ধর্ম

তামাত্তু হজ পালনকারী যেভাবে ওমরাহ করবেন

তামাত্তু হজ পালনকারী যেভাবে ওমরাহ করবেন
তামাত্তু হজের পরিচয়

হজ তিন প্রকার; ইফরাদ, কিরান ও তামাত্তু

Advertisement

ইফরাদ হজ: হজের মাসগুলোতে (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ) শুধুমাত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে ইহরাম বেঁধে হজ সম্পাদন করাকে ইফরাদ হজ বলা হয়।

কিরান হজ: হজের মাসগুলোতে (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ) হজ ও ওমরাহ পালনের নিয়তে দীর্ঘ দিনের জন্য ইহরাম বেঁধে একই ইহরামে ওমরাহ ও হজ সম্পাদন করাকে কিরান হজ বলে।

তামাত্তু হজ: হজের মাসগুলোতে (শাওয়াল, জিলকদ ও জিলহজ) ওমরাহ পালনের নিয়তে ইহরাম বেঁধে ওমরাহ পালন করে ইহরাম থেকে হালাল হয়ে যাওয়া অতঃপর হজের আগে হজের নিয়তে ইহরাম বেধে হজ সম্পাদন করাকে তামাত্তু হজ বলে।

Advertisement

তিন প্রকার হজের মধ্যে কিরান হজ বেশি ফজিলতপূর্ণ। তবে তামাত্তু হজ পালন সুবিধাজনক ও অপেক্ষাকৃত কম কষ্টসাধ্য হওয়ায় অধিকাংশ হাজি তামাত্তু হজ পালন করে থাকেন। কিরান হজে ইহরাম দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে ইহরামের নিষেধাজ্ঞাগুলো সঠিকভাবে মেনে চলতে না পারার আশঙ্কা থাকলে তামাত্তু হজ-ই উত্তম। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/ ৫২৯)

তামাত্তু হজ পালনকারী যেভাবে ওমরাহ করবেন

ধাপ-১ ওমরাহর ইহরাম (ফরজ)যারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সরাসরি মক্কায় যাওয়ার ইচ্ছা করেছেন, তারা নিজেদের ঘর থেকেই ইহরাম বেধে রওয়ানা হতে পারবেন। অথবা নিজ নিজ দেশের হজ ক্যাম্প থেকে অথবা মিকাত অতিক্রম করার আগেই ইহরাম বাঁধবেন।

ইহরাম বাঁধার জন্য ওজু বা গোসল করবেন অতঃপর মিকাত পার হওয়ার আগেই পুরুষ হজ ওমরাহ পালনকারীরা দুটি সেলাইবিহীন কাপড় পরিধান করবেন, নারীরা তাদের ইহরামের পোশাক পরিধান করবেন এবং দু রাকাত নামাজ আদায় করে ওমরাহর নিয়ত করবেন।

অন্তরে কোনো কাজের ইচ্ছা পোষণ করে নেওয়াকে নিয়ত বলে। মুখে নিয়তের শব্দ উচ্চারণ করা জরুরি নয়, অন্তরে ইচ্ছা পোষণ করলেই নিয়ত হয়ে যাবে। তবে হজের নিয়তের শব্দ মুখেও উচ্চারণ করা উত্তম।

Advertisement

তামাত্তু হজ পালনকারী প্রথম ইহরামের সময় শুধু উমরাহর নিয়ত করবেন এভাবে, হে আল্লাহ আমি ওমরাহর নিয়ত করছি, আমাকে যথাযথভাবে ওমরাহ পালন করার তওফিক দিন!

তারপর তালবিয়া পাঠ করুন,

لَبَّيْكَ اَللَّهُمَّ لَبَّيْكَ لَبَّيْكَ لا شَرِيْكَ لَكَ لَبَّيْكَ إِنَّ الْحَمْدَ وَالنِّعْمَةَ لَكَ وَالْمُلْكَ لا شَرِيْكَ لَكَ

উচ্চারণ: লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক ইন্নাল-হামদা ওয়ান-নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক লা শারিকা লাক।

অর্থ: আমি উপস্থিত, হে আল্লাহ! আমি আপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি। আমি আাপনার ডাকে সাড়া দিয়েছি, আপনার কোনো শরীক নেই, আমি উপস্থিত। নিশ্চয়ই সমস্ত প্রশংসা, নেয়ামত আপনার এবংএবং একচ্ছত্র আধিপত্য আপনারই। আপনার কোনো শরিক নেই।

ধাপ-২ ওমরাহর তাওয়াফ (ওয়াজিব)কাবা শরিফকে ৭ বার প্রদক্ষিণ করার মাধ্যমে তাওয়াফ সম্পন্ন করুন। হাজরে আসওয়াদ থেকে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে দুহাত কাঁধ পর্যন্ত উঠিয়ে তাওয়াফ শুরু করবেন।

সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা অথবা হাতে স্পর্শ করুন। সম্ভব না হলে দুহাত কাঁধ পর্যন্ত ওঠিয়ে তাওয়াফ শুরু করবেন। সম্ভব হলে রুকনে ইয়ামেনি অতিক্রম করার সময় তা স্পর্শ করবেন। সম্ভব না হলে ইশারা করাই যথেষ্ট।

ইজতিবা করাবাইতুল্লাহ তাওয়াফকালে অবশ্যই ইজতিবা করবেন। ইজতিবা হলো ইহরামের চাদরকে ডান বগলের নিচে রেখে চাদরের দুই মাথাকে বাম কাঁধের সামনে ও পিছনে ফেলে রাখা।

রমল করাপ্রথম তিন চক্কর রমল তথা বীরের মতো বুক ফুলিয়ে কাঁধ দুলিয়ে ঘন ঘন কদমে দ্রুতগতিতে প্রদক্ষিণ করবেন। পরবর্তী চার চক্কর সাধারণভাবে হেটে তাওয়াফ সম্পন্ন করবেন।

রুকনে ইয়ামেনি থেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত তাওয়াফকালে এ দোয়া পড়বেন:

رَبَّنَاۤ اٰتِنَا فِی الدُّنۡیَا حَسَنَۃً وَّ فِی الۡاٰخِرَۃِ حَسَنَۃً وَّ قِنَا عَذَابَ النَّارِ

উচ্চারণ: ‍রাব্বানা আতিনা ফিদ-দুনিয়া হাসানাহ ওয়া ফিল-আখিরাতি হাসানাহ ওয়া কিনা আযাবান-নার

অর্থ: হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়াতে কল্যাণ দিন, আখেরাতেও কল্যাণ দিন এবং আগুনের আযাব থেকে রক্ষা করুন। (সুরা বাকারা: ২০১)

তারপর হাজরে আসওয়াদে আসবেন। এভাবে সাতবার চক্কর বা প্রদক্ষিণ ও আট ইস্তিলামে তাওয়াফ শেষ করবেন।

ধাপ-৩ মাকামে ইবরাহিমে নামাজ (ওয়াজিব)তাওয়াফ শেষ হলে ভিড় না থাকলে মাকামে ইবরাহিম নিকটবর্তী প্রান্তে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে দোয়া করবেন। ভিড় থাকলে সরে গিয়ে নামাজ আদায় করতে পারেন। এটা দোয়া কবুলের স্থান। তারপর দাঁড়িয়ে জমজমের পানি পান করুন।

ধাপ-৪ ওমরাহর সাঈ (ওয়াজিব)সাফা পাহাড়ের ওপরে আরোহন করে সেখান থেকে কিবলামুখী হয়ে সাঈর নিয়ত করে সাঈ শুরু করুন। সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী নির্ধারিত চিহ্নিত স্থান দ্রুতবেগে অতিক্রম করুন। মারাওয়া পাহাড়ে আরোহনপূর্বক দোয়া করুন। তারপর আবার সাফায় আসুন। এভাবে সাতটি চক্কর দিলে একটি সাঈ পূর্ণ হয়।

ধাপ-৫ মাথা মুণ্ডানো (ওয়াজিব)পুরুষ হলে নবিজির (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম) আদর্শ অনুসারে সম্পূর্ণ মাথা মুণ্ডণ করুন বা চুল ছাঁটুন আর নারী হলে এক ইঞ্চি পরিমাণ চুল কাটুন। চুল কাটার মাধ্যমে আপনি ওমরাহর ইহরাম থেকে বের হয়ে যাবেন।

ওমরাহ পালন শেষে ইহরাম থেকে বের হওয়ার পর আপনি স্বাভাবিক হালাল সব কাজই করতে পারবেন। হজের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে ৭ জিলহজ থেকে আবার হজের জন্য ইহরাম বাঁধবেন।

ওএফএফ/এএসএম