ক্যাম্পাস

বকুলতলায় নাচ-গান-আবৃত্তিতে বর্ষাকে বরণ

বকুলতলায় নাচ-গান-আবৃত্তিতে বর্ষাকে বরণ

গ্রীষ্ম বিদায় দিতে আষাঢ়ের প্রথম দিনকে নাচ-গান-আবৃত্তি দিয়ে বরণ করে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) চারুকলা অনুষদের বকুলতলা। রোববারর (১৫ জুন) সকালে ‘বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদ’র পক্ষ থেকে এই আয়োজন করা হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষজন উৎসবে অংশ নেন।

Advertisement

সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে শিল্পী সোহানী মজুমদারের সেতারবাদনে ‘রাগ আহীর ভৈরব’ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। পরে একে একে নাচ, গান আর আবৃত্তি মধ্য দিয়ে বরণ করা হয় বর্ষাকে।

গান, নৃত্য, আবৃত্তি আর কথন দিয়ে সাজানো অনুষ্ঠানে একের পর এক চলতে থাকে পরিবেশনা। আয়োজনে বর্ষা নিয়ে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পীরা। শিল্পী ইয়াসমিন মুশতারি ‘রিমঝিম ঘন ঘন রে বরষে’, সালাউদ্দিন আহমেদ ‘বরষা এলো ওই বরষা’, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ‘শাওন আসিল ফিরে সে ফিরে এলো না’, নবনীতা জাইদ চৌধুরী ‘শ্যামা তন্বী আমি মেঘ বরণা’, অনিমা রায় ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান’, শামা রহমান ‘মেঘের পরে মেঘ জমেছে আঁধার পরে আসে’, মকবুল হোসেন ‘আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে’, ফেরদৌসী কাকলি ‘গহন রাতে শ্রাবণ ধারা’ পরিবেশন করেন। বিমান চন্দ্র বিশ্বাস ‘আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানি রে’ লোকসংগীত গেয়ে শোনান। শ্রাবণী গুহ রায় বিখ্যাত ‘কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া’ গানটি করেন।

আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি, আহসান উল্লাহ তমাল। আবৃত্তি, সঙ্গীত ও নৃত্যের কোলাজ পরিবেশন করে শিল্পবৃত্ত।

Advertisement

বর্ষাকথন পর্বে ঘোষণা পাঠ করেন বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট। তিনি বলেন, ষড়ঋতুর দেশে বাংলার জীবনধারা পাল্টে যাচ্ছে দ্রুত, সেই সঙ্গে বদলে যাচ্ছে ঋতুর চরিত্র। গ্রীষ্ম হয়ে উঠছে খরতর, বর্ষা অনেক রুষ্ট এলোমেলো, শীত একাধারে নরম ও চরম, বসন্ত ক্ষীয়মাণ। প্রকৃতির ওপর মানুষের সীমাহীন অনাচার জন্ম দিয়েছে বিশ্বজনীন সংকটের। ভূপৃষ্ঠ হয়েছে তপ্ততর, সমুদ্রজল স্ফীত, ওজন বলয় ক্ষতিগ্রস্ত। আধুনিক জীবনযাত্রা গড়ে তুলছে অপচয়ের পাহাড়, মাটি খুঁড়ে প্রকৃতির সম্পদ গোগ্রাসে গিলছে মানুষ, প্রয়োজনের সীমানা-ছাপানো অপ্রয়োজনের ভারে পিষ্ট ও বিপন্ন আজকের পৃথিবী। সভ্যতার দন্ত ও প্রকৃতির ঔদায়ের মধ্যে বৈরিতা মানব-অস্তিত্বের জন্য তৈরি করছে হুমকি। প্রকৃতি আজ মানবের কাছে দাবি করছে সংবেদনশীলতা ও সহমর্মিতা, জীবনযাপন ও প্রকৃতির মধ্যে সমঝোতা তৈরি ছাড়া মানবের মুক্তির ভিন্ন পথ নেই।

তিনি আরও বলেন, ঋতুচক্রে আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে, এসেছে নবধারাজলে স্নাত বর্ষাঋতু। অনাদিকালের কবি বর্ষার মেঘ অবলম্বনে পাঠিয়েছিলেন প্রেমের বারতা, বাঙালির কবি মানবের রূপ দেখেছিলেন বর্ষার মাঝে। নাগরিক কবি রাজপথে বৃষ্টির ঝাপটায় লক্ষ করেন প্রকৃতির সংহারক রূপ, শুনতে পান ইসরাফিলের শিঙাধ্বনি। অনন্তকালের বাণী নিয়ে আজকের বর্ষাবন্দনায় আমরা মুখরিত হই গীতি-কবিতা-নৃত্যচ্ছন্দে, প্রকৃতির সঙ্গে মানবের মিলনের প্রত্যয় নিয়ে। বর্ষার মিলনপিয়াসী মানস আমাদের সচকিত করে মানবসমাজে সৃষ্ট ঘৃণা বিদ্বেষ সংঘাত রোধে, প্যালেস্টাইনে, দেশে দেশে, স্বদেশে। বর্ষার জলধারায় সিক্ত হোক সবার জীবন, হোক আনন্দময় ও কল্যাণব্রতী।

উৎসবের শেষ পর্যায়ে বর্ষা উৎসবে ধরিত্রীকে সবুজ করার লক্ষ্যে প্রতীকীভাবে শিশু-কিশোরদের মাঝে বনজ, ফলদ ও ওষুধি গাছের চারা বিতরণ করেন তারা।

এফএআর/জেএইচ/এএসএম

Advertisement