মুফতি আব্দুল্লাহ আমান
Advertisement
মক্কার উত্তর প্রান্তে, মসজিদুল হারাম থেকে প্রায় কিলোমিটার দুয়েক দূরে অবস্থিত ঐতিহাসিক কবরস্থান জান্নাতুল মুআল্লা। ইসলামের ইতিহাসের বহু বরেণ্য ব্যক্তি শুয়ে আছেন এই কবরস্থানে।
এখানে শুয়ে আছেন রাসুলুল্লাহর (সা.) প্রিয়তমা স্ত্রী খাদিজা (রা.) যিনি ইসলামের প্রথম নারী, প্রথম মুমিনা, নবীজির দুঃখ-সংকটের দিনে যিনি সবসময় ছায়াস্বরূপ ছিলেন। ছিলেন তাঁর সমর্থন, সাহস ও সান্ত্বনা।
এখানে আছেন রাসুলের (সা.) দাদা আব্দুল মুতালিব, ছেলে কাসিম ও আবদুল্লাহ, যারা অল্প বয়সেই ইন্তেকাল করেন।
Advertisement
এ ছাড়াও এ কবরস্থানে অনেক সাহাবি, তাবেঈ, ওলামায়ে কেরাম ও বুজুর্গানে দ্বীন শুয়ে আছেন।
জান্নাতুল মুআল্লায় সমাহিত উল্লেখযোগ্য সাহাবিরা হলেন:
১. যায়েদ বিন আদদাসিনাহ বিন মুয়াবিয়া বিন ওবায়েদ আলবাদায়ী (রা.)। তিনি বদর ও উহুদ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
২. খোয়াইব বিন আদী (রা.)। তিনি বদর যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
Advertisement
৩. আবদুল্লাহ বিন আমর বিন আল-আস বিন ওয়ালেদ (রা.)
৪. আবদুল্লাহ বিন ওমর বিন খাত্তাব (রা.)
৫. আবদুল্লাহ বিন ইয়াসার আল-আনসী (রা.)
৬. ওসমান বিন আমের বিন আবি তালহা (রা.)
৭. শায়বা বিন ওসমান বিন তালহা (রা.)
৮. সাফওয়ান বিন উমাইয়া বিন খালাফ (রা.)
৯. হজরত আমের বিন ওয়াসেলা বিন আবদুল্লাহ বিন আমীর (রা.)
১০. আবদুর রহমান বিন আবদুল্লাহ বিন উসমান (রা.)
১১. আবদুর রহমান বিন ওসমান ওবায়দুল্লাহ আততাইমী (রা.)
১২. আবদুল্লাহ বিন যুবায়ের বিন আওয়াম (রা.)
১৩. আবদুল্লাহ আমের বিন কুরাইজ (রা.)
১৪. ওসমান বিন তালহা বিন আবি তালহা (রা.)
১৫. হজরত আবু সুবরাহ বিন আবি রহম বিন আবদুল ওজ্জা আল-আমেরী (রা.)
নারী সাহাবিদের মধ্যে হজরত খাদিজা (রা.) ছাড়া উল্লেখযোগ্য যারা এখানে সমাহিত আছেন:
১. আসমা বিনতে আবু বকর সিদ্দিক (রা.)
২. খাদিজার (রা.) বোন খাদ্দামা বিনতে খোলাইলাদ বিন আসাদ (রা.)
৩. ওমরের (রা.) স্ত্রী যয়নব বিনতে মাজউন (রা.)
৪. যয়নব আল আসাদীয়া আল-মক্কীয়াহ (রা.)
৫. সুমাইয়া বিনতে খাব্বাত (রা.)
হিজরতের আগে রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজের প্রিয়জনদের কবর জিয়ারত করতে প্রায়ই জান্নাতুল মুআল্লায় যেতেন।
জান্নাতুল মুআল্লা জিয়ারতে গিয়ে যেভাবে সালাম দেবেন ও দোয়া পড়বেন
কবর জিয়ারত করা, কবরস্থানে গিয়ে মৃত মুসলমানদের জন্য দোয়া করা ও মৃত্যুর কথা স্মরণ করা সুন্নত ও সওয়াবের কাজ। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মাঝে মাঝেই সাহাবিদের কবরস্থান জান্নাতুল বাকিতে যেতেন এবং বেশ কিছুক্ষণ সেখানে অবস্থান করতেন, কবরবাসীদের জন্য দোয়া করতেন।
কবরস্থানে গিয়ে অতিরিক্ত আবেগ প্রকাশ ও শরিয়ত-নিষিদ্ধ কাজকর্ম ঠেকাতে একবার রাসুল (সা.) কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলেন। পরবর্তীতে সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়ে তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছিলাম। এখন থেকে তোমরা কবর জিয়ারত কর। কারণ কবর জিয়ারত দুনিয়ার আকর্ষণ কমিয়ে দেয় ও পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। (সুনানে ইবনে মাজা: ১৫৭১)
কবর জিয়ারত করতে গিয়ে আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবরবাসীকে সালাম দিয়ে দোয়া করতেন। সাহাবিদেরও তিনি সালাম দিয়ে দোয়া করতে শিখিয়েছেন। বুরায়দাহ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কবরস্থানে গেলে এ দোয়া পড়তে শিখিয়েছেন,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلَاحِقُونَ نَسْأَلُ اللَّهَ لَنَا وَلَكُمُ الْعَافِيَةَ
উচ্চারণ: আসসালামু আলায়কুম আহলাদ দিয়ারি মিনাল মুমিনীনা ওয়াল মুসলিমীনা ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লালাহিকূনা নাসআলুল্লাহা লানা ওয়ালাকুমুল আফিয়াহ
অর্থ: হে কবরবাসী মুমিন ও মুসলিমগণ! তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক। ইনশাআল্লাহ অবশ্যই আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হচ্ছি। আমরা আমাদের ও তোমাদের জন্য আল্লাহর কাছে শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি। (সহিহ মুসলিম: ৯৭৫)
জান্নাতুল মুআল্লা জিয়ারতে গিয়ে এভাবে সালাম দিয়ে দোয়া পড়ার পর কবরবাসীদের ইসালে সওয়াবের নিয়তে দরুদ শরিফ ও বিভিন্ন সুরা ইত্যাদি পড়তে পারেন। তাদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করতে পারেন। দরুদ শরিফ, সুরা ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, সুরা ইখলাস ও যেসব সূরা সহজ মনে হয়, সেগুলো পড়ে মৃত ব্যক্তির রুহের ওপর সওয়াব পাঠিয়ে দিতে পারেন।
কবর জিয়ারতের জন্য কোনো সময়ের বিধিনিষেধ নেই। যে কোনো দিন যেকোনো সময় কবর জিয়ারত করা যায়।
ওএফএফ/এএসএম