সোশ্যাল মিডিয়া

গোপাল সাঁওতালের জন্য মানবিক আবেদন

গোপাল সাঁওতালের জন্য মানবিক আবেদন

সীমান্ত সজল

Advertisement

ঘরের মেঝেতে একটা ছোট গোলাকার গর্ত। সেই গর্তে শিশু সন্তানটিকে ঢুকিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। শিশুটির মাথা ও হাত দুটি যাতে বাইরে থাকে—এমন করে গর্তটি করা হয়েছে। ক্ষুধার সময় প্রচণ্ড কান্নাকাটি করলে মা শিশুটিকে গর্তে ঢুকিয়ে খাওয়ান।

শিশুটির নাম গোপাল সাঁওতাল। বয়স সাড়ে তিন বছর। জন্ম থেকে সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। কুলাউড়ার মুরইছড়া চা বাগানে বাস করা সনচড়ি সাঁওতাল ও অনিল সাঁওতালের একমাত্র সন্তান সে। শিশুটি স্বাভাবিকভাবে দাঁড়াতে বা বসতে পারে না। তাই খাওয়ানো ও অন্যান্য পরিচর্যার জন্য মা সনচড়ি এই রকম একটা গর্ত করেছেন। ঘরের মেঝেতে করা সেই গোলাকার গর্তে সন্তানকে দাঁড় করিয়ে খাওয়ান, যত্ন করেন। না হলে সে ভাঁজ হয়ে পড়ে থাকে।

মা সনচড়ি ঘরের কাজ সামলানোর পাশাপাশি সারাক্ষণ ছেলেকে দেখে রাখেন। বাবা অনিল সাঁওতাল চা বাগানে কাজ করেন। অভাব-অনটনের সংসারে সন্তানের চিকিৎসা করানো তাদের পক্ষে প্রায় অসম্ভব।

Advertisement

আরও পড়ুন কবি হেলাল হাফিজের পুরস্কারের নেপথ্যে  বনশ্রীতে খাদে পড়া বাসের যাত্রীর বয়ান 

এক দুপুরে মুরইছড়া চা বাগানের স্কুল টিলা এলাকায় গেলে ঘরের ভেতর এমন একটা দৃশ্য চোখে পড়ে। জিজ্ঞেস করলে সনচড়ি সাঁওতাল জানান, শিশুটির চিকিৎসার জন্য সিলেটের খাদিমনগরের একটি সামাজিক প্রতিবন্ধী পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সেখানকার চিকিৎসক বলেছেন, শিশুটিকে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দিতে হবে—এটাই তার উন্নতির একমাত্র পথ।

কিন্তু এ ধরনের থেরাপি নিয়মিত নেওয়ার মতো আর্থিক সামর্থ নেই এই পরিবারের। শিশুটি কি সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতা পাবে—তা-ও তিনি জানেন না। তিনি বলেন, ছেলেটির কান্না আর কষ্ট আমি কী করে সহ্য করি। তাই বুদ্ধি করে এই গর্তটি করেছি। সেখানে ঢুকালে ছেলেটি একটু দাঁড়াতে পারে। সামর্থ থাকলে যন্ত্রপাতি কিনে আনতাম। এরকম প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের জন্য নাকি ডিজাইন করা অনেক যন্ত্রপাতি আছে।

একমাত্র সন্তানটি যেন একদিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে, নিজের মতো করে হাঁটতে পারে—এটাই একমাত্র চাওয়া বাবা-মায়ের। নুন আনতে পান্তা ফুরানো পরিবারে প্রতিবন্ধী ছোট্ট শিশুটি বিনা চিকিৎসায় পড়ে থাকবে—সেটা কারো কাম্য হতে পারে না।

লেখক: নির্মাতা ও চিত্রনাট্যকার।

Advertisement

এসইউ/জিকেএস