জুলাই-আগস্টের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে।
Advertisement
সোমবার (১৬ জুন) ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। সেকারণে সকালে তাকে কারাগার থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।
এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মামলার শুনানি হবে। এদিন তাদের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথাও রয়েছে।
এর আগে গত ১ জুন শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল।
Advertisement
ওইদিন সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের আইজিপি আবদুল্লাহ আল মামুনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়।
ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের অভিযোগে বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে সাড়ে ১৪০০ ছাত্র-জনতাকে হত্যার দায় শেখ হাসিনার। তার নির্দেশ, উসকানি ও প্ররোচনায় হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ও যুবলীগ। শেখ হাসিনার নির্দেশে আন্দোলন দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার প্রমাণ মিলেছে বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন।
তাদের তিন জনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগশেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
প্রথম অভিযোগ, গত বছরের ১৪ জুলাই গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা উসকানিমূলক বক্তব্য দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আসাদুজ্জামান খান ও চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনসহ তৎকালীন সরকারের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্ররোচনা, সহায়তা ও সম্পৃক্ততায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সশস্ত্র আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মাত্রায় ও পদ্ধতিগতভাবে নিরীহ–নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর আক্রমণ করে। এতে হত্যা, হত্যাচেষ্টা, নির্যাতন ও অন্যান্য অমানবিক আচরণের ঘটনা ঘটে।
Advertisement
দ্বিতীয় অভিযোগ, হেলিকপ্টার, ড্রোন ও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের নির্মূল করার নির্দেশ দেন শেখ হাসিনা। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপি তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ও অধীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মাধ্যমে সেই নির্দেশ কার্যকর করেন।
তৃতীয় অভিযোগ, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করার ঘটনায় শেখ হাসিনার পাশাপাশি তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও আইজিপিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
চতুর্থ অভিযোগ, রাজধানীর চাঁনখারপুলে আন্দোলনরত নিরীহ–নিরস্ত্র ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
পঞ্চম অভিযোগ, আশুলিয়ায় নিরীহ নিরস্ত্র ছয়জনকে আগুনে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
আনুষ্ঠানিক অভিযোগের সঙ্গে সাক্ষ্যপ্রমাণ হিসেবে প্রত্যক্ষদর্শী ও জীবিত ভুক্তভোগীদের সাক্ষ্য, অপরাধ সংঘটনের সময় ধারণকৃত ভিডিও ফুটেজ, ড্রোন ও সিসিটিভি ফুটেজ, আসামিদের টেলিফোন সংলাপের অডিও ক্লিপ, ডিজিটাল সাক্ষ্যপ্রমাণের ফরেনসিক প্রতিবেদন, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত তথ্য, ছবি ও ভিডিও, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার প্রতিবেদন এবং বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সংস্থা থেকে পাওয়া দাপ্তরিক নথিপত্র ইত্যাদি ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করা হয়েছে।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের পর ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ট্রাইব্যুনালে এখন পর্যন্ত তিনটি মিস কেস বা বিবিধ মামলা হয়েছে।
এর মধ্যে গণ–অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত বিবিধ মামলায় গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। সেই তদন্ত প্রতিবেদন যাচাই–বাছাই ও পর্যালোচনার পর তা ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আকারে দাখিল করা হয়েছে।
এ ছাড়া শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ শাসনামলের সাড়ে ১৫ বছরে গুম-খুনের ঘটনায় একটি এবং ২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আরেকটি বিবিধ মামলা আছে ট্রাইব্যুনালে।
এফএইচ/এসএনআর/জেআইএম