একটি মেয়ের বাস্তব জীবনের হিরো তার বাবা। আমার জীবনেও ব্যতিক্রম নয়। আমার কাছে মনে হয়, বাবা ছাড়া একটি মেয়ের জীবন অসম্পূর্ণ। মেয়ে যখন তার বাবাকে দেখে; তখন মনে হয় যেন তার সব সুখ লুকিয়ে আছে বাবার হাস্যোজ্জ্বল মুখে। গল্পটি আজকের নয়; সেই ছোট্টবেলার।
Advertisement
মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম নিলো ফুটফুটে এক মেয়ে। নাম রাখা হলো তানরিহা। জন্ম থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধী। মা-বাবার প্রথম সন্তান প্রতিবন্ধী হলেও তাদের মুখে হাসির রেখা ভেসে ওঠে অজস্র। তারা এক কন্যা সন্তানের মা-বাবা হয়েছেন; এটাই এখন তাদের সবচেয়ে বড় পাওয়া।
একটি সন্তান যখন প্রতিবন্ধী হয়ে জন্ম নেয়; তখন কথা তো উঠবেই। এখানেও উঠেছিল। তা-ও সবকিছু বাদ দিয়ে তারা সন্তানকে একটু একটু করে বড় করতে লাগলো। মেয়েটি আস্তে আস্তে বড় হতে লাগলো। বয়স যখন চার বছর হলো, তাকে একটি নুরানি মাদ্রাসায় ভর্তি করা হলো।
প্রথম প্রথম খুব কান্না করতো। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে গেল। ক্লাসে মোটামুটি ভালোই ছিল। তেমন কারো সাথে কথা বলতো না। অন্যরাও কথা বলতে আসতো না। আস্তে আস্তে সবার সাথে কথা বলতে লাগলো। নুরানিতেই তার এক বান্ধবী হলো। অদ্ভুতভাবে জানা গেল, তাদের বাবারাও একে অপরের বন্ধু। আবার মায়েদেরও আগে থেকে পরিচয় আছে। খুব ভালো সম্পর্ক।
Advertisement
এখন ওরা বন্ধু। দুজনের বন্ধুত্ব অনেক গভীর। একসাথে আসা-যাওয়া। সবকিছুই ছিল একসাথে। ক্লাস থ্রি শেষ করে তারা অন্য একটি মাদ্রাসায় ভর্তি হলো। সেখানেও একসাথে আসা-যাওয়া। যেন দুটি শরীরে এক আত্মা। এভাবেই কেটে যায় তাদের বন্ধুত্বের দীর্ঘ দশ বছর।
অনেক বন্ধু হয় তাদের কিন্তু এ বন্ধুত্ব কমে না। তানরিহা পড়ালেখায় ভালো ছিল। শিক্ষকরা খুব আদর করতো। সহপাঠীরাও কখনো আলাদা ভাবেনি। সবাই মিলে মেতে থাকতো।
এখন সে দাখিল পরীক্ষার্থী। খুব মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করছে। বুক ভরা আশা, জিপিএ ফাইভ পেতে হবে। কোচিং, ক্লাস, পরীক্ষার প্রস্তুতি খুব ভালোই নিচ্ছে। পরীক্ষার সময়ও ঘনিয়ে এলো। পরদিন পরীক্ষা। খুব ভালোভাবে প্রস্তুতি নিয়ে রাত ১০টায় ঘুমিয়ে পড়লো। ভোরে উঠে রিভিশন দিতে হবে।
ভোর চারটায় উঠে সম্পূর্ণ রিভিশন দিতে লাগলো। সাতটায় নাস্তা করে আটটায় পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বের হয়ে গেল। এভাবে তার সব পরীক্ষা শেষ হলো। পরীক্ষা শেষ হলেও চিন্তার শেষ নেই। রেজাল্ট কেমন হয়।
Advertisement
আজ ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। রেজাল্ট এলো জিপিএ ৪.৯৬। সে কাঁদতে লাগলো এ প্লাস আসেনি বলে। তবে সবার খুশি দেখে সে-ও খুশি হয়ে গেল। তার স্বপ্ন এখন ভালো কলেজে পড়ার। সে এমন ভাবে তার স্বপ্নপূরণ করলো এবং নিজেকে সফল করে তুললো। পরিবার পাশে থাকলে নিজের মনোবলে প্রতিবন্ধীরাও ভালো একটি জায়গায় নিজেকে নিয়ে যেতে পারে।
লেখক: শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম কলেজ।
এসইউ/জিকেএস