দেশজুড়ে

মহাসড়ক দাপাচ্ছে ফিটনেসহীন ৩ শতাধিক মাইক্রোবাস

মহাসড়ক দাপাচ্ছে ফিটনেসহীন ৩ শতাধিক মাইক্রোবাস

• দূরপাল্লার যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ছুটছে বেপরোয়া গতিতে• যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা• চলন্ত মাইক্রোবাসে আগুন, প্রাণে বাঁচল ৫ যাত্রী• নীরব ভূমিকায় বিআরটিএ ও হাইওয়ে পুলিশ দেশের অর্থনৈতিক লাইফ লাইনখ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার অংশে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফিটনেসবিহীন দরজাখোলা মিনি মাইক্রোবাস। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন ও দূরপাল্লার যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলায় দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মহাসড়কে এসব গাড়ি চলাচলে বিআরটিএর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না।

Advertisement

দরজা খোলা এসব মাইক্রোবাসের জন্য মহাসড়কের দাউদকান্দি থেকে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড পর্যন্ত অন্তত ১০টিরও বেশি স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে অবৈধ স্ট্যান্ড। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত এসব স্ট্যান্ডে যাত্রী ওঠানামা করা হয়। হাইওয়ে পুলিশের নাকের ডগায় বছরের পর বছর তিন শতাধিক লক্কর-ঝক্কর মাইক্রো চলাচল করলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

যদিও পুলিশ বলছে, গত তিন মাসে ময়নামতি, ইলয়টগঞ্জ ও দাউদকান্দি হাইওয়ে থানায় এসব গাড়ির বিরুদ্ধে ১৩৪টি মামলা করা হয়েছে।

চালকদের অভিযোগ, প্রতি মাসে হাইওয়ে পুলিশকে মাসোহারা দিয়ে মহাসড়কে চলছে এসব মিনি মাইক্রোবাস। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করে পুলিশ।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মহাসড়কের কুমিল্লার দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জ, কুটুম্বপুর, মাধাইয়া, চান্দিনা উপজেলা মোড়, কাঠেরপুল, নিমসার, কালাকচুয়া, ক্যান্টনমেন্ট, আলেখার চর ও পদুয়ারবাজার বিশ্বরোডসহ বিভিন্ন স্থানে ফিটনেসবিহীন দরজাখোলা মিনি মাইক্রোবাসের অবৈধ স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। তবে মূল স্ট্যান্ড ক্যান্টনমেন্ট এলাকায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মাইক্রোবাসগুলোর কোনোটির ফিটনেস নেই। আবার অধিকাংশ গাড়ির দরজা খোলা। কোনো মাইক্রোবাসের দরজা বাঁশ আর রশি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। যাত্রীতে ঠাসা এসব মাইক্রোবাস। শিশু-কিশোররা এসব গাড়ির হেলপার হিসেবে কাজ করছে।

লক্কর-ঝক্কর এসব মিনি মাইক্রোবাস চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই। গাড়ির ফিটনেস সার্টিফিকেট, ইন্স্যুরেন্স ও রুট পারমিট কোনোটি নেই। মাসোহারায় চলছে এসব গাড়ি।

আরও পড়ুন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বৈধের তিনগুণ অবৈধ যানবাহন  মহাসড়কে থামছে না ডাকাতি-ছিনতাই, পশু ব্যবসায়ীরাও আতঙ্কে ঢাকায় ফিটনেসবিহীন ৪৮৮ যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা

যাত্রীরা বলছেন, ফিটনেসবিহীন এসব গাড়ির বেপরোয়া গতির কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট-বড় দুর্ঘটনা। সম্প্রতি মহাসড়কের বুড়িচং উপজেলার নিমসার বাজার এলাকায় একটি চলন্ত যাত্রীবাহী মিনি মাইক্রোবাসে আগুন ধরে যায়। এ সময় গাড়িতে থাকা পাঁচ যাত্রী কোনো মতে বের হতে পারলেও গাড়িটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। ঝুঁকিপূর্ণ এসব পরিবহন বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি। প্রশাসন সক্রিয় হলে সড়কে ফিরবে শৃঙ্খলা, কমবে দুর্ঘটনা।

Advertisement

মিনি মাইক্রোবাসের একাধিক মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধের পর তারা পুরোনো সুজুকি ও মারুতি মিনি মাইক্রোবাস কিনে যাত্রী পরিবহনের জন্য মহাসড়কে নামিয়েছেন। স্ট্যান্ড ইজারার মাধ্যমে তারা পরিচালনা করছেন এসব গাড়ি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন চালক বলেন, মহাসড়কে মিনি মাইক্রোবাস, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যান চলতে হলে হাইওয়ে পুলিশকে মাসোহারা দিতে হয়। অন্যথায় মামলা ঠুকে দেন। পেটের দায়ে আমরা গাড়ি চালাই, পুলিশ এ সুযোগে টাকা কামায়। পুরোপুরি নিষেধাজ্ঞা দিলে আমরা বিকল্প ব্যবস্থা বেছে নেব।

প্রতিদিন এ সড়কে চলাচলকারী যাত্রী আব্দুল হান্নান টিটু বলেন, একে তো গাড়ি লক্কর-ঝক্কর, এর মধ্যে গাড়ি থাকে যাত্রীতে ঠাসা। চলন্ত অবস্থায় ব্রেকে চাপ দিলে একজন অন্যের গায়ে ওপর পড়েন। এছাড়া হঠাৎ মাঝপথে চলন্ত অবস্থায় স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। এতে গন্তব্যে পৌঁছাতে বিড়ম্বনায় শিকার হতে হয়। এসব গাড়িতে ওঠার পর থেকে যাত্রীরা দুর্ঘটনার আতঙ্কে থাকেন।

হাইওয়ে পুলিশ কুমিল্লা রিজিয়নের এডিশনাল ডিআইজি মো. খাইরুল আলম জাগো নিউজকে বলেন, ১৫-২০ বছর ধরে মহাসড়কে এসব গাড়ি চলাচল করছে, যা সম্পন্ন অবৈধ, নিষিদ্ধ ও ঝুঁকিপূর্ণ। এর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত অভিযান চালাচ্ছি এবং মামলা দিচ্ছি।

মাসোহারা নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, হাইওয়ে পুলিশ ঘুসের সঙ্গে জড়িত নয়, যদি কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কুমিল্লা সার্কেলের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আলম জাগো নিউজকে বলেন, ফিটনেস ও রুট পারমিটবিহীন গাড়ির সংখ্যা কত তা আমাদের জানা নেই। তবে এসব গাড়ির অধিকাংশ মহাসড়কে চলাচলের অনুপযোগী। শিগগির এসব গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হবে।

জেডআইপি/আরএইচ/এমএফএ/জিকেএস