সৌদি আরবে গত রাতে মহররমের চাঁদ দেখা গেছে। হিজরি ক্যালেন্ডারের শেষ মাস জিলহজ শেষ হয়ে শুরু হয়েছে মহররম। শুরু হয়েছে হিজরি নতুন বছর ১৪৪৭।
Advertisement
বাংলাদেশে আজ জিলহজের ২৯ তারিখ। আজ সূর্যাস্তের পর নতুন চাঁদ দেখা গেলে বাংলাদেশে হিজরি নতুন বছরের মহররম মাস শুরু হবে। যেহেতু বাংলাদেশ এবং সৌদি আরবের হিজরি তারিখের মধ্যে সাধারণত এক দিন পার্থক্য হয়, তাই আশা করা যাচ্ছে আজই বাংলাদেশে মহররমের চাঁদ দেখা যাবে।
হিজরি সাল গণনা করা হয় আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হিজরতের বছর থেকে। এটি চন্দ্রবর্ষ বা চাঁদের হিসাব অনুযায়ী গণনা করা হয়। নতুন চাঁদ উঠলে হিজরি ক্যালেন্ডারের নতুন মাস শুরু হয়। হিজরি ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস মহররম, শেষ মাস জিলহজ। ধারাবাহিকভাবে হিজরি ক্যালেন্ডারের মাসগুলো হলো, ১. মহররম, ২. সফর, ৩. রবিউল আউয়াল, ৪. রবিউস সানি, ৫. জমাদিউল আউয়াল, ৬. জমাদিউস সানি, ৭. রজব, ৮. শাবান, ৯. রমজান, ১০. শাওয়াল, ১১. জিলকদ, ১২. জিলহজ।
আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যুগে চন্দ্রমাসগুলোর হিসাব রাখা হলেও মুসলমানদের কোনো সাল ছিল না। হজরত ওমরের (রা.) খেলাফতকালে আল্লাহর রাসুলের হিজরতের বছরকে সূচনাবর্ষ ধরে হিজরি সাল গণনা করা শুরু হয়।
Advertisement
হজরত ওমর (রা.) কেন হিজরি সাল প্রবর্তনের প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন এ ব্যাপারে কয়েকটি বর্ণনা পাওয়া যায়। ইবনে হাজার আসকালানি (রহ.) ফাতহুল বারিতে লিখেছেন, হজরত ওমরের (রা.) হিজরি সাল প্রবর্তনের বেশ কিছু কারণ উল্লেখ করা হয়। এর মধ্যে একটি হলো যা আবু নুয়াইম তার ইতিহাসগ্রন্থে লিখেছেন যে, সাহাবি আবু মুসা আশআরি (রা.) ওমরের কাছে একটি চিঠিতে লেখেন, আপনার কাছ থেকে আমাদের কাছে অনেক চিঠি আসে, সেগুলোতে কোনো তারিখ থাকে না। তখন ওমর (রা.) পরামর্শের জন্য সবাইকে একত্র করেন। তাদের কেউ কেউ বলেন আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নবুয়ত লাভের বছরটিকে মুসলমানদের সালের সূচনাবর্ষ ধরা হোক, কেউ বলেন হিজরতের বছরটিকে সূচনাবর্ষ ধরা হোক। তখন ওমর (রা.) বলেন, হিজরতই হক ও বাতিলকে পৃথক করে দিয়েছে। তাই হিজরতের বছর থেকেই আমাদের সাল গণনা হোক। তখন ছিল সতের হিজরি অর্থাৎ আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হিজরতের পরবর্তী ১৭তম বছর।
হিজরতের বছর থেকে সাল গণনার ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছার পর ক্যালেন্ডারের প্রথম মাস কোনটি হবে সে বিষয়ে পরামর্শ হয়। কেউ কেউ রমজানকে প্রথম মাস ধরতে বলেন। ওমর (রা.) বলেন, মহররম প্রথম মাস হতে পারে যে মাসে মানুষ হজ থেকে ফিরে আসে। এই প্রস্তাবে সবাই একমত হয়। (ফাতহুল বারি)
ইসলামের অনেক বিধান হিজরি ক্যালেন্ডারের তারিখ অনুযায়ী পালন করতে হয়। তাই মুসলমানদের জন্য হিজরি ক্যালেন্ডারের হিসাব রাখা, মাসের শুরুতে নতুন চাঁদ উঠেছে কি না দেখা, খবর রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কোরআনে আল্লাহ বলেছেন,
یَسۡـَٔلُوۡنَكَ عَنِ الۡاَهِلَّۃِ قُلۡ هِیَ مَوَاقِیۡتُ لِلنَّاسِ وَ الۡحَجِّতারা তোমাকে নতুন চাঁদ সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, তা মানুষের ও হজের জন্য সময় নির্ধারক। (সুরা বাকারা: ১৮৯)
Advertisement
আল্লাহর রাসুল (সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিজে চাঁদ দেখতেন এবং অন্যদেরও চাঁদ দেখতে উৎসাহিত করতেন যেন ইবাদতের সাথে সম্পৃক্ত চন্দ্রমাসগুলোর হিসাব রাখা যায়। হিজরি ক্যালেন্ডারের হিসাব রাখা ফরজে কেফায়া। প্রত্যেক দেশ ও সমাজের কিছু মানুষ হিজরি ক্যালেন্ডারের হিসাব সংরক্ষণ করলে তা সবার জন্য যথেষ্ট হবে। কেউ হিসাব না রাখলে সবাই গুনাহগার হবে।
ওএফএফ/এএসএম