বাড়িতে কোরবানির উপযুক্ত গৃহপালিত পশু যেমন গরু, ছাগল, ভেড়া ইত্যাদি থাকলেই কোরবানি ওয়াজিব হবে কি না এ রকম প্রশ্ন অনেকে করে থাকেন।
Advertisement
এ প্রশ্নের উত্তর হলো, না, কোরবানি করার উপযুক্ত গৃহপালিত পশুর মালিক হলেই সব অবস্থায় কোরবনি ওয়াজিব হয় না। বরং নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে কোরবানি ওয়াজিব হয়। কারো যদি নেসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকে, সে কোরবানির দিনগুলোতে কোরবানির উপযুক্ত পশুর মালিক হলেও তার ওপর ওই পশু কোরবানি করা ওয়াজিব নয়।
গৃহপালিত পশু যদি নিত্য প্রয়োজনীয় অর্থাৎ শুধু দুধ, যাতায়াত, চাষাবাদ ইত্যাদির জন্য ব্যবহার হয়, তাহলে ওই পশুর মূল্য কোরবানির নেসাব গণনায়ও অন্তর্ভুক্ত হয় না। আর যদি গৃহপালিত পশু ব্যবসার জন্য লালন-পালন করা হলে, তা ব্যবসার সম্পদ গণ্য হবে এবং কোরবানির নেসাব নির্ধারণে তার মূল্য বিবেচনায় আসবে।
কোরবানি যাদের ওপর ওয়াজিবকোরবানি ওয়াজিব মুসলমান প্রাপ্তবয়স্ক, জ্ঞানসম্পন্ন (যিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন নন) মুকিম (যিনি মুসাফির নন) প্রত্যেক এমন পুরুষ ও নারীর ওপর যারা ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা বা এর সমমূল্যের অর্থ-সম্পদের মালিক থাকে।
Advertisement
নগদ অর্থ, সোনা-রুপা, অলংকার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে লাগে না এমন জমি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সব আসবাব কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিন্ন ভিন্ন সম্পদের একত্র মূল্যের পরিমাণ যদি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমান হয়, তাহলেও কোরবানি ওয়াজিব হবে।
কোরবানির ক্ষেত্রে নেসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়; বরং জিলহজের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে যে কোনো সময় নেসাবের মালিক হলেও কোরবানি ওয়াজিব হবে।
অপ্রাপ্তবয়স্ক, পাগল, মুসাফির নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়।
ইসলামে কোরবানির গুরুত্বকোরবানি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরআনে আল্লাহ তাআলা নামাজের সাথে যুক্ত করে কোরবানি করার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন,
Advertisement
اِنَّاۤ اَعۡطَیۡنٰکَ الۡکَوۡثَرَ فَصَلِّ لِرَبِّکَ وَ انۡحَرۡ اِنَّ شَانِئَکَ هُوَ الۡاَبۡتَرُনিশ্চয় আমি তোমাকে কাওসার দান করেছি। সুতরাং তোমার রবের উদ্দেশে সালাত আদায় করো ও কোরবানি করো। নিশ্চয় তোমার প্রতি শত্রুতা পোষণকারীই নির্বংশ। (সুরা কাওসার: ১-৩)
আরেক আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَ لِكُلِّ اُمَّۃٍ جَعَلۡنَا مَنۡسَكًا لِّیَذۡكُرُوا اسۡمَ اللّٰهِ عَلٰی مَا رَزَقَهُمۡ مِّنۡۢ بَهِیۡمَۃِ الۡاَنۡعَامِ فَاِلٰـهُكُمۡ اِلٰهٌ وَّاحِدٌ فَلَهٗۤ اَسۡلِمُوۡا وَ بَشِّرِ الۡمُخۡبِتِیۡنَ
প্রত্যেক জাতির জন্য আমি কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে, যে সমস্ত জন্তু তিনি রিজিক হিসেবে দিয়েছেন সেগুলোর ওপর। তোমাদের ইলাহ তো এক ইলাহ; অতএব তাঁরই কাছে আত্মসমর্পণ কর; আর অনুগতদেরকে সুসংবাদ দাও। (সুরা হজ: ৩৪)
আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
مَن كان له سَعَة ولمْ يُضَحِّ فلا يَقْرَبَنّ مُصَلّاناযার কোরবানি করার সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কোরবানি করে না সে যেন আমাদের ইদগাহে না আসে। (সুনানে ইবনে মাজা: ৩১২৩)
ওএফএফ/এমএস