ধর্ম

নবিজিকে (সা.) ইহুদির বিষ প্রয়োগ, তারপর যা ঘটেছিল

নবিজিকে (সা.) ইহুদির বিষ প্রয়োগ, তারপর যা ঘটেছিল

নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মদিনায় হিজরতের পর মদিনার ইহুদিদের সাথে মৈত্রী গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। মক্কার মুশরিকদের বিরুদ্ধে মদিনার মুসলমান ও ইহুদিদের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। মদিনার ইহুদিদের সঙ্গে তিনি একটি চুক্তিও করেছিলেন, যা মদিনা সনদ নামে পরিচিত।

Advertisement

কিন্তু ইহুদিরা নবিজিকে (সা.) সহযোগিতা করেনি। বরং তারা নবিজিকে (সা.) শত্রু জ্ঞান করতে শুরু করে। তারা চুক্তি ভঙ্গ করে, মক্কার মুশরিকদের চক্রান্তে যোগ দেয় এবং বিভিন্নভাবে নবিজি (সা.) ও মুসলমানদের ক্ষতি করতে তৎপর হয়। নবিজিকে (সা.) হত্যা করার চেষ্টাও করে। ফলে মুসলমানদের সাথে মদিনার ইহুদিদের বেশ কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং প্রতিটি যুদ্ধেই ইহুদিরা পরাজিত হয়।

সপ্তম হিজরিতে মুসলমানরা ইহুদিদের সর্বশেষ ও শক্তিশালী ঘাঁটি খায়বার আক্রমণ করে। খায়বারের যুদ্ধেও ইহুদিরা পরাজিত হয়ে মুসলমানদের সাথে চুক্তি করতে বাধ্য হয়।

খায়বারে ইহুদিদের পরাজয়ের পর এক ইহুদি নারী বিষপ্রয়োগ করে নবিজিকে (সা.) হত্যা করার চেষ্টা করে।

Advertisement

ইহুদি গোত্রগুলোর শত্রুতা ও তাদের সাথে বেশ কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পরও নবিজি (সা.) বেসামরিক ইহুদিদের সাথে ভালো আচরণ করতেন। তাদের বাসায় খাবার পাঠাতেন, তারা কোনো খাবার পাঠালে তা গ্রহণও করতেন। খায়বারের বিজয়ের পর এক ইহুদি নারী ছাগলের মাংস পাঠালে নবিজি (সা.) অন্যান্য সময়ের মতোই ওই মাংস গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু কিছু মাংস খেয়ে তিনি বুঝতে পারেন ওই মাংসে ভয়ংকর বিষ মেশানো আছে, যার কিছু ইতোমধ্যে তার ভেতরেও চলে গেছে। আল্লাহর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিষের প্রভাবে নবিজির (সা.) মৃত্যু হয়নি। কিন্তু ওই বিষের প্রভাব মৃত্যু পর্যন্ত তার শরীরে রয়ে গিয়েছিল।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একবার এক ইহুদি নারী আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে বিষ মেশানো ছাগলের মাংস নিয়ে এলো। তিনি তা থেকে কিছু খেলেন এবং বুঝতে পারলেন খাবারে বিষ আছে।

ওই নারীকে আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাছে নিয়ে আসা হলো। তিনি তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে সে বললো, আমি আপনাকে মেরে ফেলতে চেয়েছিলাম। আল্লাহর রাসুল (সা.) বললেন, আল্লাহ এ ব্যাপারে তোমাকে ক্ষমতা দেননি।

সাহাবিরা নবিজিকে জিজ্ঞাসা করলেন, আমরা কি তাকে হত্যা করবো? নবিজি (সা.) বললেন, না।

Advertisement

আনাস (রা.) বলেন, এরপর থেকে আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আলজিভ ও তালুতে আমি ওই বিষের প্রভাব দেখতে পেতাম। (সহিহ মুসলিম: ৫৫১৭)

ইহুদি নারীর দেওয়া এই বিষাক্ত খাবারের প্রভাবে নবিজির (সা.) শারীরিক যন্ত্রণাও হতো। মৃত্যু পূর্ববর্তী অসুস্থতার সময়ও তিনি ওই বিষের যন্ত্রণা অনুভব করেছিলেন। উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) যে রোগে ইন্তিকাল করেছেন, সে রোগে আক্রান্ত হওয়ার পর একদিন বলেছিলেন, আয়েশা! খায়বারে বিষ-মিশ্রিত যে খাবার আমি খেয়েছিলাম, আমি সব সময় তার যন্ত্রণা অনুভব করি। আর এখন মনে হচ্ছে, আমার শিরাগুলো ওই বিষের ক্রিয়ায় ফেটে যাচ্ছে। (সহিহ বুখারি: ৪৪২৮)

এ কারণে নবিজির (সা.) বিখ্যাত জীবনীকার ইবনে ইসহাক (রহ.) তার সিরাতগ্রন্থে লিখেছেন, নবিজি (সা.) শহীদ হয়েছিলেন। খায়বারের ওই বিষের প্রভাবেই শেষ পর্যন্ত তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন।

ওই নারীর ভাগ্যে কী ঘটেছিল?

হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) আল-ইসাবা গ্রন্থে লিখেছেন, জয়নব বিনতে হারিস ইবনে সালামই সেই ইহুদি নারী যিনি নবিজিকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিষ মেশানো ছাগলের মাংস খাওয়ান। এরপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেন, ফলে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে ছেড়ে দেন। তাকে তিনি কোনো রকম শাস্তি দেননি।

এটি নবিজির (সা.) উদারতা ও মহানুভবতার অনন্য দৃষ্টান্ত।

ওএফএফ/এমএস