বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় এক লাখ শিক্ষক নিয়োগে ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হবে আজ। এ গণবিজ্ঞপ্তি ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) কার্যালয় এলাকা। ভিন্ন ভিন্ন দাবি নিয়ে দুটি পক্ষ সোমবার (১৬ জুন) সকাল ১০টা থেকে রাজধানীর ইস্কাটনে সংস্থার সামনের সড়কে এসব কর্মসূচি করছেন তারা।
Advertisement
আন্দোলনকারীদের একপক্ষ করছে ‘শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি’। তাদের দাবি—১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে মৌখিক পরীক্ষায় (ভাইভা) অংশ নেওয়া সব প্রার্থীকে সনদ দেওয়ার ঘোষণা দিতে হবে।
আরেকপক্ষ করছে ‘লং মার্চ টু এনটিআরসিএ’। তাদের দাবি— বয়স ও সনদের মেয়াদ শিথিল করে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নিয়োগ দেওয়ার। তারা মূলত ১-১২তম শিক্ষক নিবন্ধনে উত্তীর্ণ হয়েও নানা কারণে নিয়োগবঞ্চিত।
ফল পুনর্মূল্যায়ন দাবি ফেল করা প্রার্থীদের১৮তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রিলি ও লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও মৌখিকে রেকর্ড ২০ হাজার ৬৮৮ জন প্রার্থী ফেল করেছেন। তাদের অভিযোগ- চূড়ান্ত ফলাফলে ইচ্ছা করেই তাদের ফেল করিয়ে দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
১-১২তম নিবন্ধনধারীদের লং মার্চ ও অবস্থান
এখন তাদের দাবি—ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন করে ভাইভায় অংশ নেওয়া সবাইকে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ দিতে হবে। দাবি না মানা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।
রোববার (১৫ জুন) দিনভর এনটিআরসিএর সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন তারা। বিষয়টি নিয়ে এনটিআরসিএর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন আন্দোলনকারীদের একটি প্রতিনিধিদল। তাতেও সমাধান মেলেনি। ফলে সোমবারও (১৬ জুন) সকাল থেকে আন্দোলনে নেমেছেন প্রার্থীরা।
‘১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনে সনদবঞ্চিত’ প্রার্থীদের ব্যানারে এদিন সকাল ১০টা থেকে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ শুরু করেন একদল চাকরিপ্রার্থী। তারা দিনভর সেখানে অবস্থান করবেন এবং প্রয়োজনে রাতেও থাকবেন বলে জানিয়েছেন। দাবি আদায় না করা পর্যন্ত তারা ফিরে যাবেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
Advertisement
বয়স ও সনদের মেয়াদ শিথিল করে বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবিতে এনটিআরসিএ অভিমুখে লং মার্চ করছেন ১-১২তম নিবন্ধনধারী প্রার্থীরা। সোমবার সকাল ১০টার দিকে তারাও এনটিআরসিএ কার্যালয়ে যান। পরে সেখানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি করার ঘোষনা দেন। তারাও দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এনটিআরসিএ ছাড়বেন না বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
১-১২তম নিবন্ধনধারী প্রার্থীরা জানান, বৈধ সনদ অর্জন করার পরও তারা চাকরিতে যোগ দিতে পারেননি। বয়সের দোহাই দিয়ে এনটিআরসিএ তাদের অধিকার হরণ করেছে। এটি চাকরি বিধি অনুযায়ী সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও সঠিক নয়।
প্রার্থীরা বলেন, তারা যখন আবেদন করে পাস করেছিলেন, তখন সবার বয়স ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। এনটিআরসিএর ১-১২তম প্রার্থীদের রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করে ৬০ হাজার জাল সনদ দিয়ে অযোগ্যদের চাকরি দিয়েছেন। এতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।
বিগত সরকারের আমলে শাহবাগে ২০০ দিনের আন্দোলন করেছিলেন তারা। সরকার পতনের পরও তারা কর্মসূচি করে আসছেন। এরপরও তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
গত বছরের ২৩ ডিসেম্বর এনটিআরসিএ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হলেও তাদের নিয়োগে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে তারা বয়স ও সনদের মেয়াদ শিথিল করে ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদনের সুযোগ অথবা বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তাদের নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
তবে দুই পক্ষের কারও দাবি মানার এখতিয়ার এনটিআরসিএর হাতে নেই বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মুহম্মদ নূরে আলম সিদ্দিকী। তিনি বলেন, ‘ভাইভায় ফেল করে যারা ফলাফল পুনর্মূল্যায়ন চাইছেন, তাদের আমরা জানিয়েছি—এটি বিধিমালায় নেই। এটা করার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও তাদের দাবির বিষয়টি আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নিলে নিতে পারে। আমাদের হাতে কিছুই নেই।’
১-১২তম নিবন্ধনধারীদের বিষয়টি নিয়েও এনটিআরসিএর আর কিছু করার নেই বলে জানান সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিধিমালায় বয়স, সনদের মেয়াদ সবই রয়েছে। আমরা চাইলেও বিধিমালার বাইরে যেতে পারি না। বিশেষ কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যায় কি না, তা বিবেচনা করতে আমরা আগেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে রেখেছি। মন্ত্রণালয় আমাদের কিছু জানায়নি। ফলে বয়স ও সনদের মেয়াদ শিথিলের দাবি নিয়ে যারা এসেছেন, তাদের জন্যও আমাদের কিছু করার নেই।
আজই গণবিজ্ঞপ্তি, পত্রিকায় প্রকাশ কালএদিকে, প্রায় এক লাখ শিক্ষক নিয়োগে আজ সোমবারই ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছে এনটিআরসিএ। বিকেলে বা সন্ধ্যার দিকে এনটিআরসিএর ওয়েবসাইটে এবং আগামীকাল মঙ্গলবার (১৭ জুন) জাতীয় পত্রিকায় এ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে। এতে ৯০ হাজারের কিছু বেশি পদ থাকতে পারে।
আগামী ২২ জুন থেকে ষষ্ঠ গণবিজ্ঞপ্তিতে অনলাইনে আবেদন শুরু হবে। এ আবেদনপ্রক্রিয়া চলবে ১০ জুলাই পর্যন্ত। তবে আবেদন ফি জমা দেওয়া যাবে ১৩ জুলাই পর্যন্ত। আবেদন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার টাকা।
একজন প্রার্থী শূন্য পদের তালিকা থেকে তার আবেদনে সর্বোচ্চ ৪০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পছন্দ দিতে পারবেন। তবে পছন্দক্রম ছাড়াও যদি কোনো প্রার্থী অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতে ইচ্ছুক হন, তাহলে সেই পছন্দও (অপশন) দিতে পারবেন।
এদিকে, নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশের তারিখে প্রার্থীর বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩৫ বছর অথবা নিবন্ধন সনদের মেয়াদ তিন বছর থাকতে হবে।
এএএইচ/এমআরএম/জেআইএম