জাতীয়

‘শহর ও গ্রামে নিরাপদ পানি খাতে বরাদ্দ ব্যবহারে সক্ষমতা কমছে’

‘শহর ও গ্রামে নিরাপদ পানি খাতে বরাদ্দ ব্যবহারে সক্ষমতা কমছে’

শহর ও গ্রামে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে উন্নয়ন বাজেটে (এডিপি) বরাদ্দ যাই থাকুক না কেন, তা ব্যবহারে সক্ষমতা কমছে। এমন মন্তব্য করেছেন পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।

Advertisement

সোমবার (১৯ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘জাতীয় বাজেটে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিন (ওয়াশ) খাতে এডিপি বরাদ্দ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে পিপিআরসি, ওয়াটারএইড, এমএইচএম প্ল্যাটফর্ম, ফানসা, এফএসএম নেটওয়ার্ক, স্যানিটেশন অ্যান্ড ওয়াটার ফর অলসহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা এবং নেটওয়ার্ক অফ ওয়াশ নেটওয়ার্কস।

হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা দেখছি গত অর্থবছরে দেশের সব সিটি করপোরেশনে হাইজিন খাতে সমান বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন যে হারে বরাদ্দ পেয়েছে, তা অন্য সিটি করপোরেশনগুলো পায়নি। সংশোধিত বাজেটেও এ দুই সিটি করপোরেশনের বাজেট বাড়ানো হয়েছিল। তবে কথা হলো, বেশি অর্থ বরাদ্দ পেয়েও হাইজিন খাতে কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তাদের অগ্রগতি নেই। বরাদ্দ করা অর্থ ব্যবহারের সক্ষমতা কমছে মিউনিসিপ্যাল শহরগুলোতেও। এবার এডিপি বাস্তবায়নের সময় সক্ষমতার প্রশ্নটি ঘুরেফিরে আসবে।

Advertisement

ওয়াশ খাতের বরাদ্দ ও বরাদ্দ করা অর্থ ব্যবহারের পরিসংখ্যান তুলে ধরে তিনি বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে ওযাশ খাতে বরাদ্দে যে ঊর্ধ্বগতি দেখা গিয়েছিল, তা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাহত হয় এবং ২২ দশমিক ৪৬ শতাংশ হ্রাস পায়। এই নেতিবাচক প্রবণতা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসজিডি) এবং জাতীয লক্ষ্যমাত্রা (এনপিটিএস) অর্জনের ক্ষেত্রে হুমকিস্বরূপ।

তিনি জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ওয়াশ খাতে বরাদ্দ ছিল ১৮২ দশমিক ২৮ বিলিয়ন টাকা, যা ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ২৩ শতাংশ হ্রাস পেয়ে ১৩৯ দশমিক ৭২ বিলিয়ন টাকায় দাঁড়ায়। যদিও সংশোধিত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বরাদ্দ কিছুটা বেড়ে ৭ দশমিক ২২ শতাংশ বৃদ্ধিসহ ১৪৯ দশমিক ৮১ বিলিয়ন টাকা হয়। এরপর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তা ২২ দশমিক ৪৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এই ধারাবাহিক নিম্নগামী প্রবণতা এদেশের নাগরিকদের নিরাপদ পানি এবং নিরাপদ স্যানিটেশন সেবার অধিকার নিশ্চিতকরণে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ওয়াশ খাতে বিনিয়োগে শহর ও গ্রামের মধ্যে যে ব্যবধান ছিল তা এখনো প্রকট, যা সমতার নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে গুরুতর প্রশ্ন তোলে। এডিপি বাজেটে ওযাশ খাতের বরাদ্দে শহর ও গ্রামাঞ্চলের মধ্যে বৈষম্য এখনো অব্যাহত রয়েছে।

ওয়াটার এইড বাংলাদেশের পলিসি অ্যান্ড অ্যাডভোকেসি লিড ফাইয়াজউদ্দিন আহমদ বলেন, বাজেটে পাহাড়ি, উপকূলীয় ও হাওর অঞ্চলের জন্য বরাদ্দে কোনো ধারাবাহিকতা নেই। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে উপকূলীয অঞ্চলের বরাদ্দ কিছুটা বাড়ে নতুন প্রকল্পের কারণে। তবে এসব এলাকার মধ্যে ন্যায্যতা এখনো নিশ্চিত হয়নি। এই ধারা সরকার ঘোষিত সব নাগরিকের জন্য নিরাপদ পানি ও নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাশনের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

Advertisement

ক্লাইমেট জাস্টিস অ্যালায়েন্সের সুমাইয়া বিনতে আনোয়ার বলেন, ২৫টি মন্ত্রণালয়, জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ড (সিসিটিএফ) এবং এডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে ওয়াশ সংশ্লিষ্ট প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও মাত্র ১৩টা মন্ত্রণালয ওয়াশ খাতে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দিয়ে আসছে।

পিপিআরসির মোহাম্মদ আবদুল ওযাজেদ বলেন, চর, হাওর, পাহাড়ি অঞ্চলসহ জলবায়ুগত ঝুঁকির আওতাধীন সুবিধাবঞ্চিত এলাকা এবং নগরগুলোর মধ্যকার বরাদ্দ বৈষম্য নিরসন করা প্রয়োজন।

এনএস/এএমএ/এএসএম