লাইফস্টাইল

বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করবে যে ৭ চর্চা

বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করবে যে ৭ চর্চা

মানসিক সুস্থতা শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে বয়স বাড়ার সঙ্গে কিছু সমস্যা বাড়তে পারে। বয়সের সঙ্গে জ্ঞানের সমৃদ্ধি আসে, কিন্তু এটি একাকীত্ব, উদ্বেগ, স্মৃতিশক্তির পরিবর্তন বা শক্তির অভাবের মতো সমস্যাও নিয়ে আসে। তবে ভালো খবর হলো, বয়স্করা প্রতিদিন সহজ কিছু জিনিস চর্চা করে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে পারবেন।

Advertisement

চলুন জেনে নেওয়া যাক বৈজ্ঞানিকভাবে সমর্থিত এমন ৭টি উপায়, যা আপনার পরিবারের বয়স্ক সদস্যদের ভালো থাকতে সাহায্য করবে-

১. সকাল শুরু করুন একটি উদ্দেশ্য নিয়ে

দিনের শুরুতে একটি উদ্দেশ্য নিয়ে ঘুম থেকে উঠলে মন সতেজ ও ইতিবাচক থাকে। গাছে পানি দেওয়া, হাঁটার পরিকল্পনা করা বা প্রিয়জনের সঙ্গে ফোনে কথা বলা – প্রতিদিনের এমন ছোট ছোট দৈনিক লক্ষ্য স্থির করুন। তাহলে সেই কাজগুলো করার পরে এক ধরনের অর্জনের অনুভূতি হবে। সেই সঙ্গে এগুলো মনোযোগ ও অনুপ্রেরণা বাড়ায়। জীবনে উদ্দেশ্য থাকা মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকিও কমাতে পারে।

Advertisement

২. সামাজিক সম্পর্ক বজায় রাখুন

একাকীত্ব বয়স্কদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। তাই ভার্চুয়ালি হলেও পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়তিম যোগাযোগ রাখা দরকার। সামনাসামনি আড্ডা দেওয়ার সুযোগ না থাকলে ভিডিও কলের মাধ্যমে সামাজিক সম্পর্কগুলো বজায় রাখুন। নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগ মানসিক চাপ ও হতাশার ঝুঁকি কমায় এবং মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে।

৩. প্রতিদিন মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখুন

পেশির মতো মস্তিষ্কেরও নিয়মিত ব্যায়াম প্রয়োজন। সংবাদপত্র পড়ুন, শব্দের খেলা বা পাজল মেলান। আলঝেইমার অ্যাসোসিয়েশনের মতে, মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখলে বয়স্কদের স্মৃতিশক্তি উন্নত হয় এবং জ্ঞানীয় দক্ষতা দীর্ঘস্থায়ী হয়। তাই শরীরের পেশির মতো মস্তিষ্ককেউ সচল রাখা জরুরি।

Advertisement

৪. কৃতজ্ঞতা ও মাইন্ডফুলনেস চর্চা করুন

প্রতিদিন তিনটি জিনিস লিখুন যার জন্য আপনি কৃতজ্ঞ – এই সহজ অভ্যাস মন ভালো রাখতে সাহায্য করে। গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, মেডিটেশন বা এক কাপ চা উপভোগ করার মতো মাইন্ডফুলনেস চর্চা করুন। মাইন্ডফুলনেস হলো সম্পূর্ণভাবে বর্তমান মুহূর্তে থাকা ও মনোযোগ দিয়ে অনুভব করা। এগুলো উদ্বেগ কমায় ও মানসিক শান্তি আনে। মাইন্ডফুলনেস রক্তচাপ কমায় এবং ঘুমের উন্নতি করে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

৫. শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন

হাঁটা, স্ট্রেচিং বা ইয়োগার মতো হালকা ব্যায়াম এন্ডোরফিন ও সেরোটোনিনের মতো রাসায়নিক নিঃসরণ করে, যা মন ভালো রাখে। নিয়মিত ব্যায়াম করা বয়স্কদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগ কম দেখা যায় এবং তাদের মানসিক স্পষ্টতা বেশি থাকে।

৬. মস্তিষ্কের জন্য উপকারী খাবার খান

আপনি যা খান, তা আপনার অনুভূতিকে প্রভাবিত করে। ফল, শাকসবজি, বাদাম, বীজ, গোটা শস্য ও ওমেগা-৩ ফ্যাটযুক্ত খাবার মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও মানসিক সুস্থতাকে রক্ষা করে। আখরোট, পালং শাক ও চর্বিযুক্ত মাছ প্রদাহ কমায় এবং মস্তিষ্কের বার্ধক্যজনিত সমস্যা ধীর করে।

৭. নেতিবাচক সংবাদ ও ট্রিগার সীমিত করুন

সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ক্রমাগত দুঃসংবাদ দেখলে মানসিক অবস্থা ও ঘুমের উপর প্রভাব পড়ে। তাই স্ক্রিন টাইম সীমিত করুন এবং ঘুমানোর আগে নেতিবাচক বিষয়বস্তু এড়িয়ে চলুন। পরিবর্তে হালকা মনের অনুষ্ঠান দেখুন, গান শুনুন বা বই পড়ে ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুন।

মানসিক সুস্থতার জন্য বড় পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই, প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসই শরীর ও মনকে হালকা রাখতে পারে। সামাজিকভাবে যুক্ত থাকা, সক্রিয় থাকা ও সচেতন থাকার মাধ্যমে বয়স্করা প্রখর চিন্তাশক্তি, ভালো মেজাজ ও আনন্দময় জীবন উপভোগ করতে পারেন।

সূত্র: টাইমস্ অব ইন্ডিয়া

এএমপি/এএসএম