শুরুটা শখের বশে। তা-ও একটি মাত্র দেশি মুরগির বাচ্চা দিয়ে। একপর্যায়ে সেই মুরগি থেকে কিছু মুরগি হলে ছোট্ট পরিসরে গড়ে তোলেন খামার। তবে তার সাফল্য ধরা দেয় ইউটিউবে এক নারী উদ্যোক্তার দেশীয় প্রজাতির মুরগি পালনের ভিডিও দেখে। প্রবল ইচ্ছাশক্তি আর পরিশ্রম করে আস্তে আস্তে গড়ে তোলেন বিশাল দেশি মুরগির খামার। এ খামার থেকে পুতুলের মাসে আয় অন্তত লাখ টাকা। মুরগি বিক্রির টাকা দিয়ে গড়েছেন শখের বাড়ি। তার এ সাফল্যের অংশীদার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ি। সব সময় তাকে সহযোগিতা করে চলেছেন তারা।
Advertisement
জানা যায়, শরীয়তপুর সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের বালিয়াকান্দির মালয়েশিয়া প্রবাসী মনির হোসেন চৌধুরীর স্ত্রী পুতুল আক্তার। চার বছর আগে তিনি মায়ের বাড়ি থেকে শখের বশে একটি দেশি মুরগির বাচ্চা কিনে আনেন। পরে মুরগিটি বড় হয়ে ডিম দেওয়া শুরু করলে সেই ডিম থেকে বাচ্চা ফোঁটান তিনি। মুরগির বাচ্চাগুলো শেয়ালে নিয়ে যাওয়া শুরু করলে শ্বশুর মোড়ল চৌধুরী একটি ছোট্ট ঘর তুলে দেন মুরগি লালন-পালনের জন্য।
একদিন ইউটিউবে একটি ভিডিও সামনে আসে। যেখানে এক অনার্সপড়ুয়া দেশীয় প্রজাতির মুরগি পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। বিষয়টি ভাবিয়ে তোলে পুতুলকে। মনে মনে সংকল্প করেন, তিনিও গড়ে তুলবেন দেশীয় প্রজাতির মুরগির খামার। তার ইচ্ছাশক্তি আর অদম্য সাহস দেখে অনুপ্রেরণা জোগান স্বামী মনির হোসেন চৌধুরী। স্ত্রীর ইচ্ছাপূরণে করে দেন একটি বড় খামার।
এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মাঝখানে কিছু মুরগির বাচ্চা মারা গেলেও পরে এক ব্যক্তির কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে পুরো উদ্যমে পালন করতে থাকেন দেশীয় প্রজাতির মুরগি। বর্তমানে তার খামারে আছে অন্তত ১ হাজার মুরগি। এ খামার থেকে তিনি মুরগির বাচ্চা, ডিম আর বড় মুরগি বিক্রি করে মাসে আয় করেন অন্তত লাখ টাকা। যা দিয়ে তিনি স্বামীকে দৃষ্টিনন্দন বাড়ি নির্মাণেও সহযোগিতা করছেন।
Advertisement
পুতুল আক্তার জানান, তার খামারে আছে ৩৫০টি প্যারেন্টস মুরগি। প্রতি ৯টি মুরগির জন্য আছে একটি করে মোরগ। প্রতিদিন তার খামার থেকে গড়ে সংগ্রহ করেন ১৬০টি ডিম। এ ডিম থেকে প্রতি সপ্তাহে ৪০০ ডিম বসানো হয় বাচ্চা ফোঁটানোর জন্য। বাকি ডিম বিক্রি হয় খাওয়া ও বীজ ডিম হিসেবে। খামারের ডিমগুলো থেকে বাচ্চা ফোঁটানোর জন্য আছে দুটি অত্যাধুনিক স্বয়ংক্রিয় মেশিন। এ মেশিনের মাধ্যমে প্রতি সপ্তাহে তিনি ৩৫০টি বাচ্চা মুরগি ফুঁটিয়ে নিজ জেলাসহ আশপাশের জেলায় বিক্রি করেন। তার খামারের একদিনের বাচ্চা ৬০ টাকা ও ২১ দিনের বাচ্চা ১০০ টাকা বিক্রি করেন। ডিম বিক্রি করেন ৮০ টাকা হালি।
আরও পড়ুন বিদেশি ইঁদুর পালনে সফল উদ্যোক্তা লাবনী মিরসরাইয়ে মাশরুম চাষে স্বাবলম্বী আবুল কাশেমতার দেখাদেখি অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করেন দেশি মুরগি পালনে। অনেকে আবার শুরু করেছেন ছোট্ট পরিসরে। এমন পরিশ্রম করে স্বাবলম্বী হওয়ায় খুশি পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরাও। পুতুল আক্তার বলেন, ‘আমি সব সময় চাইতাম স্বাবলম্বী হতে। ছোট থেকে শুরু করে একটি বড় খামারের মালিক হয়েছি। শুরু থেকেই স্বামী আমার পাশে থেকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই আমার খামার দেখাশোনা করেন। আমি মনে করি, প্রত্যেক নারী চাইলে নিজে স্বাবলম্বী হতে পারেন।’
পুতুল আক্তারের শ্বশুর মোড়ল চৌধুরী বলেন, ‘আমার ছেলের বউ যখন খামার দিতে চেয়েছে, আমরা না করিনি। আস্তে আস্তে খামার বড় করে এখন নিজে নিজেই স্বাবলম্বী হয়েছে। আমরাও সব সময় খামারের দেখাশোনা করি। আমরা চাই খামারটি আরও বড় করতে।’
প্রতিবেশী তাসলিমা আক্তার বলেন, ‘পুতুল আপার দেখাদেখি আমিও একটি দেশি মুরগির খামার করেছি। আমার খামারেও অনেক মুরগি আছে। আমি চাই খামারটি বড় করতে। যদি প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে কিছু প্রণোদনা দেওয়া হয়, তাহলে আমার জন্য আরও ভালো হয়।’
Advertisement
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আবু বকর সিদ্দিক বলেন, ‘একটি মুরগি দিয়ে শুরু করে এখন বড় একটি খামারের মালিক পুতুল আক্তার। তিনি ডিম, বাচ্চা এবং বড় মুরগি বিক্রি করে মাসে লাখ টাকা আয় করেন। সেই টাকা দিয়ে একটি ঘরও তৈরি করেছেন। আমরা সব সময় পুতুল আক্তারের পাশে আছি। পুতুল আক্তারের মতো যারা খামার দিতে চান; তাদেরও প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দেবে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।’
বিধান মজুমদার/এসইউ/জিকেএস