ক্যাম্পাস

ঢাবিতে বামপন্থিদের মশাল মিছিল, শিক্ষার্থীদের ‌‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান

ঢাবিতে বামপন্থিদের মশাল মিছিল, শিক্ষার্থীদের ‌‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান

মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস দেওয়ার প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের মিছিলে ছাত্র শিবিরের হামলার অভিযোগ এনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিল করেছে বাম ছাত্র সংগঠনগুলো। এসময় তাদের মিছিলকে উদ্দেশ্য করে ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দেন একদল শিক্ষার্থী।

Advertisement

বুধবার (২৮ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জড়ো হতে শুরু করেন জোটের নেতাকর্মীরা। টিএসসি থেকে তারা মশাল মিছিল নিয়ে হলপাড়া প্রদক্ষিণ করে ফের টিএসসি এসে মিছিল শেষ করেন।

তবে, তাদের মিছিলটি মুহসীন হলের সামনে গেলে এফ আর হল থেকে ‘ভুয়া, ভুয়া’ স্লোগান দেন একদল শিক্ষার্থী। একাত্তর হলের সামনে গেলে তাদের ওই স্থানেও মিছিল উদ্দেশ্য করে ‘শাহবাগী, শাহবাগী’ স্লোগান দেন বেশকিছু শিক্ষার্থী।

মিছিলে অংশগ্রহণকারীরা ‘জামাত-শিবির রাজাকার, এ মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘গুপ্ত বাহিনীর আস্তানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’, ‘লীগ গেছে যেই পথে, শিবির যাবে সেই পথে’, ‘হাসিনা-আজহার এ বাংলার গাদ্দার’সহ নানা স্লোগান দেন।

Advertisement

সমাবেশে ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি মিতু সরকার জুলাই অভ্যুত্থানের পরের পরিবর্তন রাজনৈতিক দাবি করে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে যে গণহত্যা চলেছে সেই গণহত্যার বিচার ভণ্ডুল করার চেষ্টা চলছে। গত ১৫ বছরের ফ্যাসিবাদী জামানার লিগ্যাসি বহন করছে অন্তর্বর্তী সরকার।

তিনি দাবি করেন, যুদ্ধ অপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়ায় প্রধান বাঁধা এসেছিল ফ্যাসিবাদের জনক শেখ মুজিবের হাত ধরে। ২০১৩ সালে হাসিনা আইনের ফাঁক-ফোকর রেখে অবৈধ রায় ঘোষণা করে। সেই আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ইন্টেরিম সরকার এ টি এম আজহারকে খালাস করে দিলো।

এ টি এম আজহারকে আলবদর কমান্ডার দাবি করে মিতু বলেন, অভ্যুত্থানের হত্যার বিচার হয় না আবার আলবদর কমান্ডার এ টি এম আজহারকে খালাস করা হয়। এ যদি হয় বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার সংস্কৃতি তাহলে আমরা বুঝবো ফ্যাসিবাদী আমলে যেভাবে বিচারহীনতার সংস্কৃতি তৈরি করা হয়েছিল তা বজায় রেখেছে ইন্টেরিম সরকার। রাজশাহী এবং চট্টগ্রামে যে হামলা করা হয়েছে, সেসবের বিচার করতে হবে।

ছাত্র-যুব আন্দোলনের ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক নাইম উদ্দিন বলেন, আজাহারের মুক্তির পর রাজশাহী ও চট্টগ্রামে কমরেডরা মিছিল করলে দফায় দফায় হামলার শিকার হয়। হামলাকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা বিপ্লবী কমিউনিস্টদের ওপর হামলা করেছেন, বিপ্লবী কমিউনিস্টরা কিন্তু আপনাদের ছেড়ে কথা বলবে না। কমিউনিস্টদের রক্ত যেখানে পড়েছে সেই জায়গা আমাদের।

Advertisement

নারীদের নিয়ে জামায়াত শিবিরের অবস্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াত শিবির নারীদের সামগ্রিক মুক্তির দাবি করতে পারে না। বরং ইন্টেরিম সরকার যখন নারীদের মুক্তির জন্য কাজ করে, সেই দাবিতেও তারা ধর্মীয় ফ্যাসিবাদী আক্রমণ চালায়। ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ এবং যত ফ্যাসিবাদী শক্তি আছে তাদের বিরুদ্ধে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের মাধ্যমেই কেবল ধর্মীয় ফ্যাসিবাদ এবং বুর্জোয়া শক্তি ধ্বংস হতে পারে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহমেদ বলেন, জামায়াত আজ শোকরানা মাহফিল করেছে, তাদের বিজয় উল্লাস দেখানোর চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগ আমলেও অনেকে পিকআপ ভরে বিজয় উল্লাস করেছিল, কিন্তু জনগণের রক্তের ওপরে দাঁড়িয়ে টিকতে পারেনি।

এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামকে বেকসুর খালাস করে রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা, হত্যা, অপহরণ, নির্যাতনের ছয় ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে ২০১৪ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধে আজহারুল ইসলামকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। আজ তার মুক্তিতে শোকরানা মাহফিল করেছে জামায়াত ইসলামী।

এর আগের দিন মঙ্গলবার রাতে একই দাবিতে মশাল মিছিল বের করে গণতান্ত্রিক ছাত্রজোট। টানা দুই দিন এমন উত্তেজনা বিরাজ করায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

এফএআর/এমএএইচ/