ক্যাম্পাস

প্রোগ্রামে না যাওয়ায় ২ ছাত্রীকে হল ছাড়তে ছাত্রদল কর্মীর হুমকি

প্রোগ্রামে না যাওয়ায় ২ ছাত্রীকে হল ছাড়তে ছাত্রদল কর্মীর হুমকি

রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) ছাত্রদলের কর্মসূচিতে না যাওয়ায় বেগম সৈয়দুন্নেছা হলের দুই শিক্ষার্থীকে রুম ছেড়ে দিতে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে শেকৃবি শাখা ছাত্রদলের এক কর্মীর বিরুদ্ধে।

Advertisement

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী নাম তাহসিন আক্তার মুন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৫-১৬ সেশনের শিক্ষার্থী এবং শেকৃবি ছাত্রদলের কর্মী। তাকে বিভিন্ন সময় শেকৃবি শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঙ্গে প্রোগ্রামে অংশ নিতে দেখা গেছে। ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থী হলেন, ১৬-১৭ সেশনের রূপা রহমান ও ২২-২৩ সেশনের উম্মে সুমাইয়া সুপ্তি।

দুই শিক্ষার্থীকে হলে ছেড়ে দিতে হুমকি দেওয়ার মেসেজের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রূপা রহমান বলেন, ‘গত ১ মে থেকে আমাকে ও আমার রুমমেট উম্মে সুমাইয়া সুপ্তিকে ছাত্রদলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন তাহসিন আক্তার মুন। তিনি আমাদের বলেন, ‘ক্লাস করা লাগবে না, প্রোগ্রামে চলো। স্যার ক্লাসে প্রেজেন্ট দিয়ে দেবেন।’

Advertisement

তিনি বিভিন্ন সময়ে বলতেন, আমাদের রুম অন্যদের নামে বরাদ্দ হয়ে গেছে। এমনকি ১৫ তারিখের আগেই রুম ছেড়ে গণরুম বা অন্য কোথাও ওঠতে হবে। তার কথায় সাড়া না দেওয়ায় হল থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন।’

ভুক্তভোগী উম্মে সুমাইয়া সুপ্তি বলেন, ‘তাহসিন আক্তার মুন দীর্ঘদিন ধরে ছাত্রদলের প্রোগ্রামে যেতে চাপ দিয়ে আসছেন। পরীক্ষার আগের দিনও তিনি প্রোগ্রামে ডাকতেন। না গেলে আমাকে ‘বেয়াদব’ আখ্যা দেন এবং সিনিয়রদের মাধ্যমে প্রোগ্রামে যেতে চাপ প্রয়োগ করেন। মনে হচ্ছে ছাত্রলীগের আগের যুগ ফিরে এসেছে। ছাত্রলীগও একইভাবে প্রোগ্রামে যাওয়ার জন্য ডাকতো। তারা (ছাত্রদল) ক্ষমতায় আসার আগেই যা করতেছে, ক্ষমতায় এলে যে কি করবে। তাই প্রশাসনের কাছে আবেদন প্রোগ্রামে যাওয়া নিয়ে এ ধরনের চাপ এখনই যেন বন্ধ হয়’।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বলেন, তাহসিন আক্তার মুনের ছাত্রত্ব শেষ। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মানুযায়ী সিট পাওয়ার যোগ্য না হলেও তিনি বেগম সৈয়দুন্নেছা হলের ৩১৬ নম্বর কক্ষে একাই অবস্থান করছেন। এর আগে তিনি ১০৩ নম্বর কক্ষে ছিলেন।

এ বিষয়ে হলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা জানান, বেগম সৈয়দুন্নেছা হলের প্রভোস্ট বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।

Advertisement

প্রোগ্রামে যাওয়ার জন্য চাপ দেওয়া, হল ছাড়তে হুমকি এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশটের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে বিষয়টি অভিযোগ স্বীকার করেন তাসিন মুন।

তিনি বলেন, ৩১৪ নম্বর রুমের রুপা এবং সুপ্তিকে অন্য রুমে চলে যেতে বলেছি। ওই রুমের দুইজন ১৭ ব্যাচের, তারা নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের পোস্টেড ছিল। প্রভোস্ট ম্যাডাম এ রুমগুলো ফ্যাকাল্টির টপ স্টুডেন্টদের দেওয়ার কথা বলেছিলেন। আমি ভুল করেছি— ম্যাডামের অনুমতি ছাড়া রুম ছাড়ার কথা বলা ঠিক হয়নি, এ জন্য আমি দুঃখিত।

শেকৃবি ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আলমগির কবির বলেন, ‘কাউকে জোর করে প্রোগ্রামে নেওয়া কিংবা ছাত্রলীগ কর্মীদের প্রশ্রয় দেওয়ার কোনো নীতিমালা ছাত্রদলের নেই। এটা যদি কেউ বলে থাকে, তা সম্পূর্ণ তার ব্যক্তিগত মত। ছাত্রদল কখনই কাউকে জোর করে প্রোগ্রামে নেয় না।’

তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের কেউ হলে থাকলে নিজ দায়িত্বে বের হয়ে যাওয়া উচিত। হলে কেউ নৈরাজ্য করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সাইদ আহম্মদ/এমএএইচ/জেআইএম