এস এম মুকুল
Advertisement
আমরা সবাই জানি, হাঁটা একটি ভালো ব্যায়াম। তবে হাঁটাহাঁটিতে সৃষ্টিশীল চিন্তাভাবনার উন্নতি ঘটে এটি নতুন খবর। জানেন কি? যারা শুয়ে-বসে দিন কাটান তাদের তুলনায় যারা সুযোগ পেলেই হাঁটাহাঁটিতে অভ্যস্ত তাদের সৃষ্টিশীলতা গড়পড়তা ৬০ শতাংশ বেশি। চলুন জেনে নেই ওজন নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শরীরচর্চা আর কী উপকার করে-
১. সৃজনশীলতার জন্য হাঁটাআপনি যদি মননশীল মানুষ হোন তাহলে এটি আপনার জন্য সুখবর। কারণ আপনার সৃষ্টিশীলতাকে উসকে দেবে হাঁটাহাঁটির অভ্যাস। ক্যালিফোর্নিয়ার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা বেশ কয়েকটি সমীক্ষায় এ ব্যাপারে প্রমাণ পেয়েছেন। সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা শুয়ে-বসে দিন কাটান তাদের তুলনায় যারা সুযোগ পেলেই হাঁটাহাঁটিতে অভ্যস্ত, তাদের সৃষ্টিশীলতা গড়পড়তা ৬০ শতাংশ বেশি।
অনেক প্রতিভাবান-সৃষ্টিশীল মানুষের দাবি, হাঁটাহাঁটির সময়ে তারা শ্রেষ্ঠ আইডিয়াটি পেয়ে যান। অ্যাপেলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবস হেঁটেহেঁটেই তার সভার কাজগুলো করতেন। একই ধরনের অভ্যাস ফেসবুকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গের।
Advertisement
‘জার্নাল অব এক্সপেরিমেন্টাল সাইকোলজি: লার্নিং, মেমোরি অ্যান্ড কগনিশন’ সাময়িকীতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ডক্টর মেরিলি ওপেজো ও ড্যানিয়েল শোয়ার্জ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। তারা জানান, হাঁটাহাঁটিতে ঘরে-বাইরে দু’জায়গাতেই আপনি একই ধরনের ফল পাবেন। এমনকি হাঁটাহাঁটির পর আপনি কিছুক্ষণ বসে থাকলেও কিন্তু সৃষ্টিশীলতার ক্ষতি হবে না। কাজেই সুযোগ পেলেই হাঁটুন। শরীর-মন ভালো থাকবে, সৃষ্টিশীলতারও বিকাশ ঘটবে।
২. সাইক্লিংয়ে বাড়বে সহনশীলতাসাইকেল চালানোর ব্যাপারে বিশেষজ্ঞরা কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। যেমন- সাইকেল চালানোর সময় প্রথমে সমতল রাস্তা ব্যবহার করুন। দূরত্ব বাড়িয়ে চালাতে পারেন। এর ফলে শুধু ওজনই কমবে না, এটি আপনার সহনশীলতাও বাড়াবে। শরীরের চর্বি ও ওজন কমানোর জন্য নিয়মিত সাইকেল চালানো খুব ভালো অভ্যাস। পাশাপাশি এটি পায়ের পেশিকে শক্তিশালী করবে এবং শরীরের রক্ত সঞ্চালন বাড়াবে।
সাইকেল চালানো একটি কার্যকর ব্যায়াম- এতে কোনো সন্দেহ নেই। প্রযুক্তি নতুন সব উৎকর্ষতার পরও বিশ্বে বিভিন্ন দেশে এখনো সাইকেল চালনাকে স্বাস্থ্যকর, নিরাপদ, সময় সাশ্রয়ী এবং যানজট নিরসনের উপায় হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। সাইকেল চালানোর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কর্মক্ষেত্রে সাইকেল চালিয়ে যাওয়া আসা করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা কম।
অপরদিকে যারা গাড়িতে যাওয়া আসা করেন তাদের মোটা হওয়ার সম্ভাবনা ৬১ শতাংশ। গবেষণা প্রতিবেদনের বিভিন্ন বিশ্লেষণ থেকে দেখা গেছে, ২০ কিলোমিটার গতিতে সাইকেল চালালে প্রতি ঘণ্টায় ৫০০ থেকে ৫৫০ ক্যালরি শক্তি খরচ হয়। এভাবে এক সপ্তাহে নূন্যতম ৩৫ কিলোমিটার পথ সাইকেলে অতিক্রম করলে হৃদরোগের আশঙ্কা কমে যায় ৫০ শতাংশেরও বেশি। এছাড়াও সাইকেল চালানো আরো সুফল আছে। যেমন- সাইকেল চালালে শরীর প্রচুর ঘামে। এই ঘামের সাথে শরীরের বর্জ্য বের হয়ে ত্বক পরিষ্কার হয়, শরীর ও মন ফুরফুরে থাকে। নিয়মিত সাইকেল চালালে শরীরের বাড়তি ওজন কমে আসে। শরীর সুঠাম থাকে। তাছাড়াও সাইকেল চালানোর কারণে মুক্ত বাতাসে মনে প্রশান্তি আসে। মানসিক দুশ্চিন্তা কমে।
Advertisement
স্টামফোর্ড স্কুল অব মেডিসিন থেকে একটি সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, যারা জগিং করেন তারা দীর্ঘদিন বাঁচেন। গবেষকরা কয়েকটি 'রানিং ক্লাব'-এর ৫৩৮ জন সদস্য এবং ৪২৩ জন স্বাস্থ্যবান ব্যক্তির তথ্য সংগ্রহ করেন, যারা জগিং করেন না। এদের সবার বয়স ছিল ৫০ বা তার বেশি। পর্যবেক্ষণ শুরুর ২১ বছর পর দেখা যায় যারা জগিং করেন না তাদের মধ্যে ৩৪ শতাংশ মারা গেছেন এবং জগিংকারীদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশের। এ ছাড়া জগিংকারীদের মধ্যে হৃদরোগ ও স্নায়ুজ রোগ, সংক্রমণ ও ক্যান্সারজনিত মৃত্যু কম ঘটেছে।
৪. বাড়তি পরিশ্রমে বাড়াবে আয়ুমানুষ প্রতিদিন তার প্রয়োজনের তাগিদে স্বাভাবিক যে কাজগুলো করে, ইচ্ছাকৃতভাবে তারচেয়ে মাত্র ৩০ মিনিট বাড়তি পরিশ্রম করলে তার আয়ু কমপক্ষে পাঁচ বছর বেড়ে যাবে। মানুষ যেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রেসক্রিপশন করা এই ‘৩০ মিনিটের পরিশ্রম’ এর সময় বের করতে হিমশিম না খায় সেজন্য সহজ সাজেশনও দিয়ে রেখেছেন তারা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ঘড়ি ধরে দুই নির্দিষ্ট গন্তব্যের মাঝে জোর কদমে এই সময়টুকু হাঁটলেই উদ্দেশ্য হাসিল হবে। এজন্য কোনো ব্যায়ামাগার বা জিমে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।
তবে হাঁটা বা রুটিনমাফিক শরীরচর্চা সম্ভব না হলে বাড়ির টুকটাক কাজগুলোর মাধ্যমেও শরীরচ্েচা করতে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শরীরবিজ্ঞানীদের গবেষণায় আরো বলা হয়েছে, স্বাভাবিক কাজকর্মের বাইরে কিছু বাড়তি পরিশ্রম করলে বা হাঁটলে কিছু নির্দিষ্ট উপকার পাবেন। যেমন-
১. হাই ব্লাডপ্রেসার, ডায়াবেটিস, স্ট্রোকসহ বেশ কিছু রোগ থেকে বাঁচা যাবে।
২. শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যাবে।
৩. শরীরে সুপ্ত অবস্থায় থাকা রোগ-জীবাণুরা বিকশিত হওয়ার সুযোগ পাবে না।
৪. হাঁটার কারণে অনেক ছোটোখাটো অসুখ ওষুধ ছাড়াই শরীর থেকে বিদায় নিবে।
এই গবেষণা প্রতিবেদনে, প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন ৩০ মিনিট এবং শিশুদের জন্য ৬০ মিনিট পরিশ্রমের সুপারিশ করা হয়েছে। তাই নিয়মিত শরীরচর্চা করুন, শরীর ও মন সুস্থ রাখুন।
সূত্র: হেলথ সায়েন্স, ডেইলি মেইল, দি ওয়ার্ল্ড সায়েন্স
এএমপি/জেআইএম