মালয়েশিয়ায় কর্মরত দুইজন বাংলাদেশি শ্রমিক তৌহিদ মিয়া (পাসপোর্ট নম্বর: A071624*6) এবং মো. হাসান (পাসপোর্ট নম্বর: B001778*2)—কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে বর্তমানে পুরোপুরি কর্মক্ষমতা হারিয়েছেন। জীবিকার এই সংকটে তারা বাধ্য হয়ে দেশে ফিরতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সহায়তা চেয়ে আবেদন করেন।
Advertisement
হাইকমিশন মানবিক বিবেচনায় তাদের আবেদন গ্রহণ করে এবং উভয়কে দেশে ফেরাতে আর্থিক সহায়তা করে। বিষয়টি বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফেসবুক পেজে এক পোস্টে নিশ্চিত করা হয়।
তবে হাইকমিশনের এই পোস্ট ঘিরে নানা প্রশ্ন ও প্রতিক্রিয়ার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফেসবুক পোস্টে, দৈনিক কালবেলার মালয়েশিয়া প্রতিনিধি মোস্তফা ইমরান রাজু কমেন্টে জানতে চেয়েছেন, কর্মক্ষেত্রে আঘাতপ্রাপ্ত হলে তাদের ব্যয়ভার এবং ক্ষতিপূরণ কোম্পানির বহন করার কথা, তাদের কেন সরকারি খরচে দেশে যেতে হচ্ছে?
এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে, মোস্তফা ইমরান রাজু জানিয়েছেন, এর কোনো উত্তর এখনো আমি পাইনি। এদিকে পোস্টে, মো. জহিরুল ইসলাম অমি নামীয় একজন ফেসবুক ইউজার কমেন্ট বক্সে লিখেছেন, ‘ধন্যবাদ, বাংলাদেশ হাইকমিশনকে, শুধু তারা দুইজন নয় মালয়েশিয়ায় এমন হাজার হাজার কর্মী আছে খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করুন, মানবিক দিক বিবেচনা করে সবার পাশে দাঁড়ান জেলখানায় কত অবৈধ প্রবাসী পচে গলে মরছে তাদের দিকে একটু নজর দিন।’
Advertisement
একই পোস্টে আরেক ফেসবুক ব্যবহারকারী রাজু খান লিখেছেন, ‘সাধুবাদ জানাচ্ছি, এ রকমই প্রবাসীদের পাশে থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি। ধন্যবাদ।’
কী পরিমাণ অর্থ দুইজন বাংলাদেশি শ্রমিক পেয়েছেন এ তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছিল হাইকমিশনের প্রেস সচিব সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফের কাছে। হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়টি লেবার উইং সংশ্লিষ্ট, আমি এ বিষয়ে জানার চেষ্টা করছি। তবে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এর কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।
হাইকমিশনের আর্থিক সহায়তা ছাড়া কোম্পানির পক্ষ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে কি না জানতে চেয়ে হাইকমিশনার মো. শামীম আহসান ও লেবার কাউন্সিলর মো. শরিফুল ইসলামের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একটি মেসেজ পাঠানো হয়। হাইকমিশনার মো. শামীম আহসানের তরফ থেকে কোনো উত্তর না পেলেও কাউন্সিলর শরিফুল ইসলাম ফোন করে জানিয়েছেন, দুইজন প্রবাসী কর্মী দেশে যেতে হাইকমিশনে আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন। মানবিক দিক বিবেচনা করে এ দুই প্রবাসী কর্মীকে হাইকমিশনারের নির্দেশে দেশে যেতে তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়।
কোম্পানির ক্ষতিপূরণ আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, এ দুইজন প্রবাসী কোনো কোম্পানিতে চাকরি করতেন কি না তা আবেদনে উল্লেখ করেননি। তবে প্রবাসীদের কল্যাণ নিশ্চিতে হাইকমিশন কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
Advertisement
কোম্পানির ক্ষতিপূরণের বিষয়ে মালয়েশিয়ার একজন আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কর্মীরা সাধারণ আইন এবং ওয়ার্কম্যাম ক্ষতিপূরণ আইনের অধীনে থাকবে, সঠিক পরিস্থিতিতে সোসকোর অধীনেও।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ হাইকমিশনের ফেসবুক পেজে পোস্টটি পড়েছি। এই বাংলাদেশি শ্রমিকদের সোসকো দাবির অধিকারী হওয়া উচিত। এমনকি যদি তারা কাগজপত্রবিহীনও হন তবে তারা বৈধভাবে কাজ করতেন। কোম্পানিকে তাদের সোসকোর প্রতিবেদন জমা দিতে হবে, পুলিশ এবং শ্রম বিভাগে রিপোর্ট করতে হবে এবং তারপর সোসকোতে দাবি করতে হবে। মিশন কেন তাদের বাড়ি ফেরার খরচ বহন করলো, কোম্পানিকে জবাবদিহি করতে হবে।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের এ ঘটনার পেছনের ন্যায্যতা এবং প্রক্রিয়া ঘিরে জনমনে প্রশ্ন, মালয়েশিয়ায় কর্মরত হাজারো বাংলাদেশি শ্রমিকদের সুরক্ষা, ক্ষতিপূরণ এবং অধিকার নিশ্চিত করতে এই দুই একটা ঘটনা সামনে আনার বিপরীতে এ ধরনের সব ঘটনা যত্ন সহকারে দেখা উচিত বলে মনে করছেন মালয়েশিয়া প্রবাসীরা।
এমআরএম/এএসএম