নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে চমক দেখিয়েছেন ৩৩ বছর বয়সী মুসলিম, অভিবাসী ও বামপন্থি রাজনীতিক জোহরান মামদানি। তবে অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য যতটা ‘দুঃস্বপ্ন’, ততটাই হয়তো তার জন্য আশীর্বাদ।
Advertisement
মাত্র ক’মাস আগেও মামদানি ছিলেন অনেকটাই অপরিচিত একটি নাম। কিন্তু গত ২৪ জুন তিনি হেভিওয়েট অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে হারিয়ে মেয়র প্রার্থী মনোনীত হন। কুয়োমো নিউইয়র্কের সাবেক গভর্নর এবং একসময় জাতীয় রাজনীতির বড় মুখ ছিলেন।
আরও পড়ুন>>
নিউইয়র্ক সিটির সম্ভাব্য মেয়র ফিলিস্তিনপন্থি মুসলিম তরুণ মামদানি কে এই জোহরান মামদানি? ট্রাম্পের ‘সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন’ এখন মামদানি নিউইয়র্কের সম্ভাব্য মেয়র জোহরান মামদানির বাংলা সংযোগমামদানির বিজয় মূলত ডেমোক্রেটিক পার্টির কেন্দ্রীয় রাজনীতির প্রতি একপ্রকার প্রতিবাদ। প্রগ্রেসিভ ভোটারদের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা বেড়েছে, আর ধনীদের সমর্থন পাওয়া কুয়োমো—যিনি বিল ক্লিনটনের ও ধনকুবের বিল অ্যাকম্যানের সমর্থন পেয়েছিলেন—তাতে সুবিধা করতে পারেননি।
Advertisement
উগান্ডার কামপালায় জন্ম নেওয়া মামদানির বেড়ে ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকা ও পরে যুক্তরাষ্ট্রে। ২০১৮ সালে তিনি মার্কিন নাগরিকত্ব লাভ করেন। তার বাবা মাহমুদ মামদানি কলোনিয়ালিজম বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক, আর মা মীরা নায়ার একজন ভারতীয় চলচ্চিত্রনির্মাতা, যিনি বিশ্বজুড়ে পরিচিত। দুজনেই ইসরায়েলের গাজা যুদ্ধের সমালোচক।
মামদানি নিজেও গাজার পরিস্থিতি নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন। তিনি ‘গ্লোবালাইজ দ্য ইনতিফাদা’ স্লোগানকে মানবাধিকারের আকাঙ্ক্ষা হিসেবে ব্যাখ্যা করলেও নিউইয়র্কের অনেক ইহুদি নাগরিক একে সহিংসতার আহ্বান হিসেবে দেখেন।
রাজনীতিতে আসার আগে মামদানি র্যাপ গান গাইতেন, যদিও সে পেশায় সফল হননি। এরপর তিনি নিঃস্ব পরিবারদের ঘর হারানো ঠেকাতে কাজ করেন। ২০২০ সালে নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিতে প্রথম দক্ষিণ এশীয় সদস্য নির্বাচিত হন।
বামপন্থি, কিন্তু জনপ্রিয়ডেমোক্রেটিক সোশালিস্টস অব আমেরিকার সদস্য মামদানি ‘মানুষের প্রয়োজন আগে, মুনাফা পরে’ দর্শনে বিশ্বাসী। তার প্রচারণার মূল প্রতিশ্রুতি ছিল: ভাড়া বৃদ্ধি স্থগিত, বিনামূল্যে বাস, দরিদ্র এলাকায় সরকারি সুপারমার্কেট এবং ধনীদের ওপর কর বাড়ানো। এতে নিউইয়র্কের উচ্চবিত্ত শ্রেণি আতঙ্কিত হলেও তরুণ ও মধ্যপন্থি ভোটারদের তিনি আকর্ষণ করেছেন।
Advertisement
মামদানি নিজেকে বলেন ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের দুঃস্বপ্ন—কারণ আমি একজন প্রগ্রেসিভ, মুসলিম অভিবাসী।’ কিন্তু রিপাবলিকানদের অনেকেই মনে করছেন, তিনি এমন একজন চরিত্র, যাকে সামনে রেখে ট্রাম্পের দল জাতীয়ভাবে প্রচারণা জোরদার করতে পারবে।
ট্রাম্প তাকে বলেছেন ‘১০০ শতাংশ কমিউনিস্ট পাগল’। রিপাবলিকান কংগ্রেস সদস্য এলিস স্টেফানিকের মতে, ‘মামদানি জাতীয় রাজনীতিতে রিপাবলিকানদের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র।’
চূড়ান্ত লড়াই কার সঙ্গে?নভেম্বরে মেয়র নির্বাচনে মামদানির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন কার্টিস স্লিওয়া, সাবেক গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেলসের প্রতিষ্ঠাতা। তবে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারেন বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামস, যিনি দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন, পরে ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে মামলা বন্ধ হয়। অ্যাডামস স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কুয়োমোও এখনো দৌড়ে রয়েছেন।
মামদানি জিতলে হবেন নিউইয়র্ক সিটির ইতিহাসে প্রথম মুসলিম, সর্বকনিষ্ঠ এবং অভিবাসী মেয়র।
কেএএ/