এবারের বাজেটে রেভিনিউ আহরণকে প্রধান টার্গেট করা হয়েছে বলে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ)। তিনি বলেন, এ বাজেটে করপোরেট কর ও ব্যক্তি খাতের করের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভর করা হয়েছে। পদ্ধতিগত সীমাবদ্ধতার কারণে সরকারের রাজস্ব আয় কম। কিন্তু এটা যে বাড়বে, সে রকম কোনো দিকনির্দেশনা এই বাজেটে নেই।
Advertisement
তিনি আরও বলেন, করজাল বাড়ানোর কোনো পদক্ষেপ আমরা এ বাজেটে দেখছি না। বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানো, ব্যবসাবান্ধব হওয়া এবং কর্মসংস্থান বাড়ানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হলেও এসব লক্ষ্য অর্জিত হওয়া দুরূহ।
মঙ্গলবার (৩ জুন) প্রস্তাবিত ২০২৫-২০২৬ অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটের ওপর প্রতিক্রিয়ায় বিসিআই এসব কথা বলে।
প্রতিক্রিয়ায় বিসিআই সভাপতি আরও বলেন, উৎপাদন খাতের বড় শিল্পের কাঁচামালের ভ্যাট বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে পণ্য উৎপাদন খরচ বাড়বে। এর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি কীভাবে কমাবে জানি না। সবকিছু আইএমএফের ফরমুলা অনুযায়ী করা হয়েছে। আইএমএফের ফরমুলা ধরলে ইন্ডাস্ট্রি ক্ষতির মুখে পড়বে। এমনিতেই খরচ অনেক বেশি, জ্বালানির খরচ বেশি, ব্যাংক ঋণের সুদ অনেক বেশি, জ্বালানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। এতসব সংকটের মধ্যেও যেসব ইন্ডাস্ট্রি মোটামুটি প্রতিযোগিতা করে যাচ্ছে সেখানেও শুল্ক ও কর বাড়ানো হয়েছে।
Advertisement
তিনি বলেন, গার্মেন্টসসহ রপ্তানিমুখী শিল্পের নগদ প্রণোদনা ধীরে ধীরে কমিয়ে আনা হচ্ছে। এর ফলে রপ্তানি খাত প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাবে। আমরা নগদ প্রণোদনার পরিবর্তে কোনো ফিসক্যান সাপোর্টও বাজেটে দেখছি না। কটন সুতা ও ম্যান মেইড ফাইবার এর ওপর মূসক উৎপাদন পর্যায়ে প্রতি কেজি ৩ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ৫ টাকা করা হয়েছে। বর্তমানে জ্বালানি সংকটের মধ্যে দেশীয় স্পিনিং মিলসমূহে এই মূসক বৃদ্ধি করলে দেশি টেক্সটাইল ক্ষতির মুখে পড়বে এবং সুতা আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে। স্টিল শিল্পের কাঁচামালের ওপর কর ১৫ থেকে ২৫% করা হয়েছে ও সিমেন্ট শিল্পে কাঁচামালে মূসক ৫ থেকে ১৫% বৃদ্ধি করা হয়েছে যা দেশের আবাসন ও নির্মাণ শিল্প খাত খরচ বেড়ে যাবে।
প্রস্তাবিত বাজেটে টার্নওভার কর শূন্য দশমিক ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১ শতাংশ করা যা দেশের শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বিশেষ করে CMSME খাত বেশি ক্ষতির মুখে পড়বে। আমরা এই টার্নওভার কর বাড়ানোর বিষয় পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব করছি।
ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের বিক্রির ওপর ভ্যাট ৫% থেকে বাড়িয়ে ১৫% করা হয়েছে যা বিশেষ করে উদীয়মান এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য একটি গুরুতর আঘাত হবে। এটা ৫% এ কমিয়ে আনা উচিত।
প্রস্তাবিত বাজেটে তরুণ উদ্যোক্তা সৃষ্টির লক্ষ্যে ১০০ কোটি, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ১২৫ কোটি টাকার তহবিল বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে যা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। এসএমই খাতকে ফরমালাইজেশনের ও ডিজিটাল ঋণ প্রবাহ বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে যা বিসিআই এর প্রস্তাবের প্রতিফলন। এ জন্য অর্থ উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
Advertisement
আমাদের প্রস্তাব হল প্রস্তাবিত বাজেটে খাতভিত্তিক বরাদ্দ করা অর্থ বিশেষ করে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো, জ্বালানি, বিদ্যুৎ ইত্যাদি যেন যথাযথভাবে ও পূর্ণমাত্রায় ব্যবহৃত হয়। বাজেটের বাস্তবায়নকে যেন নিবিড় কমপ্লায়েন্সের মধ্যে নিয়ে আসা হয়। কারণ বাজেট হল প্রয়োজনের সময় ব্যয় হল না বা অর্থ পাওয়া গেল না তাহলে এর সুফল অর্থনীতি ও জনগণ পাবে না।
এমআইএইচএস/এএসএম