ভারতের আবহাওয়া অধিদপ্তর মার্চের শেষ দিকে পূর্বাভাস দিয়েছিল, এপ্রিল মাসটি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি গরম হতে পারে। বাস্তবে তা সত্য হয়েছে। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই বড় শহরগুলোর তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল। দ্বিতীয় সপ্তাহে তীব্র গরমে পুড়েছে রাজধানী দিল্লি। এমনকি রাতের তাপমাত্রাও ছিল বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর ফলে গরমজনিত অসুস্থতা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। সবসময়ই উষ্ণ থাকা ভারত দিন দিন আরও গরম হয়ে উঠছে। গত দশক ছিল এ যাবৎকালের উষ্ণতম সময়।
Advertisement
অনেকে বলেন, তাপমাত্রা মোকাবিলায় প্রাকৃতিক ও জ্বালানি-নিরপেক্ষ পদ্ধতি যেমন ভবনের দেওয়ালে সাদা রং, কম কংক্রিট ব্যবহার বা ছাদে প্রতিফলক টাইলস লাগানো যেতে পারে। এগুলো কিছুটা সাহায্য করলেও উত্তর ভারতের গ্রীষ্মের তীব্র গরমের সামনে এরা অকার্যকর। সেখানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র বা এয়ার কন্ডিশনার (এসি) অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। যারা সামর্থ্য রাখে, তারা এরই মধ্যে ব্যাপকভাবে এই যন্ত্র কিনছে—২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বার্ষিক বিক্রি দ্বিগুণ হয়েছে। অনেক যন্ত্র বায়ু বিশুদ্ধ করার কাজও করছে।
আরও পড়ুন>>
ভারতের টিভি সংবাদ যেন রেসলিংয়ের ‘স্যুট পরা সংস্করণ’: দ্য ইকোনমিস্ট ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে চীনা অস্ত্রের সম্ভার চীন-যুক্তরাষ্ট্র চুক্তিতে আশাভঙ্গ ভারতের, অধরাই থাকবে ‘বিশ্ব কারখানা’র স্বপ্ন?তবে সমস্যা হলো, এখনো খুব কম ঘরেই এসি রয়েছে। ভারতে প্রতি ১০ পরিবারের মধ্যে মাত্র একটিতে এটি আছে, যেখানে চীনে দুই-তৃতীয়াংশ এবং মালয়েশিয়ায় পাঁচ ভাগের চার ভাগ পরিবারে এসি রয়েছে। তাপপ্রবাহের সময় বিদ্যুতের ২০ শতাংশ চাহিদা আসে এই যন্ত্রগুলোর জন্য, যার বেশিরভাগই আসে দূষণকারী তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে। এছাড়া, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রগুলো আশপাশে আরও গরম তৈরি করে, যা যাদের কাছে এই যন্ত্র নেই, তাদের দুর্ভোগ বাড়ায়। এদের কুল্যান্ট হিসেবে ব্যবহৃত হাইড্রোফ্লুরোকার্বন আবার শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস।
Advertisement
এর সমাধান একটাই—পরিষ্কার জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার বাড়াতে হবে। ভারত এরই মধ্যে কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। কেন্দ্র ও রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডগুলো কাজ করছে। নবায়নযোগ্য শক্তি (জলবিদ্যুৎসহ) মিলিয়ে ৪৭২ গিগাওয়াট মোট স্থাপিত উৎপাদন সক্ষমতার মধ্যে ২২৪ গিগাওয়াট এসেছে নবায়নযোগ্য উৎস থেকে। ২০৩০ সালের মধ্যে মোট এক হাজার গিগাওয়াটের অর্ধেক নবায়নযোগ্য থেকে আনার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এছাড়া, এয়ার কন্ডিশনারের জন্য নতুন দক্ষতা মানদণ্ড নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে, ভারতকে আরও দ্রুত এগোতে হবে। উত্তর ভারতের সমতলভূমিতে বায়ুদূষণ নিয়মিতভাবে সর্বোচ্চ সীমা ছাড়িয়ে যায়। এর ফলে প্রতিবছর লাখ লাখ মানুষ দূষণজনিত রোগে মারা যায়। আর আকাশ পরিষ্কার হলে উষ্ণতা আরও দ্রুত বাড়বে।
কেএএ/
Advertisement