জাতীয়

এভারেস্টের যত উচ্চতা আমার মায়ের সাপোর্ট তত বেশি: শাকিল

এভারেস্টের যত উচ্চতা আমার মায়ের সাপোর্ট তত বেশি: শাকিল

এভারেস্ট বিজয়ী ইকরামুল হাসান শাকিল বলেছেন, আমার এই সফলতায় সিংহভাগ অবদান আমার মায়ের। মা পেছন থেকে মানসিকভাবে সমর্থন দিয়েছে। এভারেস্টের যত উচ্চতা আমার মায়ের সাপোর্টও ঠিক ততটা।

Advertisement

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে নেপাল থেকে দেশে ফেরার পরপরই ‘সি টু সামিট’ জয়ের প্রধান পৃষ্ঠপোষক প্রাণের পক্ষ থেকে সন্ধ্যায় রাজধানীর হোটেল রিজেন্সিতে সংবর্ধনা দেওয়ার পূর্বমুহূর্তে তিনি এসব কথা বলেন।

শাকিল বলেন, আমার বাবা আমার চেয়েও উৎসাহী ছিল। জানতে চাইতেন আমি কবে এভারেস্টে যাব। আমার বাবা এখন বেঁচে নেই। আমি ভাগ্যবান আমার মা আমার সফলতা দেখছেন।

আরও পড়ুননিজের এভারেস্ট জয় তরুণ প্রজন্মকে উৎসর্গ করলেন শাকিলদেশে ফিরেছেন এভারেস্টজয়ী শাকিলএভারেস্টজয়ী শাকিলকে বিমানবন্দরে সংবর্ধনা, আবেগঘন পরিবেশ

এভারেস্ট জয় উদযাপন ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন শাকিলের ‘সি টু সামিট’ এর টাইটেল স্পন্সর প্রাণ আরএফএল গ্রুপ।

Advertisement

মায়ের সঙ্গে এভারেস্টজয়ী শাকিল/ছবি-মাহবুব আলম

শাকিল বলেন, আমি যখন চূড়ায় উঠি, আমি নির্বাক ছিলাম। আমি ১০ মিনিটের মতো সেখানে অবস্থান করি। তখন ওয়েদার খুব খারাপ ছিল।

এ সময় তার মা বলেন, আমার ছেলে ছোটবেলা থেকে সংস্কৃতিমনা ও খেলাধুলায় আগ্রহী। সে এভারেস্ট জয় করবে এটা আমার ও ওর বাবার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু ওর বাবা দেখে যেতে পারিনি। ওর জয়ে আমরা গর্বিত।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পদযাত্রা করে এভারেস্ট জয়ের শাকিলের এই অভিযানের নাম ছিল ‘সি টু সামিট’। অভিযানের আয়োজক বাংলা মাউন্টেনিয়ারিং অ্যান্ড ট্রেকিং ক্লাব। টাইটেল স্পন্সর দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রুপ ‘প্রাণ’। সহযোগী স্পন্সর হিসেবে রয়েছে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি), স্ন্যাকস পার্টনার মিস্টার নুডলস, গিয়ার পার্টনার মাকলু-ই-ট্রেডার্স নেপাল ও ওরাল হেলথ সিস্টেমা টুথব্রাশ, নিউজ পার্টনার জাগো নিউজ ও রেডিও পার্টনার জাগো এফএম।

Advertisement

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের ইনানী সমুদ্র সৈকত থেকে শুরু হয় শাকিলের পদযাত্রা। ৯০ দিনের মধ্যে ‘সি টু সামিট’ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে অভিযান শুরু করেন তিনি। যাত্রাপথে বাংলাদেশ, ভারত এবং নেপালের প্রায় এক হাজার ৩৭২ কিলোমিটার দীর্ঘ ও দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে এভারেস্টের ২৯ হাজার ৩১ ফুট উঁচু শিখরে আরোহণ করেন শাকিল।

মায়ের সঙ্গে এভারেস্টজয়ী শাকিল/ছবি-মাহবুব আলম

বাংলাদেশের গাজীপুরের কালিয়াকৈরের স্বপ্নবাজ এ তরুণের আগে ১৯৯০ সালে অস্ট্রেলিয়ার পর্বতারোহী টিম ম্যাকার্টনি-স্নেপ ভারতের গঙ্গাসাগর থেকে ৯৬ দিনে প্রায় ১২শ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৃথিবীর সর্বোচ্চ শৃঙ্গে পদচিহ্ন রাখেন। শাকিল তার চেয়ে সপ্তাহখানেক কম সময়ে পাড়ি দিয়েছেন আরও একশ কিলোমিটার বেশি। ম্যাকার্টনি রেকর্ড গড়েছিলেন ৩৪ বছর বয়সে। শাকিল সেটা করে দেখিয়েছেন ৩১ বছর বয়সে।

এর আগে ২০১৩ সালে শাকিল কলকাতা থেকে হেঁটে ১১ দিনে ঢাকায় পৌঁছান। তখনই যোগ দেন বাংলা মাউন্টেইনিয়ারিং অ্যান্ড ট্র্যাকিং ক্লাবে। পর্বতারোহণের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ নেন ভারত থেকে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশ থেকে প্রথমবারের মতো ২০ হাজার ২৯০ ফুট উচ্চতার কেয়াজো-রি পর্বতশৃঙ্গ জয় করতে যান এম এ মুহিতের নেতৃত্বে সাত পর্বতারোহী। তাদের একজন শাকিল।

শেষ পর্যন্ত মুহিত, শাকিল ও কাজী বাহলুল শৃঙ্গটি জয় করেন। ২০১৭ সালে লারকে পিক জয়ের অভিযানেও ছিলেন তিনি। তবে বৈরী আবহাওয়ার কারণে খুব কাছাকাছি গিয়ে তা জয় করা হয়নি। পরের বছর ভারতের নেহরু ইনস্টিটিউট অব মাউন্টেইনিয়ারিং থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণের সময়েই তিনি জয় করেন ‘দ্রৌপদী-কা-ডান্ডা-২’ শৃঙ্গ। ২০১৯ সালে বাংলাদেশসহ পাঁচ দেশের আট পর্বতারোহী ‘হিমলুং’ জয়ের অভিযানে নামেন। সেই দলে অংশ নিয়ে তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে হিমলুং-এর চূড়ায় পা রাখেন।

আরএএস/এমআরএম/জেআইএম