খুলনার রূপসায় একের পর এক হামলা, গোলাগুলি, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, প্রাথমিক পর্যায়ে এসব গোলাগুলি, হামলা, খুন বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে হলেও পেছনে রয়েছে মাদক ব্যবসার দ্বন্দ্ব।
Advertisement
খুলনার রূপসা উপজেলার উত্তরে তেরখাদা, দক্ষিণে বটিয়াঘাটা ও ফকিরহাট উপজেলা, পূর্বে ফকিরহাট ও মোল্লাহাট উপজেলা এবং পশ্চিমে খুলনা সিটি সদর ও দিঘলিয়া উপজেলা। খুলনা শহর থেকে এসব অঞ্চল ব্যবহার করে খুব সহজে মাদক পাচার কিংবা যে কোনো অপরাধ কার্যক্রম করে বেরিয়ে আসা যায়। প্রধান সড়ক ব্যতিত অন্য কোথাও নেই চেকপোস্ট কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৩ জুন দিনগত রাতে বনি আমিন নামের এক যুবককে গুলি করে অর্থ লুট করে নিয়ে যায় দুবৃর্ত্তরা। তার আগে ৯ জুন সকালে রনি ব্রিকসের কাছে আঠারবাকি নদীর চর থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের (৩৫) গলিত মরদেহ উদ্ধার করে নৌপুলিশ। ৮ জুন উপজেলার আইচগাতী উত্তর পাড়া এলাকা থেকে প্রবাসীর স্ত্রী সুমাইয়া খাতুন জান্নাত (২৫) নামের এক গৃহবধূর মৃতদেহ তার শ্বশুরবাড়ির নিজ ঘর থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ওইদিন মধ্যরাতে নৈহাটি ইউনিয়নের একটি গ্রামের এক যুবককে একই গ্রামের মো. পারভেজ, রাতুল ও মো. মাসুদ রূপসা কলেজের পাশে একটি বাড়িতে আটকে রেখে মারধর করেন এবং তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেন। ৯ জুন সকালে ওই নারীকে উদ্ধার করে তার স্বামী ও স্বজনরা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।
এরআগে, ৭ জুন উপজেলার শ্রীফলতলা গ্রামের ইদ্রিস আলীর কলা বাগানের মধ্যে আইচগাতীর মিল্কি দেয়াড়া এলাকার ভ্যানচালক রবিউল ইসলাম (২১) নামের এক যুবকের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। তার আগে ২৫ মে রাত সাড়ে ১১টার দিকে রূপসা উপজেলার মোছাব্বরপুর গ্রামে দুর্বৃত্তের গুলিতে রনি ওরফে কালো রনি (৩৮) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। দুর্বৃত্তরা তাকে গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে স্থানীয় স্বপনের ভিটায় ফেলে পালিয়ে যায়।
Advertisement
পুলিশের একটি সূত্র জানায়, খুলনা শহরে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা রূপসা উপজেলা ঘিরে নিজেদের আস্তানা গড়ে তুলেছেন। খুলনা থেকে রূপসার অদূরে গ্রামাঞ্চল হওয়ায় এবং বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা সংলগ্ন হওয়ায় মাদক ব্যবসায়ীরা সেখান থেকে তাদের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন। খুলনা শহর ও বিভিন্ন এলাকায় খুব কম সময়ে প্রবেশ করে মাদক সরবরাহ করে আবার রূপসায় ফিরে যাচ্ছেন তারা। এরসঙ্গে জড়িত কয়েকটি গ্রুপ আর শতাধিক কিশোর।
রূপসা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেন, রূপসায় ঘটে যাওয়া সবগুলো ঘটনার তদন্ত চলছে। সন্ত্রাসী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
সম্প্রতি রূপসা অঞ্চল মাদকের হটস্পটে পরিণত হয়েছে বলে জানান খুলনা জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমান।
তিনি বলেন, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরাই মাদক ব্যবসায়ী। প্রতিনিয়ত তারা রুট এবং অবস্থান পরিবর্তন করছেন। নিজেদের মাদক ব্যবসার আধিপত্য বিস্তারে প্রতিপক্ষকে জানান দিতে বিভিন্ন জায়গায় গুলি করে পালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা এদেরকে প্রতিহত করতে গোয়েন্দা নজরদারি এবং বিশেষ অভিযান অব্যাহত রেখেছি।
Advertisement
খুলনা জেলা পুলিশ সুপার টি এম মোশাররফ হোসেন বলেন, এসব বিষয়ে বিশেষ নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সবসময় ভালো রাখতে পুলিশ কাজ করছে।
আরিফুর রহমান/এসআর/জিকেএস