমেল মোল্লা (২৬)। উচ্চ মাধ্যমিক শেষ করার পর আর পড়াশোনা করেননি। বাগানের প্রতি ছোটবেলা থেকেই ছিল অগাধ ভালোবাসা। করোনার সময়ে সিদ্ধান্ত নেন বাগান করার। বাড়িতে তেমন জায়গা না থাকায় ছাদকে বেঁছে নেন। প্রথম বাবা রাজি না হলেও পরে ছেলের আগ্রহে নিজেই কিনে দেন গাছের চারা। ড্রাগন চাষে খরচ, পরিচর্যা এবং রোগবালাই কম হওয়ায় এই চাষ বেছে নেন তিনি।
ধীরে ধীরে ৬০ প্রজাতির ড্রাগন চারা সংগ্রহ করে রোপণ করেন। এর মধ্যে পার্পেল হার্জ, বিগ পিংক, পিংক রোজ, ব্রুনি বারি-১, ফিজিক্যাল গ্রাফিতি, ভিয়েতনামিজ রেড, রেড সেল্ফ, হলুদ, বিগ হোয়াইট, থাই রেড, পিংক রোজ, কনি মায়ের, বোল্ডার, রেড ভেলভেট, তাইওয়ান রেড, অজি গোল্ড, আসুন্তা-৩ ও ব্লাকিস রেডসহ অন্তত ৩০ প্রজাতির ফল ধরেছে। যার প্রত্যেকটির স্বাদ আলাদা। ফলগুলো ভীষণ রসালো আর সুস্বাদু।
আরও পড়ুন তরুণ উদ্যোক্তা শরীফের বাগানে বিদেশি পিচফল স্ট্রবেরি চাষে গৃহবধূ হনুফার চমকতার বাগানের উৎপাদিত ড্রাগন অর্গানিক হওয়ায় বাজারেও ব্যাপক চাহিদা। প্রতি কেজি ফল ৫০০ টাকা বিক্রি করেন। তারপরও চাহিদা অনুযায়ী জোগান দিতে পারেন না। পাশাপাশি গাছের কাটিং বিক্রি করেন। এতে বছরে কয়েক লাখ টাকা আয় হয়। এ ছাড়া ৬ জাতের প্যাশন ফলসহ মালবেরি ও বিভিন্ন জাতের আঙুর গাছ আছে। এসব গাছের চারা বিক্রি করে ভালো টাকা উপার্জন করেন। প্রণোদনা পেলে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ও প্যাশন চাষ করতে চান। তার বাগান পরিচর্যায় সহযোগিতা করেন পরিবারের বড়দের পাশাপাশি ছোটরাও। তার বাগান দেখে অনেকেই ছাদ বাগান করতে আগ্রহী হয়েছেন।
Advertisement
হিমেল মোল্লার বাবা হায়দার মোল্লা বলেন, ‘ছেলে যখন ছাদে গাছ লাগানোর কথা বলে, আমি রাজি হইনি। ভেবেছিলাম ছাদ নষ্ট হবে। একপর্যায় ওর কথা রাখতে রাজি হই। এখন দেখি ছাদ বাগান করে খুব সাফল্য পাচ্ছে। ওর বাগানের ড্রাগন ফল আমরা খাই এবং আত্মীয়দের দিই। ও বাজে আড্ডায় বসে না থেকে গাছের পরিচর্যায় সময় কাটায়, এটা দেখে ভীষণ ভালো লাগে। হিমেল নিজের হাতখরচের টাকা উপার্জন করে। মাঝেমধ্যে আমাদেরও সহযোগিতা করে।’
স্থানীয় তরুণ রাকিব হাসান বলেন, ‘হিমেলের ধ্যান, জ্ঞান, ভালোবাসা সব এই ছাদ বাগানকে ঘিরে। ও বাজে আড্ডায় সময় নষ্ট না করে ছাদ বাগানে সফল হয়েছে। আমারও ইচ্ছা আছে ওর মতো ছাদ বাগান করার।’
হিমেল মোল্লা বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই গাছ লাগানোর প্রতি ঝোঁক ছিল। বিভিন্ন ভিডিও দেখে জানতে পারলাম ড্রাগন চাষে ঝামেলা কম। তাই ২ জাতের ড্রাগন দিয়ে শুরু করি। ধীরে ধীরে আমার বাগানে ৬০ প্রজাতির ড্রাগন চাষে সক্ষম হই। বর্তমানে ৩০ প্রজাতিতে ফল এসেছে। আমি ড্রাগন বিক্রি করে ভালো আয় করি। তাছাড়া বাগানে প্যাশন ফল গাছ আছে। এ গাছের চারাও ভালো দামে বিক্রি করি। ইচ্ছা আছে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করার। সরকারি সহযোগিতা পেলে তা করা সম্ভব।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান) মোহাম্মদ রিয়াজুর রহমান বলেন, ‘হিমেল নামের এই তরুণকে আমরা সাধুবাদ জানাই। তিনি এমন এক উদ্যোক্তা; যিনি ৬০ প্রজাতির ড্রাগন নিয়ে এসেছেন। তিনি যদি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে চান; সে ক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ সব ধরনের পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকবে।’
Advertisement
এসইউ/এএসএম