পিছমোড়া করে হাতকড়া পরিয়ে আদালতে উপস্থিত করা হয় সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালকে। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দুপুর ১টা ২৫ মিনিটের দিকে তাকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে হাজির করা হয়।
Advertisement
এসময় সাবেক এই প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে লক্ষ্য করে থুতু নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এদিন ১০ দিনের রিমান্ড আবেদনের ওপর রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের শুনানি শেষে তার তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
হাবিবুল আউয়ালকে আদালতে হাজির করার পর রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা শুনানি করেন। পরে আসামিকে উদ্দেশ্য করে আদালত বলেন, আপনার কাছে জাতির প্রত্যাশা ছিল অনেক। কিন্তু বিতর্কমুক্ত নির্বাচন করতে পারেননি।
এ প্রসঙ্গে সাবেক এই সিইসি বলেন, ‘বাংলাদেশের কোন নির্বাচন বিতর্কিত হয়নি? ১৯৭২ এর ডিসেম্বরে সংবিধান রচনার তিনমাস পর ৭৩ এর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শেখ মুজিবের মতো নেতা নির্বাচনে কারচুপি করেছেন। ক্ষমতার যে লোভ এটা ভয়ানক। এক হাজার বছরেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। সেটা করার জন্য সংস্কার লাগবে।’
Advertisement
হাবিবুল আউয়াল আরও বলেন, ‘আমি স্বীকার করছি- আমি ডামি নির্বাচন করেছি। রাজনৈতিক সমঝোতার অভাবে একতরফা নির্বাচন হয়েছে। তবে এখানে আমাকে পয়সা দেওয়ার কোনো প্রশ্ন আসেনি। আমার জীবনে আমি অর্থ আত্মসাৎ বা দুর্নীতি করিনি।’
এসময় আদালত বলেন, সাধারণত নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হতো। কিন্তু এই নির্বাচনে ৪-৫ লাখ টাকা করে দেওয়া হয়। এমনটি হওয়ার কারণ কী? তবে এ প্রশ্নের জবাবে নিজের দায় এড়িয়ে যান কাজী হাবিবুল আউয়াল। রাতের বেলার ভোট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যখন রাতের বেলায় ভোট হয়, তখন আমি গভীর নিদ্রায় নিমগ্ন।’
বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের (চরমোনাই) সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ ফয়জুল করিমের ওপর হামলার প্রসঙ্গ রাষ্ট্রপক্ষ থেকে উত্থাপন করা হলে তিনি বলেন, ‘তার (ফয়জুল করিম) ওপর হামলার ঘটনায় কথা বলতে গিয়ে আমি কথাপ্রসঙ্গে বলে ফেলেছি- তিনি কি ইন্তেকাল করেছেন? আমার এ কথাটি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’
এসময় তার দীর্ঘ বক্তব্যে বিরক্তি প্রকাশ করেন পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী। এরপর হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘জাস্টিফাই করার সুযোগ না দিলে একটা জীবনকে মেরে ফেলেন।’
Advertisement
পরে পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, এখানে সাধু সাজার সুযোগ নেই। আপনার নিজের অপরাধ ঢাকার সুযোগ নেই। অন্যরা অন্যায় করেছে এসব না বলে আপনি কী করেছেন সেটা বলেন। এসময় পাশ থেকে এক আইনজীবী বলে ওঠেন- এতগুলো ছেলেমেয়ে মারা গেছে আপনার জন্য। এর উত্তরে সাবেক এই সিইসি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আমার জন্য এতগুলো ছেলেমেয়ে মারা গেছে?’
এমআইএন/কেএসআর/জিকেএস